
দ্য ওয়াল ব্যুরো: প্রাণ বাঁচাতে কুমীরের সঙ্গে কুস্তি লড়লেন ওয়াইল্ডলাইফ রেঞ্জার। কুমীরটির চোখে একটা আঙুল ঢুকিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি। তারপরেই নিস্তার পেয়েছিলেন নিশ্চিত মৃত্যুফাঁদ থেকে। তবে ঘটনার কথা ভাবলে এখনও শিউরে উঠছেন অস্টেলিয়ান ওয়াইল্ডলাইফ রেঞ্জার ক্রাইগ ডিকম্যান।
অস্ট্রেলিয়ার উত্তরভাগে রয়েছে কুখ্যাত ‘ক্রক কান্ট্রি’। খোলা আকাশের নীচে সমুদ্রের বিচের উপর সেখানে ঘুরে বেড়ায় অসংখ্য কুমীর। এইসব কুমীরদের গ্রাস থেকে বেঁচে ফেরা একপ্রকার অনিশ্চিত। ওদের নিশানা হয়ে গেলে মৃত্যু অনিবার্য। তবে এমন চরম মরণফাঁদ থেকেই বরাত জোরে বেঁচে ফিরে এসেছে ডিকম্যান। জানিয়েছেন, প্রায় ৯ ফুটের একটি অতিকায় কুমীরের শিকার হতে হতে বেঁচে গিয়েছেন তিনি। এ যেন সাক্ষাৎ মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে ফেরা।
ডিকম্যান জানিয়েছেন, ‘ক্রক কান্ট্রি’ থেকে বেরোনোর মুহূর্তেই তার সঙ্গে ঘটে এই দুর্ঘটনা। আপনমনে বিচ ধরে হেঁটে আসছিলেন তিনি। হঠাৎই বুঝতে পারেন পিছনে কিছু একটা রয়েছে। আশঙ্কা সত্যি কিনা তা জানার জন্য পিছন ফিরতেই ভয়ে আতঙ্কে সিঁটিয়ে গিয়েছিলেন ডিকম্যান। দেখেছিলেন ঠিক তার থাইয়ের পিছন থেকে উঁকি দিচ্ছে এক সুবিশাল কুমীরের মাথা। ঝলমলে রোদে ঝকঝক করছে তার দাঁতের সারি। চোখে শান্ত শীতল খুনে চাউনি। মুহূর্তের জন্য হাত-পা অবশ হয়ে গিয়েছিল ডিকম্যানের।
আরও পড়ুন- কুমিরের সঙ্গে কুস্তি স্কুলপড়ুয়ার, বন্ধুকে বাঁচাতে উপড়ে নিল চোখ
ততক্ষণে ডিকম্যানের থাই কামড়ে ধরে জলের দিকে তাঁকে টানতে শুরু করেছে কুমীরটি। যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতেও ৫৪ বছরের ওই রেঞ্জার ভেবেছিলেন নিজেকে বাঁচানোর একটা শেষ চেষ্টা তিনি করবেন। পালাতে তাঁকে হবেই। এরপরেই শুরু হয় যুদ্ধ। থাই থেকে কুমীরটিকে ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকেন ডিকম্যান। কারণ তিনি জানতে একবার তাঁকে জলে নামিয়ে ফেলতে পারলে এই কুমীর তাঁকে শেষ করে দেবে। কিন্তু লাভের লাভ হচ্ছিল না কিছুই। কোনওমতেই কুমীরটির গ্রাস থেকে নিজেকে ছাড়াতে পারছিলেন না ডিকম্যান। বদলে কানে ভেসে আসছিল তাঁর থাই কামড়ে থাকা কুমীরের চোয়ালের মড়মড় শব্দ। ডিকম্যান জানিয়েছেন, এই শব্দ তিনি জীবনেও ভুলবেন না। চোখ বুজলেই ত্রাস তৈরি করছে কুমীরের চোয়ালের ওই ভয়ানক আওয়াজ।
হাজার চেষ্টাতেও ফল না পেয়ে শেষপর্যন্ত নিজের বুড়ো আঙুল ওই কুমীরের চোখে ঢুকিয়ে দেন ডিকম্যান। তাঁর কথায়, “ওর শরীরটা লোহার মতো শক্ত। এই একটা নরম জায়গা ছিল যেখানে ওকে আঘাত করা যায়। কারণ আঘাত না পেলে ও আমায় কিছুতেই ছাড়বে না। মুখের গ্রাস আলগা করবে না।“ বেশ খানিকক্ষণের ধস্তাধস্তির পর অবশেষে কুমীরটিকে বাগে আনতে সক্ষম হন রেঞ্জার। বিচের উপর তাকে ফেলে শুইয়ে দেন তিনি। ধারালো দাঁতের কবল থেকে বের কর আনেন নিজেকে। ততক্ষণে রক্তে ভেসে গিয়েছে ডিকম্যানের পা। কুমীরের কামড়ের চোটে বেশ কিছু জায়গা থেকে মাংস খুলেও বেরিয়ে এসেছে। ইমার্জেন্সি পরিষেবায় খবর দেওয়ার ৪৫ মিনিটের মধ্যেই ডিকম্যানকে উদ্ধার করে বিশেষ দল। ঘণ্টাখানাকের মধ্যেই তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। আপাতত ডিকম্যান সুস্থই রয়েছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তবে রেঞ্জার নিজে বলছে শরীর সেরে গেলেও আতঙ্ক কাটাতে তাঁর বেশ কয়েকদিন সময় লাগবে।