
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ২৮ বছর আগে খুন হয়েছিলেন কেরলের কোট্টায়ামের এক কনভেন্টের সন্ন্যাসিনী সিস্টার অভয়া। তাঁকে খুনের অপরাধে ফাদার টমাস কোট্টুর ও মাদার সেফিকে যাবজ্জীবন জেলের সাজা ঘোষণা করল সিবিআইয়ের বিশেষ আদালত।
বুধবার কেরলের রাজধানী তিরুঅনন্তপুরমের এই সিবিআই কোর্ট এই সাজা ঘোষণা করে। দু’দিন আগেই এই খুনের ঘটনায় দুই অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত। যাবজ্জীবন সাজার সঙ্গে দুই অভিযুক্তকে ৫ লাখ টাকা করে জরিমানাও করেছেন বিচারক।
কেরলের কোট্টায়ামে এক কনভেন্টে থাকতেন সিস্টার অভয়া। তাঁর বাবা-মা মারা গিয়েছেন চার বছর আগে। তিন ক্ষমতাশালী ব্যক্তির গোপন সম্পর্কের কথা জেনে ফেলেছিলেন সিস্টার অভয়া। সেজন্য তাঁকে খুন করে দেহটি ফেলে দেওয়া হয়েছিল কুয়োয়। ১৯৯২ সালের ২৭ মার্চ খুন হন ২১ বছরের সিস্টার।
অভিযুক্তদের মধ্যে ফাদার টমাস কোট্টুর কোট্টায়ামের বিসিএম কলেজে সিস্টার অভয়াকে সাইকোলজি পড়াতেন। ২০০৮ সালে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। তখন তিনি ছিলেন বিশপের সচিব। পরে কোট্টায়ামের ক্যাথলিক ডায়োসেসের চ্যান্সেলার হয়েছিলেন।
আর এক অভিযুক্ত মাদার সেফি সিস্টার অভয়ার সঙ্গেই হস্টেলে থাকতেন। তিনি ছিলেন হস্টেলের দায়িত্বে। সিবিআই জানিয়েছে, কোট্টুর, ফাদার জোসে পুথরিক্কায়াল ও সেফির মধ্যেকার অন্তরঙ্গ সম্পর্কের সাক্ষী ছিলেন সিস্টার অভয়া। ‘৯২ সালের ২৭ মার্চ ভোর চারটে বেজে ১৫ মিনিট নাগাদ সিস্টার অভয়া হস্টেলের ঘর থেকে রান্নাঘরে যান। ভোর পাঁচটা নাগাদ ভোঁতা কোনও অস্ত্র দিয়ে তাঁর মাথায় আঘাত করা হয়। পরে তাঁর দেহটি ফেলে দেওয়া হয় কুয়োয়।
২০১৮ সালে পুথরিক্কায়ালকে সিবিআই কোর্ট মুক্তি দেয়। কিন্তু কোট্টুর ও সেফির ডিসচার্জ পিটিশন নাকচ করে দেন বিচারকরা। পুলিশ ও ক্রাইম ব্রাঞ্চ প্রথমে বলেছিল, সিস্টার অভয়া আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু নানা মহল থেকে প্রতিবাদ জানানোর পরে তদন্তের দায়িত্ব সিবিআইকে দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রথম তিনটি রিপোর্ট নাকচ করে দেয় আদালত। বিচারক বলেন, এই মামলায় আরও খুঁটিয়ে তদন্ত করা দরকার।
আদালত বলে, তদন্ত রিপোর্টে নানা ফাঁক রয়েছে। সিস্টার অভয়া যে রাতে আত্মঘাতী হয়েছিলেন বলে রিপোর্টে লেখা হয়েছে, সেই রাতে হস্টেল চত্বরের কুকুরগুলো চেঁচায়নি। রান্নাঘরের দরজা বাইরে থেকে আটকানো ছিল। সিস্টার অভয়া যদি কুয়োয় ঝাঁপ দিয়ে থাকেন, হস্টেলের অন্যান্য বাসিন্দারা তার শব্দ শুনতে পেতেন। কিন্তু তাঁরা কোনও শব্দ শোনেননি।
২০০৮ সালের নভেম্বরে সিবিআই অভিযুক্ত তিনজনকে গ্রেফতার করে। সিস্টার অভয়ার খুনিরা যাতে শাস্তি পায়, সেজন্য দীর্ঘদিন ধরে লড়াই চালিয়েছিলেন মানবাধিকার কর্মীরা। তাঁদের মধ্যে একজনই বেঁচে আছেন। তাঁর নাম জোমোন পুথেনপুরাকাল।