
দ্য ওয়াল ব্যুরো: গ্রামীণ মানুষদের বাড়তি রোজগারের নতুন দিশা দেখাচ্ছে সরকারি প্রকল্প। গবাদি পশুপালন, বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণেই হতে পারে বাড়তি আয়। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সঙ্গে বাড়ছে চাহিদাও। চাহিদাপূরণে জোগান বাড়াতে উৎপাদন হচ্ছে কৃত্রিম উপায়ে। ফলে একদিকে যেমন খাবারের এই কৃত্রিমতায় পুষ্টিগুণ কমে যাচ্ছে, অন্যদিকে রাসায়নিক সারের প্রয়োগে অসুখবিসুখও বাড়ছে। তাই অর্গ্যানিক ফার্মিং-এ বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে। এই পথেই চাষআবাদ ও বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণে জোর দিতে কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রকের অধীনে গোবর্ধন স্কিম চালু করা হয়েছে।
স্বচ্ছ ভারত মিশন প্রকল্পের অধীনেই ২০১৮ সালে এই নতুন যোজনার কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। এই যোজনার অনেকগুলো দিক আছে। গবাদি পশুপালন, অর্গ্যানিক চাষাআবাদ এবং জৈব বর্জ্য থেকে বায়োগ্যাস তৈরি। এই সমস্ত বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পেতে নতুন পোর্টালও খোলা হয়েছে। কীভাবে গ্রামীণ মানুষরা এই নতুন যোজনা থেকে রোজগার করতে পারেন সে বিষয়ে বিস্তারিত লেখা আছে সেই পোর্টালে।
কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান বলেছেন, গোবর্ধন স্কিম থেকে আগামী পাঁচ বছরে এক লক্ষ কোটি টাকা বাড়তি আয় হতে পারে চাষিদের। সেটা কীভাবে? প্রথমত, কোনও রকম কৃত্রিম ও রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার না করে জৈব পন্থা অবলম্বন করে চাষবাস হতে পারে। এখন বাজারে সবচেয়ে বেশি চাহিদা অর্গ্যানিক উপায়ে চাষ করা ফল, আনাজ, হার্ব, মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, মধু ইত্যাদির। দ্বিতীয়ত, কোয়েল, মুরগি থেকে শুরু করে গরু প্রতিপালনও করা যায় এইভাবে। অ্যানিমাল হাজব্যান্ড্রি ও পোলট্রি থেকেও বাড়তি রোজগারের সম্ভাবনা আছে। গরুর দুধ থেকে ঘি, মাখন যেমন তৈরি করা যায়, তেমনই গোবর ব্যবহার করা হয় জৈব সার তৈরি করতে এবং গোমূত্র কীটনাশক হিসেবে।
তৃতীয়ত, ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট। অর্গ্যানিক চাষের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হল বর্জ্যর ব্যবহার। জৈব বর্জ্য হলে তা সহজেই প্রকৃতিতে মিশে যায়। ফলে তা দিয়ে সার তৈরিও সহজ। কিন্তু শহুরে বর্জ্যের অনেকটাই প্লাস্টিক, সে ক্ষেত্রে ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট জরুরি। এমন অনেক সংস্থা আছে, যারা প্রত্যেক দিন বর্জ্য সংগ্রহ করে। তার পরে তা থেকে কৃত্রিম এবং প্রাকৃতিক বর্জ্য পৃথক করা হয়। এই ওয়েস্ট সেগ্রেগেশনের পরে পচনশীল জৈব বর্জ্য থেকে বায়োগ্যাস এবং সার তৈরি করা হয়। এই জন্য বায়োগ্যাসের প্ল্যান্ট আছে অনেক জায়গাতেই। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান বলেছেন, এই সমস্ত বায়োগ্যাসের প্ল্যান্ট সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে তৈরি হবে। ছোট ছোট সংগঠনগুলিকে যুক্ত করা হবে। এতে উপকৃত হবেন চাষিরা। বহু মানুষের কর্মসংস্থান যেমন হবে তেমনি উপার্জনও বাড়বে।
আরও একটি পদ্ধতিতে আয় বাড়তে পারে এই নতুন যোজনায়। যেমন, কৃষি থেকে তৈরি নানা উপজাত দ্রব্য বিকল্প পদ্ধতিতে ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন আখ থেকে ইথানল তৈরি হতে পারে। চাষের পরে আখ থেকে চিনি উৎপাদনের পরে অতিরিক্ত আখ ইথানল তৈরির কাজেও লাগবে। পেট্রোলের সঙ্গে এখন ১০ শতাংশ ইথানলও মেশানোও যায়।
সুতরাং, গোবর্ধন স্কিমে একদিকে যেমন পরিচ্ছন্নতার ওপরে জোর দেওয়া হবে তেমনি অন্যদিকে চাষাবাস, পশুপালন, বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণেও নতুন পথের সূচনা হবে।