
দ্য ওয়াল ব্যুরো: কোথাও গাঢ় সবুজ। কোথাও বা হালকা। কোথাও আবার মধ্যে মধ্যে মিশে রয়েছে ধূসরতা। এই দিগন্ত-বিস্তৃত সবুজকে ছুঁয়ে রয়েছে নরম, সাদা মেঘের পুঞ্জ।
কেরলের ইড়ুক্কি জেলার মুন্নার ফরেস্টের চারপাশটা এমনই। চারিদিকে ঘন জঙ্গলের আবরণ। যাকে মুড়ে ফেলেছে ছোট-বড় পাহাড়ের নিসর্গ। ‘ঈশ্বরের আপন দেশে’ এই সৌন্দর্যের কোলে গড়ে উঠেছে একটি গ্রাম ‘ইড়ামালাক্কুড়ি’। সারা দেশ যখন করোনার কোপে সন্ত্রস্ত, তখন কেরলের এই একটিমাত্র গ্রামে তা সামান্য আঁচটুকু ফেলতে পারেনি। কোনও ঐশ্বরিক কৃপা নয়, বরং কোভিড-স্বাস্থ্যবিধির ব্যাকরণ মেনে পা ফেলেছেন এখানকার সমস্ত মানুষ। নিয়মমতো লকডাউন, বাইরে যাওয়া-আসা যতটা কমানো যায়, ততটা করে করোনা-শূন্য গ্রামের তকমা কুড়িয়েছে ইড়ুক্কির ছোট্ট পার্বত্য গ্রাম।
গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান পি কে জয়শ্রী। অতিমারীর হাত থেকে বেঁচে থাকার একগুচ্ছ টোটকার কথা জানিয়েছেন তিনি। তালিকার প্রথমেই রয়েছে প্রয়োজন বুঝে লকডাউন জারি। শহরে সংক্রমণ বাড়ার খবর পাওয়ামাত্র নিজেরা ঘেরাটোপে চলে গেছেন। সরকারি নির্দেশের অপেক্ষা করেননি। তখন কেউ বাইরে যেতে পারবে না। আবার বাইরে থেকে আসাও মানা।
কিন্তু এত কড়াকড়িতে কোনও সমস্যাও হয়নি। এমনিতে আদিবাসী-অধ্যুষিত এই গ্রামে হাজার তিনেক মানুষের বাস। জীবনযাত্রা স্বচ্ছল, স্বাভাবিক। কোনও বাড়তি চাহিদা নেই৷ খেতের কাজ করে যে মরশুমি ফসল ওঠে, তাতেই পরিবারের পেট চলে যায়। তা ছাড়া জলবায়ুও সমান স্বাস্থ্যকর। পাহাড়ের কোলে চারপাশে বিশুদ্ধ হাওয়া-বাতাস খেলে বেড়াচ্ছে। জলের ঘাটতি নেই৷ সবমিলিয়ে লকডাউনে কারোরই খুব একটা ক্ষতি হয়নি। আর এর জেরে গ্রামের একজন বাসিন্দাও কোভিডে আক্রান্তও হননি। দাবি জয়শ্রীর।
যদিও এরপর তিনি যোগ করেন, আইসোলেশনে না গিয়ে উপায়ও ছিল না। শহরে যাওয়ার পথ একটাই। প্রবল বর্ষায় পাহাড়ে ভূমিধস হওয়ায় সেই রাস্তাটাও বন্ধ হয়ে যায়। ফলে সকলে গ্রামেই বন্দি থাকে। যা শাপে বর হয়ে দেখা দিয়েছে।
যদিও গত বছর থেকে লড়াইটা সহজ ছিল না। কাজের সুবাদে শহর যেতে হতই। কিন্তু যেসমস্ত গ্রামবাসী বাইরে যেতেন, তাঁরা বাড়ি ফিরে সেল্ফ আইসোলেশনে চলে যেতেন। কাউকে জোরাজুরি করতে হত না। নিয়মিত মাস্ক, স্যানিটাইজার ব্যবহার নিয়েও প্রচার করতে হয়নি৷ সবাই নিজের ইচ্ছায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেছেন। এমনকী শহর থেকে যাঁরা রেশন ও অন্যান্য সামগ্রী এনেছেন, তাঁরাও কোভিড-মুক্তি কিনা, সেটা আগে নিশ্চিত করা হয়েছে।
এতকিছুর পরেও জেলা প্রাশাসন ভ্যাকসিনেশনের কাজ শুরু করতে চাইছে। ইড়ামালাক্কুড়ি-র বাসিন্দারা অবশ্য এতে ‘না’ বলেনি। যদিও টিকা দিতে এসে স্বাস্থ্যকর্মীরা করোনা ছড়িয়ে যাবে না তো?