
দ্য ওয়াল ব্যুরো: লাদাখ সীমান্তে গত বছর জুন মাসে ভারত-চিন সেনার মুখোমুখি সংঘর্ষের পর থেকে দুই দেশের মধ্যে মোট ৯ দফা বৈঠক হয়েছে। কিন্তু এর পরেও প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় চিনের লাল ফৌজের তৎপরতা কমেনি বলেই খবর। শেষবার চুসুল সীমান্তে সেনা কম্যান্ডার পর্যায়ের বৈঠকের পরেও কোনও রফাসূত্র বের হয়নি। সেনা পিছনোর (ডিসএনগেজমেন্ট)কোনও ইচ্ছাই দেখা যাচ্ছে না চিনের বাহিনীর মধ্যে। বরং ভারতীয় সেনা সূত্র জানাচ্ছে, সীমান্তে আরও বেশি সংখ্যক সেনা মোতায়েন করছে লাল ফৌজ। মিসাইল, রকেট সহ সামরিক সরঞ্জাম নিয়ে নতুন করে আগ্রাসনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলেও খবর।
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৩৪৮৮ কিলোমিটার জুড়ে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা তথা এলএসি বরাবর সেনার সংখ্যা আরও বাড়চ্ছে চিন। সেনার বিন্যাসও বদলাচ্ছে তারা। সেই সঙ্গেই আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র মোতায়েন করার কাজ চলছে। ভারতের বাহিনী খবর দিয়েছে, নতুন করে রাইফেল ডিভিশন মোতায়েন করছে চিনের লাল সেনা। হাউইৎজার কামান সাজাতে দেখা গিয়েছে তাদের। ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপ করা যায় এমন মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করছে চিনের সেনা। অন্তত সাড়ে তিনশো যুদ্ধ ট্যাঙ্ক তারা নিয়ে এসেছে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর। টাইপ-৯৯ এর মতো আধুনিক যুদ্ধ ট্যাঙ্কও রয়েছে তাদের সঙ্গে।
ভারতের সেনা সূত্র জানাচ্ছে, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরত্বে পিপলস লিবারেশন আর্মির ২০টি সাজোঁয়া গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। স্প্যানগুর সো-র কাছে নতুন করে মিসাইল ও রকেট মোতায়েন করছে লাল সেনা। লাসার কাছে পিএলএ-র ক্যাম্পের কাছে সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল বসানো হচ্ছে। অন্যদিকে, তিব্বত রেঞ্জেও মিসাইল মোতায়েন করছে চিনের বাহিনী। মুখোমুখি অবস্থান থেকে সেনা সরানো (ডিসএনগেজমেন্ট) অথবা সেনা পিছনোর (ডি-এসক্যালেশন) কোনও সদিচ্ছাই নেই লাল সেনার। তাদের হাবভাবেই এটা স্পষ্ট। উল্টে পাহাড়ি ফিঙ্গার এলাকার দখল নিতে মরিয়া চিনের বাহিনী। ফিঙ্গার পয়েন্ট ৪ এলাকার দুই দিকেই ১৮ হাজার ফুট উচ্চতায় নতুন করে সেনা মোতায়েন শুরু করেছে চিন। প্রায় ২০০ সেনাকে তারা সরিয়ে এনেছে ফোর-ফ্রন্টে। ভারতীয় বাহিনীর মুখোমুখি যুদ্ধ-ট্যাঙ্ক বসিয়ে সেনার সংখ্যা বাড়িয়ে চলেছে চিন।
গত ২৯-৩০ অগস্ট থেকে শুরু করে ৭ সেপ্টেম্বর অবধি প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা তথা এলএসি বরাবর চারটি চিনা আগ্রাসনের ঘটনা ঘটেছে। সেনা সূত্র জানাচ্ছে, ৪৫ বছরের রীতি ভেঙে শূন্যে প্রায় ২০০ রাউন্ট গুলিও ছুড়তে দেখা গেছে চিনের সেনাকে। প্যাঙ্গং লেকের উত্তরে ফিঙ্গার পয়েন্ট ৩ ও ফিঙ্গার পয়েন্ট ৪ এর মাঝে এই ঘটনা ঘটেছে। ভারতীয় নিয়ন্ত্রণাধীন পাহাড়ি এলাকা দখলের চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় আরও আগ্রাসী হয়ে উঠেছে লাল সেনা। প্যাঙ্গং লেকের দক্ষিণে চুসুল সেক্টরে এখন দুই দেশের বাহিনীর মধ্যে ব্যবধান ৩০০ মিটারেরও কম। ফিঙ্গার ৪ থেকে ফিঙ্গার ৮ পর্যন্ত চারটি পয়েন্টে এখনও চিনের বাহিনী বসে রয়েছে। ফিঙ্গার পয়েন্ট ৪ এর উঁচু পাহাড়ে ভারতীয় সেনা মোতায়েন থাকলেও পাহাড়ের পাদদেশে যুদ্ধ-ট্যাঙ্ক নিয়ে এগিয়ে এসেছে চিনের বাহিনী।