
দ্য ওয়াল ব্যুরো: করোনা মহামারী নিঙড়ে নিয়েছে বিশ্বকে। সংক্রমণ, মৃত্যুর আতঙ্কে ভুগছে বিশ্ববাসী। চিকিৎসাবিজ্ঞান এখন অনেকটাই উন্নত। তাই ভাইরাসকে কাবু করার একাধিক ভ্যাকসিন ইতিমধ্যেই চলে এসেছে। কিন্তু একটা সময় ভাইরাস নিয়ে স্বচ্ছ ধারণাও ছিল না মানুষের। তার ওপর ছিল কুসংস্কারের বেড়াজাল। মহামারী লাগলে গ্রামের পর গ্রাম, শহর উজাড় হয়ে যেত। তেমনই এক সংক্রামক ব্যধি ছিল বসন্ত রোগ। বসন্তে ভোগা রোগীকে স্পর্শ করতেও ভয় পেতেন মানুষজন। ছোঁয়াচে এই রোগ হানা দিলে শ্মশানের স্তব্ধতা নেমে আসত গ্রামে গ্রামে। সেই সময় যখন চিকিৎসাশাস্ত্র এতটাও উন্নতির শিখরে পৌঁছয়নি তখন জলবসন্তের টিকা তৈরি করে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন এক বিজ্ঞানী। প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন হাজার হাজার মানুষের।
মহান সেই বিজ্ঞানীর আবিষ্কারকে সম্মান জানিয়েছে গুগল। আজ বৃহস্পতিবার গুগল ডুডলে সেই বিজ্ঞানী তথা ভাইরোলজিস্টের কৃতিত্বকেই মেলে ধরা হয়েছে। ১৯৭৪ সালে জলবসন্ত বা চিকেন পক্সের টিকা আবিষ্কার করেছিলেন জাপানি ভাইরোলজিস্ট ডা. মিচিয়াকি তাকাহাশি। ৮০টিরও বেশি দেশে এই ভ্যাকসিন পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল। তারপর থেকে বিশ্বের সব দেশই এই ভ্যাকসিনের প্রয়োগ করে। বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ শিশুকে এই টিকা দেওয়া হয়।
১৯২৮ সালে আজকের দিনেই জাপানের ওসাকায় জন্মগ্রহণ করেন ডাঃ মিচিয়াকি তাকাহাশি। তিনি ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিক্যাল সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। ১৯৫৯ সালে মাইক্রোবিয়াল ডিজিজেস রিসার্চ ইনস্টিটিউটে যোগ দেন। ভ্যারিসেলা জুস্টার নামক ভাইরাস থেকে চিকেন পক্স হয়। বিজ্ঞানী এই ভাইরাসকে নির্মূল করার টিকাই তৈরি করেন।
চিকেন পক্স হলে কী হয়? কীভাবে ছড়ায় এই রোগ?
বসন্ত রোগ বলতে আমরা সেই রোগটিকেই বুঝি, ডাক্তারি পরিভাষায় যাকে বলা হয় চিকেন পক্স। অনেকে জলবসন্তও বলেন। আর এক ধরনের পক্স আগে হত। সেটা হল স্মল পক্স বা গুটিবসন্ত। এখন আর হয় না। শুধু বসন্তকালে নয়, বছরের যে কোনও সময়েই এই রোগ হতে পারে। তবে বছরের প্রথম ছ’মাস অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত এই রোগ হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণেই এই রোগের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। ইনফ্লুয়েঞ্জার মতোই ভাইরাস ঘটিত রোগ। ভ্যারিসেলা জুস্টার (ভি-জেড ভাইরাস) নামে এক ধরনের ভাইরাসের জন্য এই রোগ হয়।
চিকেন পক্স হলে আগে জ্বর হবে। পরের ২-৩ দিনের মধ্যে জ্বরের মাত্রা বাড়তে থাকবে। সেই সঙ্গে সারা শরীরে ব্যথা হবে। ছোট ছোট গুটির মতো র্যাশ বের হবে। খসখসে হয়ে যাবে ত্বক, চুলকানি হবে। সারা শরীর, মুখেও র্যাশ ছড়িয়ে পড়বে। ৫-৭ দিন পর্যন্ত র্যাশ বের হবে। পরে ধীরে ধীরে সেগুলিই জলভরা ফোস্কার মতো আকার নেবে। ফোস্কার ভিতরের রস ঘন হয়ে পুঁজের মতো হয়ে শুকিয়ে উঠবে।
চিকেন পক্স খুবই ছোঁয়াচে রোগ। খুব দ্রুত আক্রান্ত ব্যক্তির থেকে সুস্থ মানুষের শরীরে তা ছড়িয়ে পরে। সাধারণত আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি, কাশি বা থুতুর সঙ্গে ভাইরাস ছড়ায়। এমনকি, রোগীর সংস্পর্শে এলেও রোগ ছড়াতে পারে। শরীরে ভাইরাস ঢোকার সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে ধীরে ধীরে উপসর্গ দেখা দিতে শুরু করে। চিকেন পক্সের ভ্যাকসিন নেওয়া থাকলে এই রোগের প্রকোপ থেকে রেহাই মেলে। বাচ্চাদের আগে থেকেই তাই পক্সের ভ্যাকসিন দিয়ে রাখা হয়।