Latest News

ক্যানসারের সঙ্গে লড়ে পড়াশোনা-ছাত্ররাজনীতি, প্রেসিডেন্সির সৌমাল্য যেন ‘যুবরাজ সিং’

দ্য ওয়াল ব্যুরো: যে শব্দটা শুনলেই লোকে মানসিক ভাবে অর্ধেক হয়ে পড়ে, সেটাকেই নিজের মনের জোরে হারিয়ে দিয়েছে ছেলেটা। ক্যানসারের সঙ্গে লড়ে পড়াশোনা। সেই সঙ্গে ক্যাম্পাসে চুটিয়ে ছাত্ররাজনীতি। সবটাই করেছেন সমানতালে। আর সেটাই করে যেতে চান সৌমাল্য চক্রবর্তী।

প্রেসিডেন্সির ছাত্র সংসদ ভোটে সৌমাল্য ভূগোল বিভাগ থেকে নির্বাচিত হয়েছেন এসএফআইয়ের প্রার্থী হয়ে। বৈদ্যবাটির এই তরুণ ছাত্রনেতার পড়াশোনা চন্দননগরের কানাইলাল বিদ্যালয়ে। তারপর মাহেশ রামকৃষ্ণ আশ্রম থেকে ২০১৭ সালে উচ্চমাধ্যমিক। ঠিক উচ্চমাধ্যমিক শেষ হওয়ার পরই ধরা পড়ে মারণ রোগ। পরিবারের মাথায় বাজ পড়েছিল। কিন্তু সবাইকে বুঝিয়েছেন সৌমাল্য নিজে।, “অনেকেই ফিরে আসে। আমিও ফিরব।”

এখন অনেকটা ভাল সৌমাল্য। স্বাভাবিক জীবনযাপনে কোনও যতি পড়েনি। আর তাঁর স্পর্ধা দেখে সংগঠনের সতীর্থ থেকে ক্লাসের বন্ধুদের অনেকেই বলছেন, ওই আমাদের যুবরাজ সিং।

ছোট থেকেই মেধাবী। প্রেসিডেন্সিতে সুযোগ পেতেও বেশি কসরত করতে হয়নি। কিন্তু শুরুর দিন থেকেই পড়াশোনার সঙ্গে রাজনীতিও করেছেন সৌমাল্য। বাবা সোমনাথ চক্রবর্তী একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী। মা গৃহবধূ। বাম রাজনীতির আবহেই বড় হওয়া। সৌমাল্য জানালেন, তাঁর বাবাও একটা সময়ে এসএফআইয়ের নেতা ছিলেন। তাই পরিবার থেকে কখনও বাধা আসেনি রাজনীতি করার ক্ষেত্রে। সোমনাথবাবু বলেন, “ছেলেটার জন্য গর্ব হয়। এত ঝড় গিয়েছে ওর উপর দিয়ে। তবু ও নিজের জায়গায় এক ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। সত্যিই গর্ব হয় বলতে।”

সিলেবাসের বাইরের বিরাট জগৎটা নিয়ে ছোট থেকেই আগ্রহ সৌমাল্যর। ঘরে ঢুকলেই চাক্ষুষ করা যায় সেটা। সুকুমার, শীর্ষন্দু, শিবরাম, বিভূতিভূষণের সঙ্গে সঙ্গেই স্কুলের গণ্ডিতে থাকতেই পড়া হয়ে গিয়েছিল  জুলিয়াস ফুচিকের ‘ফাঁসির মঞ্চ থেকে’ কিংবা চে গুয়েভারার ডায়েরি। পড়াশোনার বাইরে ক্যুইজ, তাৎক্ষণিক বক্তৃতা কিংবা বিতর্ক প্রতিযোগিতা—সৌমাল্য নাম দেওয়া মানেই পুরস্কার বাঁধা। বাড়ির আলমারিতেও সারি দিয়ে সেই মেমেন্টোগুলি রাখা।

কিন্তু এই পরিস্থিতিতে বাম ছাত্র রাজনীতি? সরকারে নেই, ভোট শতাংশ তলানিতে, তাও কেন? ঠোঁটের কোণে যেন জবাব লেগেছিল গোলগাল চেহারার ছেলেটার। বলে দিলেন, “এসেছি তো আদর্শের টানে রাজনীতি করতে। সমাজের যে মারণ রোগ, তাতে আমাদের মতাদর্শই কেমো হিসেবে কাজ করবে। একদিনে হবে না। কিন্তু একদিন তো হবেই।” ছাত্ররাজনীতিতের স্রোতে গা ভাসান অনেকেই। কিন্তু কেরিয়ারের হাতছানি, অন্যান্য সব কিছুর মধ্যে জড়িয়ে গিয়ে মূল ধারার রাজনীতিতে আর তাঁদের দেখা যায় না। বহু প্রতিভাকে এ ভাবেই হারিয়ে ফেলেছে মূল ধারার গণ আন্দোলন। সৌমাল্য কী করবে? প্রেসিডেন্সির জয়ী শ্রেণিপ্রতিনিধির জবাব, “রাজনীতিতে থাকব। কারণ আমি এটাই শিখেই বড় হয়েছি যে, রাজনীতি যদি আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, তাহলে সেই রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করাটাই আমাদের আশু কর্তব্য।”

You might also like