
দ্য ওয়াল ব্যুরো: আল্পসের ঢালে ঢালে গোলাপি বরফ। কোথাও শক্ত হয়ে জমে, কোথাও গলে গলে পড়ছে। গোলাপি আভায় ঢেকেছে হিমবাহ। সাদা বরফের স্তরে এমন গোলাপি রঙ কীভাবে হল সেই নিয়ে বিজ্ঞানীমহলে তুমুল হইচই চলছে। জলবায়ু বদলের অশনি সঙ্কেত নয় তো? চিন্তার ভাঁজ পড়েছে পরিবেশবিদদের কপালে।
৩,০১৬ মিটার উচ্চতায় প্রেসেনা হিমবাহে দেখা গেছে এমন সাদা-গোলাপি বরফ। প্রেসেনা হিমমাহ পর্যটকদেরও আকর্ষণের জায়গা। চাপ চাপ সাদা বরফের উপরে গোলাপি স্তর জমে আছে। দেখে মনে হচ্ছে কেউ বরফের শরীরে গোলাপি রঙ ঢেলে দিয়েছে।
ইতালির ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিলের গবেষক বিয়াজিও দি মৌরো বলেছেন, এই গোলাপি বরফের কারণ হল বিশেষ একরকমের শৈবাল। বরফের উপর ঘন হয়ে জমে আছে। তার উপর সূর্যের রশ্মি প্রতিফলিত হয়ে এমন গোলাপি রঙ দেখা গেছে। বিয়াজিও বলেছেন, গরমের সময় এবং বসন্তকালে এমন শৈবাল জন্মাতে দেখা যায়। মেরু এলাকায় এই শৈবালের দেখা মেলে।
New paper out: #glacier #algae darken ice and foster #ice–#albedo #feedback. First direct evidence in the European #Alps (Morteratsch glacier)https://t.co/tb5nK9tkOH
— Biagio Di Mauro (@DiMauro_b) March 16, 2020
বিশেষজ্ঞরা বলছেন এই শৈবালের নাম অ্যানসাইলোনেমা নর্ডেনস্কিওয়েলদি (Ancylonema nordenskioeldii) । গ্রিনল্যান্ডে এমন শৈবালের দেখা মেলে। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হল, ইতালির এই গ্লেসিয়ার রেঞ্জে এমন শৈবাল জন্মানোর কথা নয়। কীভাবে প্রেসেনা গ্লেসিয়ারে এই শৈবাল এল ভেবেই পাচ্ছেন না বিজ্ঞানীরা। গবেষকরা বলছেন, প্যাসো গ্যাভিয়ার ৮ হাজার ৫৯০ ফুট উচ্চতায় (২,৬১৮ মিটার)এই গোলাপি বরফ গলতে শুরু করেছে। বরফের উপর এমনভাবে শৈবালের স্তর জমেছে যে বরফ যেন বাঁধভাঙা বন্যার জলের মতো গলে গলে পড়ছে।
গবেষক বিয়াজিও বলছেন, “মানুষের তৈরি দূষণের কারণেই উষ্ণতা বাড়ছে। উত্তপ্ত হচ্ছে পৃথিবী। হিমবাহ গলছে, জলস্তরের উচ্চতা বাড়ছে। ইতালির এই ঘটনাও প্রকৃতির উপর মানুষের অত্যাচারেরই ফল। ভারসাম্য বদলে যাচ্ছে বাস্তুতন্ত্রের। এইভাবে হিমবাহের গলে যাওয়া মোটেই ভাল কথা নয়। এর প্রভাব পড়বে প্রকৃতিতে, পরিবেশে।”
বিজ্ঞানী মার্তা দুরান্তের কথায়, পৃথিবীর উত্তাপ বাড়ছে। জলবায়ু বদলের ভয়ঙ্কর প্রভাব শুরু হয়ে গেছে।
আন্টার্কটিকা ঢেকেছিল রক্ত-বরফে
গত মার্চেই আন্টার্কটিকায় রক্ত-বরফ নিয়ে হইচই হয়েছিল। বিজ্ঞানীরা বলেছিলেন, ক্ল্যামাইডোমোনাস নিভালিস (Chlamydomonas nivalis)নামে একধরনের শৈবালের কারণেই বরফের রঙে বদল হয়েছিল। ক্যারোটিনয়েড রঞ্জকের জন্য এদের রঙ এমন টকটকে লাল হয়। এই রঞ্জকের কমবেশিতে গোলাপি, কমলা শৈবালও দেখা যায়। বরফের ভেতর ২০ সেন্টিমিটার গভীরতা পর্যন্ত এদের বিস্তার হয়। সূর্যের অতিবেগুলি রশ্মি শোষণ করতে পারে এরা। বিজ্ঞানীরা বলছেন, যেখানে এই শৈবাল জন্মায় সেখানকার বরফ গলতে থাকে। গলিত বরফ জলের সঙ্গে রঞ্জক ক্যারোটিনয়েড মিশে গিয়ে লাল রঙ ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। বিজ্ঞানীরা বলেছিলেন, জলবায়ু বদলের সঙ্গে এদের একেবারেই সম্পর্ক নেই সেটা বলা চলে না। বরং উষ্ণায়ণের প্রভাব পড়েছে এদের উপরেও। যে বরফের উপর এই শ্যাওলা জন্মাচ্ছে সেখানকার বরফ দ্রুত গলে যাচ্ছে। যেটা মোটেও ভাল দিক নয়।
বিশ্ব উষ্ণায়ণের খাঁড়া ক্রমশই নেমে আসছে আন্টার্কটিকার উপর। একদিকে হুহু করে বাড়ছে তাপমাত্রা, অন্যদিকে গলছে হিমবাহ। বিজ্ঞানীরা বলছেন, আন্টার্কটিকার বিশাল পুরু বরফের চাঙড়গুলো ভেঙে পড়ার উপক্রম দেখা দিয়েছে। এমন হলে আর ১০০ বছরের মধ্যে সমুদ্রের জলস্তর উঠে আসবে অন্তত ১০ ফুটের মতো। তলিয়ে যাবে বড় বড় শহর।