
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বধিরতা বাড়ছে। কানের সমস্যা প্রাপ্তবয়স্কদের শুধু নয়, শিশুদের মধ্যেও বেড়ে চলেছে। জন্মগত ত্রুটি, জটিল রোগ, সংক্রমণ জনিত রোগ, শব্দদূষণ থেকে লাইফস্টাইল ডিজিজ—এর ভয়ঙ্কর পরিণতি দেখে রীতিমতো উদ্বেগে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) বলছে, আগামী ৩০ বছরের মধ্যে বিশ্বের প্রায় ৯০ কোটির বেশি মানুষ কানের সমস্যায় ভুগবেন। ৬০ শতাংশ শিশু শ্রবণ প্রতিবন্ধকতার শিকার হবে।
কেন এমন হবে? হু-র বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কানের সমস্যা আমল দিতে চান না অনেকেই। প্রথমত যদি শিশুদের কথা ধরা হয়, তাহলে দেখা যাবে বিশ্বে ৩ কোটির বেশি শিশুর শ্রবণ প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। সেটা হতে পারে জন্মগত ত্রুটির কারণে বা কোনও জেনেটিক রোগ বা পরে হওয়া কোনও জটিল রোগের কারণে। বাচ্চারা কানে শুনেই কথা বলতে শেখে। যদি কানে শব্দ না পৌঁছয়, তাহলে কথা বলতেও শিখবে না শিশুরা। এখনকার সময় এমন জটিলতা দেখা যাচ্ছে অনেক শিশুরই। অথচ বাবা-মায়েরা এ ব্যাপারে সচেতন নন।
সমীক্ষায় এমনও দেখা গেছে, প্রতি ১০০ জন শিশুর মধ্যে চার থেকে পাঁচ জন স্বাভাবিকভাবে কানে শুনতে পায় না। বয়স ২ বছরের বেশি হলে যদি টাইফয়েড, এনকেফেলাইটিসের মতো রোগ হয়, তাহলেও কানের সমস্যা হতে পারে। অন্তঃকর্ণের রোগ হওয়াও অস্বাভাবিক নয়। সেক্ষেত্রে দেরি হওয়ার আগেই ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। গর্ভাবস্থায় মায়ের সংক্রমণজনিত রোগ হলে বা চিকেন পক্স, হাম অথবা কোনও ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াজনতি রোগ ধরা পড়লে তা শিশুর শরীরেও প্রভাব ফেলতে পারে। সচেতন হতে হবে আগে থেকেই।
শ্রবণ শক্তি কমে যাওয়ার আরও একটা কারণ হল শব্দদূষণ। শুধু বাইরের শব্দই নয়, ঘরের ভেতরেও শরীরের ওপর নানাভাবে অত্যাচার করি আমরা। বিশেষত, কানে হেডফোন গুঁজে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটানো। রাতে শোওয়ার সময় একটানা লাউড ভলিউমে গান বা সিনেমা, ল্যাপটপ-মোবাইল-ট্যাবে অডিও-ভিডিও কনফারেন্স, হেডফোন লাগিয়ে কথাবার্তা ইত্যাদির কারণে কানের ভেতরের সিস্টেমটাই বদলে যায়। মোবাইলের রেডিয়েশন কানে গিয়ে শোনার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। যে কারণে শরীরের ভারসাম্য বিগড়ে যায়, মাথা ধরা, মাইগ্রেন, স্ট্রেস, মেজাজ খিটখিটেও হয়ে যেতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, মোবাইল বা ল্যাপটপ থেকে ছোট ছোট রেডিয়েশন বের হয়, যাকে বলে মাইক্রোওয়েভ। যেহেতু হেডফোন কানে টাইট করে লাগানো থাকে, তাই সরাসরি সেই মাইক্রোওয়েভ মাথার কোষে গিয়ে আঘাত করে। শ্রবণ শক্তি কমে শুধু নয়, আগামী দিনে স্মৃতিশক্তির ওপরেও জোরালো আঘাত হানতে পারে এই অভ্যাস। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লাইফস্টাইল ম্যানেজমেন্ট সবচেয়ে আগে দরকার। যে কোনও অসুখের ক্ষেত্রেই ঠিক সময়ে যেমন চিকিৎসা দরকার, কানেরও তাই।
কানের সমস্যার আরও একটা কারণ হল সংক্রমণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেফটিপিন বা কাঠি দিয়ে কান তো খোঁচাবেনই না, ইয়ার বাডও ব্যবহার করতে বারণ করছেন বিশেষজ্ঞরা। আজকাল বাজার চলতি অনেকরকম ইয়ার বাড বেরিয়েছে। কিন্তু অসাবধানতায় কানের ভিতর অধিক খোঁচাখুঁচিতে বিপদ হতে পারে। এগুলো থেকে সংক্রমণও ছড়ায়। কটন বাডের তুলো অসাবধানতায় কানে ঢুকে গিয়ে মৃত্যুও ডেকে আনতে পারে। কটন বাডসের খোঁচা কানের অডিটরি লোবকে উত্তেজিত করে। কানের তরুণাস্থি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ফলে শ্রবণশক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। অনেক সময়ই অস্ত্রোপচারের সাহায্য নিতে হয় এমন বিপদে।
ইয়ারফোন থেকেও কানে সংক্রমণ ছড়াতে পারে। নিজের ইয়ারবাড আলাদা বাক্সে বা প্যাকেটে ভরে ব্যবহার করুন, কারও সঙ্গে শেয়ার না করাই ভাল। কানের বাড ও তার ব্যবহার নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ঘন ঘন ইয়ার বাড ব্যবহার করার নেশায় ফি বছর গোটা বিশ্বে মৃত্যু হয় সাত হাজারের বেশি মানুষের। সমীক্ষায় উঠে এসেছে, প্রায় ৩৬ শতাংশ মানুষ এই অভ্যাসের ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে অবগত। প্রায় ২৯ শতাংশ মানুষ জেনেশুনে কানের বাড ব্যবহার করে কানের পর্দার নানা ক্ষতি করেছেন।