
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ছ’বছরের প্রেমের সম্পর্ক পূর্ণতা লাভ করেছিল পরিণয়ে। সামাজিক ভাবে বিয়ে তাঁদের হয়নি বটে তবে প্রাপ্তবয়স্ক দুই ছেলে-মেয়ে বিয়ে করেছিলেন আইন মেনে – রেজিস্ট্রি করে। তাই আইনত তাঁরা দম্পতি। ঘরকন্না অবশ্য তাঁদের আর করা হয়নি। সে কারণ বড় অদ্ভুত।
বর্ধমান শহর লাগোয়া সরাইটিকরের চ্যাণ্ডেল পাড়ায় বাড়ি শেখ রেজাউলের। সরাইটিকর দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা এক তরুণীর সঙ্গে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয় বছর ছয়েক আগে। এবছর জানুয়ারি মাসে তাঁরা বিয়েও করেন আইন মেনে। তারপরেই সমস্যা।
মেয়েটির বাড়ির লোকজন এই সম্পর্কের কথা জানতেনই না। তাঁরা বিষয়টি জানতে পারেন তাঁদের কলেজছাত্রী মেয়ে বেকার যুবককে বিয়ে করার পরে। দুই পরিবারের আর্থসামাজিক অবস্থা মোটের উপর এক। ছেলেটির বাড়ির লোক মেনে নিয়েছিলেন মেয়েটিকে।
কাকপক্ষীকে পর্যন্ত জানতে না দিয়ে হঠাৎই একদিন স্ত্রী ও পুত্র-কন্যাকে নিয়ে দক্ষিণপাড়া থেকে অন্য কোথাও চলে গিয়েছেন রেজাউলের শ্বশুর। যোগাযোগের কোনও রকম উপায়ও রাখেননি। তিনি কোথায় গেছেন সে ব্যাপারে মুখ খুলছেন না কোনও প্রতিবেশী।
এই অবস্থায় উদ্ভ্রান্ত হয়ে পড়েছেন রেজাউল। কোনও ভাবেই তিনি স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। স্ত্রীও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেননি বা করতে পারেননি।
স্ত্রীকে ফিরে পেতে শ্বশুরবাড়ির বাইরে ১৪ ফেব্রুয়ারি প্ল্যাকার্ড নিয়ে ধরনায় বসেন রেজাউল। কোনও প্ল্যাকার্ডে তাঁদের যুগলের ছবি, কোনওটায় স্ত্রীকে ফিরিয়ে দেওয়ার আর্জি। বন্ধু ও প্রতিবেশীরা রেজাউলের সমব্যথী, তাঁরা চাইছেন ফিরে আসুন রেজাউলের স্ত্রী, ঘর বাঁধুন তাঁরা।
বাজারে গোলাপের চাহিদা আজ সবচেয়ে বেশি। এই দিনে ভালোবাসার মানুষকে গোলাপ দেওয়া একরকম রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। লাল, হলুদ, কমলা, কালো আজ সব গোলাপই বিকোচ্ছে। রেজাউলও হয়তো ভেবে রেখেছিলেন বিয়ের পরে প্রথম ‘ভালবাসার দিন’ তাঁরা কাটাবেন বেশ অন্যরকম ভাবে। তবে কয়েকদিন আগেই তিনি বুঝে যান যে তা আর হওয়ার নয়। তাই প্রস্তুত হন দুনিয়ার লোককে নিজের ভালোবাসার কথা জানাতে। ভ্যালেন্টাইনস ডের সকালে প্লাকার্ড নিয়ে চলে যান ‘শ্বশুরবাড়ি’। টানা বসে থাকেন ঘণ্টা দুয়েক।
গোলাপ দিয়ে তিনি স্ত্রীর হৃদয় আজ ছুঁতে পারলেন না ঠিকই তবে তাঁর ভালবাসার কথা পৌঁছে গেল বহু মানুষের কাছে।