
স্বাভাবিক ভাবেই এই প্রসাদী বেল পচে নষ্ট হয়। ফেলে দেওয়া ফুল থেকে যেমন আবির-সহ নানা ধরনের জিনিস তৈরি হচ্ছে তেমনি এই বেলকেও একই ভাবে কাজে লাগানোর দাবি উঠেছে জলপাইগুড়ি জেলায়।
শিবরাত্রি উপলক্ষে শুক্রবার রাত থেকে শুরু হয়েছে পুজো। চলবে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত। এই পুজোয় বিশেষ করে মহিলা পুণ্যার্থীদের ভিড় বেশি চোখে পড়ে। দিনভর উপবাসের পরে তাঁরা পুজো দেন পাঁচ রকম ফল দিয়ে যার মধ্যে বেল থাকে। শিবপুরাণে কথিত আছে, মাতা পার্বতীর কপালের ঘাম মাটিতে পড়ে বেল গাছের সৃষ্টি। তাই শিবের পুজোয় বেল আবশ্যিক।
মন্দিরগুলিতে দেখা যায় পুজোর পরে অন্যান্য ফল যত্ন করে তুলে রেখে পরে তা বিলি করা হয় কিন্তু বেল ফেলে দেওয়া হয় আঁস্তাকুড়ে।
বেলের বৈজ্ঞানিক নাম ইগল মার্মেলোস (Aegle Marmelos)। বিপুল ভেষজ গুণ থাকায় একে বাংলায় শ্রীফল বলা হয়। এই ফলে ভিটামিন এ এবং সি রয়েছে। খনিজের মধ্যে রয়েছে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও ফসফরাস। কোষ্ঠকাঠিন্য, রক্তশর্করা, রক্তচাপ, রক্তাপ্লতা, বাতের ব্যথা ও যকৃতের নানা রোগের উপষম হয় এই ফল খেলে। এই বেলই ব্রাত্য হয়ে যায় পুজোর পরে। উৎসর্গ করার পরে আঙুর-আপেল-লেবুর মতো এই ফলের কদর থাকে না।
ছোটবড় মিলিয়ে জলপাইগুড়ি জেলায় অন্তত পাঁচশো শিবমন্দির রয়েছে। শিবরাত্রি উপলক্ষে জেলাজুড়ে থাকা এই সব মন্দিরে সব মিলিয়ে আন্দাজ সাড়ে তিন লক্ষ ভক্ত পুজো দেন। সুতরাং পুজোর জন্য সব মন্দির মিলিয়ে তিন থেকে সাড়ে তিন লক্ষ বেল জমা হয়।
দুর্গাপুজো-কালীপুজোয় ভাসানের পরে ফেলে দেওয়া বিভিন্ন ধরনের ফুল দিয়ে আবির প্রভৃতি তৈরি হয়। বেলও সেই ভাবে কাজে লাগানোর দাবি করছে মন্দির কমিটিগুলি। সাধারণ মানুষেরও তাতে সায় রয়েছে।
চন্দনা দাস নামে জলপাইগুড়ির এক গৃহবধূ বলেন, “দেখতে পেলাম আমাদের দেওয়া বেলগুলি ফেলে দেওয়া হচ্ছে। শুনেছি পুজোর পরে ফেলে দেওয়া ফুল দিয়ে আজকাল আবির তৈরি করা হয়। বেল থেকেও তো ওষুধ, পানীয় এসব তৈরি করা যেতে পারে।”
জলপাইগুড়ি পুলিশ লাইন মন্দির কমিটির পক্ষে বীরেন মোহন্ত বলেন, “বেল বাদে অন্য ফল আমরা রেখে দিই। যারা এসে প্রসাদ চায় দিয়ে দিই কিন্তু বেল কেউ চায় না তাই উপচে পড়া বেলগুলি আমরা মন্দিরের পিছনে জমা করে রাখি। যদি কেউ চায় আমরা নিশ্চয়ই দিয়ে দেব।”