
দ্য ওয়াল ব্যুরো: আমেরিকা, রাশিয়ার পরে ‘ড্রাগনের দেশ’ চমক দেখিয়েছে। মঙ্গলে নামার কিছুদিন পরেই পৃথিবীর কক্ষে স্পেস স্টেশন বানানোর তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে চিন। তিন নভশ্চরকে তড়িঘড়ি তদারকি করতে পাঠিয়েও দেওয়া হয়েছে। চিন যা করছে, তার পরিকল্পনা অনেকদিন আগেই করেছে ভারত। গগনযান মিশনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল সে কারণেই। পৃথিবীর কক্ষে পাক খেয়ে দেখেশুনে খবর আনবে গগনযান। কারণ পৃথিবীর সর্বনিম্ন কক্ষপথে একটা আস্ত বাড়ি বানানোর পরিকল্পনা আছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা তথা ইসরোর। আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের মতো ভারতেরও নিজস্ব স্পেস স্টেশন তৈরি হবে মহাকাশে। তার প্রস্তুতি দীর্ঘ সময় ধরেই চলছে।
কোভিড মহামারী ও লকডাউনের কারণে গগনযান মিশন পিছিয়ে গেছে। ইসরোর স্পেস স্টেশন তৈরির পরিকল্পনাও থমকে গেছে। কিন্তু এই মিশন পুরো হবে বলেই জানিয়েছিলেন ইসরো প্রধান কে শিবন। পৃথিবী থেকে যে নভশ্চররা মহাকাশে যাবেন তাঁরা এই স্পেস স্টেশনেই বিশ্রাম নেবেন। সেখান থেকেই রকেটে চেপে পাড়ি দেবেন চাঁদে বা অন্য গ্রহে। একদিকে যেমন জ্বালানীর সাশ্রয় হবে, তেমনি পৃথিবী থেকে এত বেশি রসদ বয়ে নিয়ে যেতে হবে না। স্পেশ স্টেশনে সব ব্যবস্থাই পাকা থাকবে।
![Space Ambitions | Steps To Take Before India Has Its Own Space Station]()
কেমন হতে পারে ভারতে স্পেস স্টেশন?
চিনেরটা আগে জানা যাক। মহাকাশ স্টেশন বানানোর জন্য চিন পরীক্ষামূলকভাবে প্রথম উপগ্রহটি মহাকাশে পাঠিয়েছিল বেশ কয়েকবছর আগে। তার নাম ছিল- ‘তিয়াংগং-১’। তার কাজকর্ম শেষ হয়ে গেলেও সেটি এখনও পৃথিবীর চার পাশে চক্কর মারছে। দ্বিতীয় উপগ্রহ ‘তিয়াংগং-২’ মহাকাশে পাড়ি দেয় ২০১৬ সালে। যা আদতে উপগ্রহ হলেও আগামী দিনে চিনা মহাকাশ স্টেশনেরই একটি প্রোটো-টাইপ। যাতে মহাকাশচারীরা থাকবেন। কোনও মহাকাশযান গিয়ে সেখানে নামতেও পারবে। ২০২২ সালের মধ্যেই এই স্পেস স্টেশন জালু হয়ে যাবে। কাজকর্ম দেখতে তিন নভশ্চরকে পাঠিয়ে দিয়েছে চিনের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা। এর দৈর্ঘ্য হবে ১৫ মিটার বা ৪৯ ফুটের কিছু বেশি। মানে প্রায় পাঁচ তলা বাড়ির সমান।
ভারতের মহাকাশ স্টেশন শুরুতেই এত বড় হবে না। কাজ এগোবে ধাপে ধাপে। ওজন হবে ২০ টনের মতো। ভেতরে প্রাথমিকভাবে তিনটে ঘর থাকবে। তিনজন নভশ্চরের থাকার মতো জায়গা থাকবে। নিজেদের স্পেস স্টেশনে বসেই বিভিন্ন পরীক্ষা করতে পারবেন মহাকাশচারীরা। প্রয়োজনে ১৫-২০ দিন টানা থাকতে পারবেন। ইসরোর পরিকল্পনা ছিল, গগনযান মিশন সফল হলে ২০৩০ সালের মধ্যেই স্পেস স্টেশন বানানোর কাজ সম্পূর্ণ করা যাবে।
এখন স্পেস স্টেশন তো হঠাৎ করে বানানো যায় না। তার জন্য আগাম প্রস্তুতি লাগে। পৃথিবীর কক্ষে কোন জায়গায় স্পেস স্টেশন বসবে, আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের সঙ্গে যেন দূরত্ব থাকে, সেসব দেখে তবেই কাজ শুরু হবে। এর জন্য ইসরো ঠিক করেছে, দুটি রকেটকে আগে পাঠিয়ে হাল হকিকত জেনে নেওয়া হবে। পিএসএলভি রকেটে চাপিয়ে দুটি উপগ্রহ যাবে মহাকাশে। পৃথিবীর কক্ষপথে ঘুরতে ঘুরতেই স্পেস স্টেশন বানানোর জায়গা বের করে ফেলবে তারা। এর পর শুরু হবে বাড়ি বানানোর প্রক্রিয়া। মহাশূন্যে সবকিছুই ভর-শূন্য দশায় থাকে। অর্থাৎ মাইক্রোগ্র্যাভিটি (মাধ্যাকর্ষণের প্রভাব যেখানে নেই) কাজ করে। কাজেই সব দিক ভেবেচিন্তে, বিচারবিবেচনা করেই নকশা বানাতে হবে উপগ্রহ দুটিকে। এই কাজকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে গগনযান। প্রথমে ‘আনম্যানড মিশন’ হবে অর্থাৎ শুধু মহাকাশযান পাঠানো হবে। পরে বায়ুসেনার তিন প্রশিক্ষিত অফিসারকে নিয়ে উড়ে যাবে গগনযান। শূন্য মাধ্যাকর্ষণে কেমনভাবে কাজ করা হবে সে খবর তাঁরা নিয়ে আসবেন মহাকাশ থেকে। গগনযানের ভিতরেও ওজন-শূন্য অবস্থায় থাকবেন মহাকাশচারীরা। সেই সময় তাঁদের অভিজ্ঞতা কেমন, বেঁচে থাকার জন্য তাঁদের কেমন রসদই বা দরকার তার খুঁটিনাটি জানতে পারবে ইসরো।
আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (আইএসএস) রয়েছে পৃথিবী থেকে বড়জোর ৩৭০ কিলোমিটার উপরে। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা (NASA), রাশিয়ার রসকসমস (Roscosmos), জাপানের জাক্সা (JAXA), ইউরোপের ইসএ (ESA) এবং কানাডার সিএসএ (CSA)—এই পাঁচটি মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রের সম্মিলিত চেষ্টায় ১৯৯৮-২০১১ সালের মধ্যে গড়ে উঠেছিল আইএসএস। ভারতের স্পেস স্টেশন তৈরিতেও সাহায্য করবে নাসা ও রাশিয়ার রসকসমস। মহাকাশ গবেষণায় এখনই জোট বেঁধেছে নাসা ও ইসরো। আগামী দিনে আরও বৃহত্তর পরিকল্পনা আছে তাদের।