Latest News

মালদার জল গড়াল কলকাতায়, অবস্থানে গনিখান কলেজের পড়ুয়ারা

সোহিনী চক্রবর্তী

দাবি মেটেনি ওঁদের। কলেজ শুধুই সমস্যা মেটানোর আশ্বাস দিয়েছে। তাই মালদার ‘গনিখান চৌধুরী ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি’-র পড়ুয়ারা এ বার কলকাতায়।

মালদায় আন্দোলনের বয়স পেরিয়ে গিয়েছে ৪২০ ঘণ্টা। কিন্তু সুরাহা হয়নি। হাতে পাওয়া সার্টিফিকেট যে আসলে কীসের সমতুল্য তা এখনও জানেন না জিকেসিআইটি-র পড়ুয়ারা। জুলাই মাসের ২৩ তারিখ থেকেই আন্দোলন আরও জোরদার করেছিলেন ছাত্রছাত্রীরা। কলেজ কর্তৃপক্ষকে সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, তাঁদের দাবি না মানা হলে আনির্দিষ্ট কালের জন্য আন্দোলন চলবে। নেওয়া হবে আরও বড় কোনও পদক্ষেপ। কিন্তু তাতেও বিশেষ সুবিধা হয়নি। শেষ পর্যন্ত কলকাতায় রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে আসেন পড়ুয়ারা।

বারবার মেল পাঠানো হয়েছিল রাজ্যপালের দফতরে। গত বুধবার ৮ অগস্ট মালদা থেকে কলকাতায় এসে রাজভবনেও গিয়েছিলেন প্রতিনিধি দল। কিন্তু দেখা করেননি রাজ্যপাল। আর এতেই বোধহয় একুশ-বাইশ বছরের ছেলেগুলোর মধ্যে জেদ আরও বেড়ে গিয়েছে। অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টসের সামনে ধর্নায় বসেছেন তাঁরা। দাবি একটাই। প্রতারণা বন্ধ করে কলেজ এ বার সার্টিফিকেটের সমতুল্যতা জানাক।

দ্য ওয়ালের পক্ষ থেকে আন্দোলনরত এক পড়ুয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি জানিয়েছেন, “সার্টিফিকেট কীসের সমতুল্য তা না জেনে আমরা বাড়ি ফিরবো না।” আন্দোলনে সামিল আরেক পড়ুয়া জানিয়েছেন, “দিন তিনেকের মতো রসদ নিয়ে মালদা থেকে কলকাতা এসেছিলাম। সঙ্গে আর খাবার-দাবারও তেমন নেই। পকেটে নেই সেরকম পয়সাও। আজ সকালেই কয়েকটা বাড়িতে গিয়ে চাল-ডাল সংগ্রহ করেছি আমরা। পথচলতি মানুষের থেকে আমাদের দাবির সপক্ষে স্বাক্ষরও নিয়েছি। অনেক নাট্য কর্মী আমাদের খুব সাহায্য করেছেন। আজ সকালে খাবারও কিনে দিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু এ ভাবে আর ক’দিন চলবে বলুন তো? কার্যত ভিক্ষা করেই এ বার আমাদের পেট চালাতে হবে। তবে প্রয়োজনে আমরা তাই করবো। কিন্তু কলেজ আমাদের দাবি না মানলে আন্দোলন আরও তীব্র হবে। আমরণ অনশনে বসবো আমরা।”

এই বিষয়ে যোগাযোগ করা হয়েছিল জিকেসিআইটি কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও। ডিরেক্টর পরমেশ্বর রাও আলাপাতি বলেন, “পড়ুয়ারা যে কলকাতায় যাচ্ছেন এ ব্যাপারে আমরা কিছুই জানতাম না। অফিশিয়ালি ছাত্ররা আমাদের কিছু জানায় নি।” ডিরেক্টর আরও জানিয়েছেন, কলেজে ডিপ্লোমা এবং বি টেক প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হয়েছে। এসেছে নতুন ছাত্রছাত্রী। কিন্তু কলেজের দু’টি ব্লক কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রী ঘেরাও করে রেখেছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। বলেছেন, “আমরা ওই ব্লিডিংয়ে ক্লাস নিতে পারছি না। নতুন পড়ুয়াদের জায়গার সমস্যা হচ্ছে।”

এ বিষয়ে কলকাতায় আন্দোলনরত এক পড়ুয়া বলেন, “আমাদের প্রতিনিধিরা কেউ কোনও বিল্ডিং দখল করে রাখেনি। শুধু গেটের কাছে আন্দোলনে বসেছে। আর ওঁনাদের কাছে তো আমাদের এড়িয়ে যাওয়াটা কোনও সমস্যাই নয়। আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে যাঁরা এ ভাবে ছিনিমিনি খেলেছেন তাঁরা অনায়াসে আমাদের বুকের উপর দিয়েও চলে যেতেই পারেন।”

 

কিন্তু আন্দোলন করতে হঠাৎ কলকাতায় কেন এলেন মালদার এই পড়ুয়ারা? অ্যাকাডেমির সামনে আন্দোলনে সামিল এক পড়ুয়া বলেন, “অনেক আশা নিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলাম। ভেবেছিলাম উনি হয়তো কিছু সমাধান করবেন। কিন্তু উনি তো দেখাই করলেন না। আমরাও ঠিক করেছি খালি হাতে আর বাড়ি ফিরবো না। শুনেছি এ শহর কাউকে নিরাশ করে না। দেখা যাক আমাদের ভাগ্যে কী আছে।”

You might also like