
আলুর মতো দেখতে গ্রহের বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্প! পৃথিবী থেকে দু’হাজার আলোকবর্ষ দূরে
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সালটা ২০১৪। আমাদের সৌরমণ্ডল থেকে ১৮০০ আলোকবর্ষ দূরে এক পাথুরে গ্রহের খোঁজ পান মহাকাশবিজ্ঞানীরা। ভিন গ্রহের সন্ধানে মহাকাশে তাক করেই বসে আছে নাসার হাবল টেলিস্কোপ। তাতেই ধরা পড়ে এবড়ো খেবড়ো পাথুরে এক গ্রহ গনগনে আঁচ নিয়ে তার নক্ষত্রের চারপাশে ঘুরে চলেছে। চমকটা সেখানে নয়। আসল চমক হল পৃথিবীর থেকে আড়েবহরে বড় তো বটেই, বৃহস্পতির থেকেও ভারী এই গ্রহ দেখতে ঠিক আলুর মতো। এত ওজনদার এই গ্রহ পৃথিবীর থেকেও দ্রুত তার নক্ষত্রের চারপাশে পাক খেয়ে চলেছে।
এক্সোপ্ল্যানেটের খোঁজে গত ২০ বছর ধরে কাজ করে চলেছেন বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা। হাজারখানেক এমন গ্রহের সন্ধানও মিলেছিল। তবে ২০০৯-এ নাসার কেপলার অভিযান শুরু হলে মাত্র চার বছরেই আরও সাড়ে তিন হাজার ভিনগ্রহের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। তাদের বিচিত্র গল্প, অজানা রহস্য। বিজ্ঞানীরা বলছেন, আলুর মতো দেখতে সেই ভিন গ্রহ সুপার-জুপিটার গোত্রীয়। অর্থাৎ যে এক্সোপ্ল্যানেট বা ভিন গ্রহরা বৃহস্পতির মতোই বা তার থেকেও বড় ও ওজনদার। এদের নক্ষত্রও আকারে ওজনে সূর্যের থেকে বেশি। মজার ব্যাপার হল, পৃথিবী যেখানে ৩৬৫ দিনে সূর্যের চারদিকে পাক খেয়ে আসে, এই গ্রহ সেখানে মাত্র ২২ ঘণ্টায় তার নক্ষত্রের চারপাশে পাক খায়।
২০১৪ সাল থেকেই এই গ্রহের দিকে নজর রেখে বসে আছেন বিজ্ঞানীরা। শুরুতে এমন সুপার-জুপিটারের খোঁজ মিলেছিল। এখন এর গতিপথ, বৈশিষ্ট্য, গ্রহের পরিমণ্ডলে কী কী আছে তার আভাসও পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এই ভিন গ্রহের নাম ওয়াস্প ১০৩বি। বৃহস্পতির মতো তার নক্ষত্র থেকে অতটা দূরে নয় ওয়াস্প ১০৩বি। বরং সেই ভিন গ্রহটি তার নক্ষত্রের খুব কাছেই রয়েছে। এত কাছে যে পৃথিবীর একটা দিনেই তার এক বছর হয়ে যায়! মানে, ওই ভিন গ্রহটি তার নক্ষত্রের চার পাশে পাক মারছে বনবন করে। অসম্ভব গতিবেগে।
পর্তুগালের ইউনিভার্সিটি অব পোর্তোর জ্যোতির্বিজ্ঞানী সুসানা ব্যারোস বলছেন, আমাদের বৃহস্পতির চেয়ে প্রায় দেড় গুণ বেশি ভারী ওয়াস্প ১০৩বি। এই গ্রহের পরিমণ্ডলে জলীয় বাষ্প জমে আছে। সোডিয়াম বা টাইটেনিয়াম অক্সাইড ও হাইড্রজেন সায়ানাইড আছে। যে দিকটা তার নক্ষত্রের উল্টো দিকে থাকে সব সময়, সেই দিকটা তুলনায় ঠান্ডা হওয়ায় সেখানকার বায়ুমণ্ডলের ওপরের স্তরে জলীয় বাস্প জমে। মেঘের জন্ম হয়। সেই মেঘ ভেসে বেড়ায়।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এমন আজব গ্রহের হদিশ এর আগে মেলেনি। চেহারায় বৃহস্পতির মতো গ্যাসে ভরা গ্রহগুলি সাধারণত তার ওপর পড়া আলোর ৪০ শতাংশের প্রতিফলন ঘটায়। ফলে উজ্জ্বলতা কম হলেও সেই গ্রহগুলিকে আলো ঠিকরোতে দেখা যায়। কিন্তু এই গ্রহ তেমন নয়।
ওয়াস্প গ্রহরা বারে বারেই চমকে দিয়েছে
আগুনে গ্রহ ‘ওয়াস্প-৭৬বি’। পৃথিবী থেকে ৬৪০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে এই গ্রহের পরিবেশ পৃথিবীর আদিকালের মতো। উত্তপ্ত গ্যাসীয় পিণ্ড। গনগনে তেজ। আর আবহাওয়ায় এ কী বৈচিত্র! ঝড় বইছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। তাপমাত্রার পারদ উঠছে ২৪০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আকাশ থেকে নেমে আসছে আগুনে বৃষ্টি। মেঘ ভেঙে টুপটাপ ঝড়ে পড়ছে গলিত লোহা। আবার রাত নামলেই হিমশীতল নিস্তব্ধতা। এই গ্রহের খোঁজ পায় ইউরোপ সাদার্ন অবজারভেটরির ‘ভেরি লার্জ টেলিস্কোপ’। বিজ্ঞানীরা বললেন, এই গ্রহের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল এর একটা দিকই তার নক্ষত্রের দিকে মুখ করে থাকে। তাই এর এক পিঠে সবসময় দিন, অন্য পিঠে ঘন আঁধার। তাপমাত্রাও তাই গ্রহের সবদিকে সমান নয়। এই ধরনের গ্রহকে জ্যোতির্বিজ্ঞানের ভাষায় বলে ‘Tidally-locked planets’। প্রবল হাওয়ার স্রোত বইছে এলোমেলো, গতি ১১ হাজার এমপিএইচের (১৮,০০০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা) কাছাকাছি। হাওয়ার সঙ্গেও ছুটছে ধাতব উপাদান। চক্রাকারে ঘূর্ণিঝড়ের চেহারা নিচ্ছে।
পৃথিবী থেকে ৮৮০ আলোকবর্ষ দূরে এক নক্ষত্রের পরিবার আছে যার নাম ‘ডব্লিউএএসপি-১২১’। এই ঠিকানায় এমন এক ভিনগ্রহ রয়েছে যেখানে পৃথিবীর মতো বায়ুমণ্ডল আছে। গ্রহের নাম ওয়াস্প ১২১-বি।
এই গ্রহের বায়ুমণ্ডলে ট্রোপোস্ফিয়ার আছে, তার ওপরে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার আছে। সেখানে আবার জলীয় বাষ্পও জমে আছে। মহাজাগতিক বিকিরণ এই গ্রহের বায়ুমণ্ডলকে ছিঁড়েখুঁড়ে দিতে পারেনি। পুরু হয়ে জড়িয়ে রয়েছে গ্রহকে। তার মানে কি চুপি চুপি প্রাণের জন্ম হয়েছে গ্রহের গর্ভে? আশায় বুক বেঁধে রয়েছেন বিজ্ঞানীরা।