
এই ধরণের ছেলেমেয়েদের জন্যেই কিছু করতে চেয়েছিলেন জয়পুরের ভূনেশ শর্মা। পেশায় তিনি ব্যবসায়ী। বছর ছয়েক আগে তিনি রাস্তায় তিনটি ছোট ছোট ছেলে মেয়ের সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন। ট্রাফিক সিগনালে গাড়ি দাঁড়াতেই জানলায় হাত পেতেছিল তিন জন। তবে না, টাকা তারা চায়নি। তাদের চাহিদা ছিল কাগজ আর পেনসিল। লেখাপড়া করতে চাইত তারা, কিন্তু কাগজ পেনসিলের পয়সাটুকুও তাদের জোটেনি কখনও। তাই ভিক্ষা করে তা জোটানোর চেষ্টা করছিল তিন খুদে। এমন অভিনব ঘটনায় চমকে ওঠেন ভূনেশ। সঙ্গে সঙ্গে দোকান থেকে খাতা পেনসিল কিনে দেন তিনি। আর সেটাই ছিল এসএফএ বা স্মাইল ফর অল সোসাইটি-র সূচনা।
বাচ্চা তিনটির বাড়ি গিয়ে খোঁজখবর করে ভূনেশ জানতে পারেন তাঁদের পরিবারের আর্থিক অবস্থার কথা। নিজেই বিনামূল্যে পড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। রাজি করান তাঁদের মা-বাবাকেও। সেই থেকে পথ চলা শুরু এসএফএ এনজিও-র। ধীরে ধীরে ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। লোন নিয়ে একসময় তাঁদের প্রাইভেট স্কুলে ভর্তিও করানো হয়েছিল।
সম্প্রতি এনজিওকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ভূনেশ আর তাঁর সহযোগীরা হাতিয়ার করেছেন ওটিটি প্ল্যাটফর্মকেই। একটি অ্যাপ তারা চালু করেছেন যা নেটফ্লিক্স, হটস্টারের মতোই কাজ করে। এদেশের যেসমস্ত সহৃদয় ব্যক্তি গরিব বাচ্চাদের লেখাপড়া এগিয়ে নিয়ে যেতে চান, তাঁরাই সাবস্ক্রাইব করতে পারেন এই ওটিটি মাধ্যমে। ৫০০ টাকার সাবস্ক্রিপশনের মাধ্যমেই বাড়িয়ে দিতে পারেন সাহায্যের হাত।
যাঁরা এখানে সাবস্ক্রাইব করেন, তাঁদের দেওয়া হয় একটি সার্টিফিকেট। সেখানে লেখা থাকে সংস্থার মহৎ উদ্দেশ্য। টাকায় কোন কোন বাচ্চা কী কী সুবিধা পাবে, সমস্ত বিস্তারিত বিবরণ। শুধু তাই নয়, বাচ্চাটির পড়াশোনা কেমন চলছে তার আপডেটও দেওয়া হয় সেখানে।
২০১৫-তে শুরু হওয়া এনজিও ধীরে ধীরে ডালপালা মেলেছে। এখন সারা দেশের অন্তত ১০০টি বস্তি এলাকার বাচ্চাদের পড়াশোনার ভার এসএফএ-র কাঁধে। এখানে বাচ্চাদের বিনামূল্যে পড়ান সারা দেশের অন্তত হাজার চারেক ভলান্টিয়ার।
ওটিটি প্লাটফর্মে এই এনজিও-র এখন ৬১২ সাবস্ক্রাইবার। ভারতের আড়াইশোর বেশি জায়গার হাজারের বেশি দুস্থ বাচ্চাকে পড়ানো হয় এখানে। ওটিটিকে হাতিয়ার করে আরও বড় হবে এসএফএ, তেমনটাই আশা রাখছেন এসবের কারিগর ভূনেশ শর্মা।