
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সামনেই ছিল ছোট্ট গুরপ্রীতের ৭ বছরের জন্মদিন। কিন্তু তার আগেই অকালে ঝরে গেল একটা তাজা প্রাণ। মারা গিয়েছে ৬ বছরের গুরপ্রীত কউর। তাও আবার মরুভূমির মধ্যে প্রচণ্ড গরমে এবং তীব্র জলাভাবে। এই ঘটনা ঘটেছে আমেরিকা এবং মেক্সিকোর বর্ডারে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, প্রচণ্ড গরমে হিট স্ট্রোকেই মৃত্যু হয়েছে ওই কিশোরীর।
অ্যারিজোনা প্রদেশের লিউকভিলির পশ্চিমে একটি মরুভূমিতে মারা গিয়েছে ওই কিশোরী। ইউএস বর্ডার পেট্রলের তরফে জানানো হয়েছে ওই এলাকায় এখন তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তারা জানিয়েছে, মধ্য-আমেরিকা থেকে ইউএস-মেক্সিকো বর্ডার পেরিয়ে বিপুল সংখ্যক লোক আমেরিকার প্রবেশের চেষ্টা করে। তাদের মধ্যে রয়েছে মেক্সিকোয় বসবাসকারী অনেক ভারতীয়ও। সম্প্রতি এই তালিকায় ছিল ছোট্ট গুরপ্রীত এবং তার মা। জানা গিয়েছে, মেয়ের প্রচণ্ড জল তেষ্টা পেয়েছিল অ্যারিজোনার দক্ষিণ ভাগের ওই সুবিশাল মরুভূমি পেরনোর সময়। বাকি সঙ্গীদের কাছে মেয়েকে রেখে তার মা গিয়েছিলেন জলের খোঁজে। সেই সময়েই হিটস্ট্রোকে মারা যায় ছোট্ট গুরপ্রীত।
পরিসংখ্যান বলছে, এই নিয়ে দু’জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে অ্যারিজোনা প্রদেশের এই দক্ষিণ ভাগের মরুভূমিতে। ইউএস-মেক্সিকো বর্ডার পেট্রলের তরফে জানানো হয়েছে, বিপুল সংখ্যক আফ্রিকান এবং এশিয়ান ইউএস-মেক্সিকো বর্ডার পেরিয়ে আমেরিকায় বেআইনি ভাবে প্রবেশের চেষ্টা করেন। সে সময় বেশিরভাগ অনুপ্রবেশকারী স্মাগলারদের খপ্পরে পড়েন। তারাই এই অনুপ্রবেশকারীদের রাস্তা দেখিয়ে দেয়। কিন্তু অনেকসময়ই ভুল রাস্তা দেখায় তারা। গুরপ্রীত এবং তাদের সঙ্গে আসা বাকিদের ক্ষেত্রেও তেমনটাই হয়েছিল। ফলে রুক্ষ-বিশাল মরুভূমির মধ্যে রাস্তা হারিয়ে ফেলেছিলেন সবাই। হয়েছিল তীব্র জলকষ্ট। সঙ্গে মারাত্মক গরম। এর ফলেই মারা যায় গুরপ্রীত।
জানা গিয়েছে, ইউএস-মেক্সিকো বর্ডারের কাছে ওই প্রত্যন্ত মরুভূমিতে মঙ্গলবার সকাল ১০টা নাগাদ হারিয়ে যায় গুরপ্রীত, তার মা এবং বাকি দল। বেশ কিছুক্ষণ পর বাকিদের কাছে মেয়েকে রেখে এক মহিলাকে সঙ্গে নিয়ে জল খুঁজতে বেরোন গুরপ্রীতের মা। এরপর কেটেছে ২২ ঘণ্টা। মানে প্রায় একদিন। আর এই সময়টা রাস্তা ভুলে গোটা মরুভূমিতে বারবার পাক খেয়েছেন তাঁরা। ২২ ঘণ্টা পর ওই দুই মহিলাকে উদ্ধার করে বর্ডারে থাকা নিরাপত্তাকর্মীরা। তখন গুরপ্রীতের মা তাদের জানায় যে, পিছনে আরও কয়েকজনের সঙ্গে নিজের মেয়েকে ফেলে এসেছেন তিনি। ভালো ইংরেজি বলতে পারেন না গুরপ্রীতের মা। ইশারাতেই কোনওমতে নিরাপত্তারক্ষীদের বিষয়টা বুঝিয়ে দেন তিনি। বালির উপর পায়ে চিহ্ন দেখে শুরু হয় সার্চ অপারেশন। কিন্তু হাওয়ায় প্রায় সব ছাপই অস্পষ্ট হয়ে গিয়েছে তখন। অবশেষে ধু ধু মরুভূমির বুক থেকে অবশেষে উদ্ধার হয় সকলেই। কিন্তু ততক্ষণে জলকষ্টে এবং হিটস্ট্রোকে মৃত্যু হয়েছে কিশোরী গুরপ্রীতের।