
দ্য ওয়াল ব্যুরো: অন্যবার ১৫ অগস্টের পর থেকেই পুজোর বাজারে ভিড় শুরু হয়ে যায় কলকাতায়। নিউমার্কেট থেকে হাতিবাগান কিংবা দক্ষিণের গড়িয়াহাট—নতুন কালেকশনের খোঁজ শুরু করে দেয় জনতা। কিন্তু এবার সেসব নেই। করোনা আবহে পুজো আদৌ কী ভাবে হবে তাই নিয়েই সন্দিহান অনেকে। তবে পুজো মণ্ডপে কী কী বিধি মানা যায় তার একটা প্রস্তাব প্রশাসনকে দিল ‘ফোরাম ফর দুর্গোৎসব।’
মণ্ডপের গঠন থেকে ব্যারিকেডের ব্যবস্থা, আলো থেকে বরণ, সিঁদুর খেলা—সব মিলিয়ে কয়েক ডজন বিধির কথা বলা হয়েছে পুজো উদ্যোক্তাদের ফোরামের তরফে। কী ভাবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মণ্ডপে প্রতিমা দর্শন করা যায় তার একটা খসড়া গাইডলাইন প্রশাসনকে দেওয়া হয়েছে। এবার পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক আধিকারিকরা বসে পুজোর বিধি চূড়ান্ত করবেন।
ফোরামের তরফে বলা হয়েছে, প্যান্ডেল এমন ভাবে তৈরি করতে হবে যাতে বাইরে থেকে প্রতিমা দেখা যায়। তাহলে মণ্ডপের ভিতরে ছোট জায়গায় জটলা কমানো যাবে। ভিতরের কারুকার্যও যথাসম্ভব কমানো উচিত বলে মনে করছে ফোরাম। একসঙ্গে ২৫ জনের বেশি মণ্ডপে প্রবেশ করতে দেওয়া যাবে না। প্রত্যেকের মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। ব্যারিকেড করে দূরত্ব বজায় রেখে যাতে দর্শনার্থীরা দাঁড়ান তা নিশ্চিত করতে হবে উদ্যোক্তাদের। সেই ব্যারিকেডে সংশ্লিষ্ট পুজো কমিটির যে স্বেচ্ছাসেবকরা থাকবেন তাঁদেরও সুরক্ষিত রাখার জন্য পিপিই পরাতে হবে।
পুজো উদ্যোক্তাদের কেন্দ্রীয় সংগঠনের তরফ থেকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, প্রতিটি মণ্ডপের বাইরে হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখা বাধ্যতামূলক করা উচিত। দিনে অন্তত একবার মন্ডপ স্যানিটাইজ করতে হবে। একই সঙ্গে থার্মাল গানও রাখতে হবে মন্ডপে প্রবেশ পথের সামনে। কারও গায়ে তাপমাত্রা থাকলে তাঁকে ঢুকতে দেওয়া যাবে না। আলো জাঁকজমক না করার পরামর্শ দিয়েছে ফোরাম। যাতে শুধু রাতে মন্ডপ দেখতে আসার প্রবণতা তৈরি না হয়। সারা দিন ধরে মানুষ এলে নির্দিষ্ট সময়ে অনেকের ভিড় এড়ানো সম্ভব বলে মনে করছেন তাঁরা।
ফোরামের সাধারণ সম্পাদক শাশ্বত বসু বলেছেন, সব দিক ভেবেই এই বিধি মানার তালিকা খসড়া আকারে প্রশাসনকে দেওয়া হয়েছে। তাঁর কথায়, “পুজো যেমন হবে তেমন সামাজিক দায়িত্বও কমিটিগুলিকে ভুললে চলবে না। কারণ আমরা সবাই সমাজকর্মী।”
পুজোর ক্ষেত্রেও গোটা ফল দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে ফোরাম। কাটা ফলে সংক্রমণ ছড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা। একই ভাবে বিসর্জনের দিন যথাসম্ভব কম লোক নিয়ে নিরঞ্জনযাত্রা করার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা। সিঁদুর খেলাতেও মানতে হবে বিধি। যদিও অনেকেই বলছেন, এইসব বিধির কথা শুনতে ভাল লাগলেও বাস্তবে কতটা কার্যকর করা যাবে তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই।
গত মাসেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, “পুজো করতে হবে তো নাকি! ভাল করে পুজো করতে হলে এখন থেকেই ক্লাবগুলিকে সংক্রমণ রুখতে ব্যবস্থা নিতে হবে।” কলকাতার অনেক বড় পুজো কমিটি যেমন আগেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে এবার নমঃ নমঃ করে পুজো হবে তেমন অনেক বারোয়ারি আবার প্যান্ডেলের কাজ শুরু করে দিয়েছে। চোরবাগানে চলছে মন্ডপ তৈরির কাজ। টালা বারোয়ারির এবার শতবর্ষ। তারা পুজো করলেও বিরাট কিছু করছে না বলেই জানিয়েছে। কিন্তু কী হবে পুজোর বিধি, তা হয়তো অগস্টের মধ্যেই কমিটিগুলিকে প্রাথমিক ভাবে জানিয়ে দেবে প্রশাসন।