
শুক্রবার রাতেই দিল্লির পালাম বিমানবন্দরে এসে পোঁছায় ৪০ জওয়ানের কফিন। সেই কফিনে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী। তার আগে কাশ্মীরেই কফিনে কাঁধ দেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং। দিল্লির পালাম বিমানবন্দরের বাইরে রাতেই জড়ো হয়েছিলেন কাতারে কাতারে মানুষ। শেষ শ্রদ্ধা জানাতে। তাঁরা কেউ চেনেন না জওয়ানদের। কিন্তু জানেন, দেশের লোকেরা যাতে নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারেন, সে জন্যই সীমান্তে প্রাণপাত করেন এই জওয়ানরা। তাই তাঁদের শেষ শ্রদ্ধা জানানোর আবেগ বাঁধ মানেনি।
পালাম বিমানবন্দর থেকে নিজের নিজের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেয় নিথর জওয়ানদের কফিন। সকাল ৭টা নাগাদ উত্তরপ্রদেশের উন্নাওতে এসে পৌঁছয় অজিত কুমার আজাদের মরদেহ। ৩৫ বছরের অজিতের স্ত্রী ও দুই মেয়ে রয়েছে। গোটা গ্রাম ভেঙে পড়ে তাদের বীর সন্তানকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে। বাড়ি থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে গঙ্গার ঘাটে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষকৃত্য হবে তাঁর।
সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ বারাণসীর কাছের এক গ্রাম তোফাপুরে এসে পৌঁছয় রমেশ যাদবের মৃতদেহ। বারাণসী থেকেই রাস্তার দু’ধারে দাঁড়িয়ে লোক। জাতীয় পতাকা উড়িয়ে, স্যালুট করে শ্রদ্ধা জানালেন এই বীর জওয়ানকে। জয়পুরের গোবিন্দপুরাতেও আসে রোহিতেশ লাম্বার কফিন। মাত্র এই ডিসেম্বরেই মেয়ে হয়েছে তাঁর। মেয়ের মুখ দেখার আগেই শহিদ হয়ে গেলেন রোহিতেশ। সকাল ৮টা ৪০ নাগাদ তাঁর মরদেহ এসে পৌঁছলে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে ভেঙে পড়েছে গোটা জয়পুর।
অ্যাসিস্টান্ট সাব-ইন্সপেক্টর মোহন লাল আবার কনভয়ে ছিলেন না। তিনি ছিলেন আর.ও.পি অর্থাৎ রোড ওপেনিং পার্টির সদস্য। তাঁর দায়িত্ব ছিল, কনভয়ের একেবারে সামনে সামনে থেকে গোটা বাহিনীকে পথ দেখিয়ে নিয়ে চলার। তিনিও শহিদ হয়েছেন গুলি বিনিময়ে। তাঁর মরদেহ এ দিন সকালে দেহরাদুনে এসে পৌঁছলে উত্তরাখন্ডের মুখ্যমন্ত্রী ত্রিবেন্দ্র সিং রাওয়াত গিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানান।
আর কিছুক্ষণের মধ্যে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছাবে বাংলার দুই বীর শহিদ বাবলু সাঁতরা ও সুদীপ বিশ্বাসের কফিন। তাঁদের শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য বিমানবন্দরের বাইরেই জড়ো হয়েছেন অনেকে। সেখানে প্রস্তুত রয়েছে সিআরপিএফের দুটি গাড়ি। একটি গাড়িতে করে বাবলুর দেহ হাওড়ার বাউরিয়ার চককাশী রাজবংশী পাড়ায় এসে পৌঁছবে। অন্য গাড়িটি সুদীপের মরদেহ নিয়ে যাবে নদিয়ার পলাশিপাড়াতে।
বাবলু ও সুদীপ, দু’জনের বাড়ির সামনেই সকাল থেকে লোকে লোকারণ্য। ব্যারিকেড করতে হয়েছে। তবে সংযত সেই ভিড়। হাতে ভারতের তেরঙ্গা নিয়ে তাঁরা অপেক্ষা করছেন মরদেহ আসার। কেউ তাঁদের আত্মীয় বা বন্ধু-বান্ধব নন। পরিচয়ও নেই। মরদেহও হয়তো কেউ দেখতে পাবেন না। কারণ মরদেহ বলতে হয়তো রয়েছে মাংসপিণ্ড। বাবলুর পরিবার যেমন শুধুমাত্র হাতের আংটি দেখে তাঁকে চিনতে পেরেছে।
তাতে কী? আসলে ওই কফিনটার মধ্যে তো আর শুধু বাবলু, সুদীপ, মোহন লাল, রমেশ, রোহিতেশ, অজিতরা ফিরে আসছেন না, ফিরে আসছে একটা গোটা দেশের বিশ্বাস, দায়িত্ব, কর্তব্য। তেরঙ্গার সম্মান অটুট রাখার বিশ্বাস। দেশকে রক্ষা করার দায়িত্ব। নিজের কর্তব্যের খাতিরে মৃত্যুবরণ করার সাহস। আর তাই এই বীর সেনানিদের জন্য আবেগ ঝরবে, তেরঙ্গা উড়বে, জয়ধ্বনি হবে, সেটাই তো স্বাভাবিক।