
দ্য ওয়াল ব্যুরো: অবশেষে ছাড়পত্র মিলল।
অক্সফোর্ড টিকা তথা সেরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি কোভিশিল্ড ও ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিনের পরে তৃতীয় টিকা হিসেবে রাশিয়ার স্পুটনিক ভি-তে সম্মতি দিল কেন্দ্রীয় ড্রাগ নিয়ামক সংস্থার অধীনস্থ সাবজেক্ট এক্সপার্ট কমিটি। সূত্রের খবর, টিকার সেফটি ট্রায়ালের সব রিপোর্ট খতিয়ে দেখেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
কোভিড সংক্রমণ বেড়েই চলেছে দেশে। দৈনিক সংক্রমণ ১ লাখ ৬৮ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে টিকাকরণে গতি আনাই লক্ষ্য কেন্দ্রীয় সরকারের। দেশে এখন কোভিশিল্ড ও কোভ্যাক্সিন–এই দুই টিকাই চালু রয়েছে। তার মধ্যে আবার ভ্যাকসিনের ডোজ কম পড়ছে বলে অভিযোগ করেছে অনেক রাজ্যই। মহারাষ্ট্রে কোভিশিল্ড ও কোভ্যাক্সিন টিকার ভাঁড়ারে টান পড়েছে বলে কদিন আগেই দাবি করেছিল সে রাজ্যের সরকার। তাছাড়া, দেশে চার দফায় টিকাকরণে যতজনকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সরকারের তাতে দুটি করে ডোজ দিলে বিপুল পরিমাণ ভ্যাকসিনের জোগান থাকা দরকার। তাই তৃতীয় টিকা হিসেবে রুশ টিকাকে ছাড়পত্র দেওয়া যায় কিনা সে নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছিলই। টিকার ডোজ কতটা কার্যকরী, স্বেচ্ছাসেবকদের শরীরে কেমন প্রভাব ফেলছেস সে ব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়ার পরেই টিকায় ছাড়পত্র দেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল।
রাশিয়ার স্পুটনিক ভি টিকার ট্রায়াল চালাচ্ছিল হায়দরাবাদের ভ্যাকসিন নির্মাতা সংস্থা ডক্টর রেড্ডিস ল্যাবরেটরি। সংস্থার তরফে জানানো হয়েছিল, এই টিকার ট্রায়ালের ফল বেশ ভাল। গত ১ এপ্রিল ডক্টর রেড্ডিসের ভ্যাকসিন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক করেছিল কেন্দ্রীয় ড্রাগ নিয়ামক সংস্থার অধীনস্থ ‘সাবজেক্ট এক্সপার্ট কমিটি’ (এসইসি)। রুশ টিকার সেফটি ট্রায়াল ও স্বেচ্ছাসেবকদের শরীরে এই টিকার ডোজের প্রভাব কেমন, সে বিষয়ে খুঁটিনাটি তথ্য জমা করতে বলা হয়েছিল রেড্ডিস ল্যাবকে। সেই তথ্য খতিয়ে দেখেই আজ টিকাতে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
স্পুটনিক টিকা তৈরি করেছে রাশিয়ার গ্যামেলিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউট। রাশিয়ার ডাইরেক্ট ইনভেস্ট ফান্ডের তত্ত্বাবধানে ভারতে এই টিকার উৎপাদন ও বিতরণের জন্য চুক্তি হয়েছে ডক্টর রেড্ডিস ল্যাবরেটরির সঙ্গে। রুশ টিকার নির্মাতা সংস্থা গ্যামেলিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব এপিডেমোলজি অ্যান্ড মাইক্রোবায়োলজি-র ডিরেক্টর অলেক্সান্ডার গিন্টসবার্গ দাবি করেছেন, স্পটনিক ভি টিকা টানা দু’বছর করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষা দিতে পারবে। তাঁর বক্তব্য, ইবোলার টিকা যেভাবে তৈরি হয়েছিল, স্পুটনিক ভি-ও অনেকটা সেভাবেই তৈরি। তবে করোনার টিকা আরও বেশি শক্তিশালী। গিন্টসবার্গের কথায়, সরাসরি করোনার স্পাইক প্রোটিন ব্যবহার না করে অন্য ভাইরাসের সঙ্গে আরএনএ প্রোটিন মিলিয়ে ভ্যাকসিন ক্যানডিডেট ডিজাইন করা হয়েছে। সর্দি-কাশির জন্য দায়ী যে অ্যাডেনোভাইরাস, তাকেই ভেক্টর হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। এই অ্যাডেনোভাইরাস মামুলি সর্দি-জ্বর ছড়ায়, প্রাণঘাতী সংক্রমণ ছড়াতে পারে না। অ্যাডেনোভাইরাসকে নিষ্ক্রিয় করে তার মধ্যে করোনার স্পাইক (S) প্রোটিন মিশিয়ে ভ্যাকসিন তৈরি হয়েছে। ভাইরোলজিস্টরা জানিয়েছেন, করোনার যে আরএনএ প্রোটিন স্ক্রিনিং করা হয়েছে তাকে আগে নিষ্ক্রিয় করে নেওয়া হয়েছে বিশেষ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে, যাতে এই ভাইরাল স্ট্রেন শরীরে ঢুকলে প্রতিলিপি তৈরি করে সংখ্যায় না বাড়তে পারে।
স্পুটনিক টিকা কতটা কার্যকরী সে বিষয়ে রিপোর্ট সামনে আনে বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় মেডিক্যাল জার্নাল ‘দ্য ল্যানসেট’। এই টিকা ৯১.৮% কার্যকরী বলে রিপোর্ট পেশ করেছে ল্যানসেট।