
করোনা সারিয়ে উঠেছেন এমন ২৭০ জন রোগীর ওপর পরীক্ষা চালিয়ে এমন পরামর্শ দিচ্ছেন ডাক্তাররা। কারণ হিসেবে তাঁরা ব্যাখ্যা করছেন, কোভিড হলে এমনিতেও তার প্রতিরোধে শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, তার ওপর ভ্যাকসিন নিলে সেটা বুস্টার ডোজের মতোই কাজ করে। অ্যান্টিবডির পরিমাণ বাড়ে। সেক্ষেত্রে একটি ডোজ বা দুটি ডোজের মধ্যে তেমন কোনও ফারাক থাকে না। একটি ডোজ নিলেও শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আরও সক্রিয় হয়ে উঠবে।
কোভিড ভ্যাকসিনের একটি ডোজই কেন কাজ করবে এর সপক্ষে ডাক্তারবাবুরা আরও কিছু তথ্য দিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, কোভিড হলে শরীরের দুই রকম ইমিউন কোষ সক্রিয় হয়ে ওঠে। বি-কোষ ও টি-কোষ বা টি-লিম্ফোসাইট কোষ। এই বি-কোষের কাজ হল রক্তে অ্যান্টিবডি তৈরি করা। আর টি-কোষের কাজ হল সংক্রমণ সমেত গোটা কোষটাকেই নষ্ট করে দেওয়া। ভাইরাস শরীরে ঢুকলে বি-কোষ বিভাজিত হয়ে রক্তে অ্যান্টিবডি তৈরি শুরু করে। এই অ্যান্টিবডি প্রাথমিকভাবে সংক্রমণকে ঠেকানোর চেষ্টা করে।
কোভিড সারিয়ে উঠেছেন এমন রোগীর শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েই থাকে। যাকে বলে প্রাইমারি ইমিউন রেসপন্স। এর ওপর ভ্যাকসিনের ডোজ পড়লে তখন টি-কোষ সক্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করে। টি-কোষ মেমরি সেল তৈরি করে যা ভাইরাল স্ট্রেনকে ভাল করে চিনে নিয়ে তাকে আটকানোর মতো ব্যবস্থা তৈরি করে। বি-কোষ ও টি-কোষ তখন একসঙ্গে মিলে অ্যাডাপটিভ ইমিউন রেসপন্স তৈরি করে শরীরে। মানে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আরও জোরদার হয়ে ওঠে।
টি-কোষের আবার নিজস্ব রিসেপটর থাকে(TCR) । এই রিসেপটরের কাজ হয় ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা সংক্রামক প্যাথোজেনকে চিহ্নিত করে তাদের ধ্বংস করা। তাই টি কোষকে বলে ঘাতক কোষ। এই কোষের কাজ হল ভাইরাল স্ট্রেন সহ গোটা সংক্রামিত কোষকেই নষ্ট করে ফেলা। কোভিড সারিয়ে ওঠা রোগীদের ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ পড়লেই এই সিস্টেমটা চালু হয়ে যায়। তাই একটি ডোজেও যা কাজ হবে, দুটি ডোজেও একই হবে।
ডাক্তারবাবুরা বলছেন, দেশে ভ্যাকসিনের পরিমাণ কম। উৎপাদন ও বিতরণ হতে সময় লাগবে। ২১ জুন থেকে আবার ১৮ ঊর্ধ্বদের সকলকেই বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেওয়ার ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেক্ষেত্রে ভ্যাকসিনের বিপুল ডোজ দরকার। তাই যতটা প্রয়োজন বাঁচিয়ে ব্যবহার করাই ভাল। যদি একটি ডোজেই একইরকম কাজ হয় এবং রোগ প্রতিরোধ শক্তি গড়ে ওঠে, তাহলে বাড়তি ডোজের দরকার নেই। অন্য কোনও মুমূর্ষু রোগীর জন্য সেই ডোজ বাঁচিয়ে রাখা যেতে পারে।