
কোভিশিল্ড টিকার প্রথম ডোজ নেওয়ার পরে ১২ থেকে ১৬ সপ্তাহ পরে দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার সুপারিশ করে প্রস্তাব পেশ করেছিল সরকারি প্যানেল। গত ১৩ মে সেই প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক। প্রথমে ঠিক হয়েছিল, কোভিশিল্ড টিকার প্রথম ডোজ নেওয়ার ৬ থেকে ৮ সপ্তাহ পরে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হবে। পরিবর্তিত গাইডলাইনে বলা হয়েছে, কোভিশিল্ড টিকার দুটি ডোজের মাঝের সময়সীমা আরও বাড়ালে টিকা বেশি কার্যকরী হবে। কাজেই এই সময়ের ব্যবধান থাকে ১২ থেকে ১৬ সপ্তাহ। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডক্টর হর্ষবর্ধনও বলেছিলেন, বৈজ্ঞানিক গবেষণার পরেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অন্য দেশ কোভিশিল্ড টিকার দুটি ডোজের মধ্যে সময় কমিয়ে আনলেও ভারতে এত তাড়াহুড়ো করা হবে না। গবেষণার রিপোর্ট দেখেই যে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
কোন যুক্তিতে এত লম্বা সময়ের ব্যবধান রাখা হচ্ছে? কী বলছেন সরকারি প্যানেলের প্রধান?
এনটিএজিআই-এর প্রধান ডক্টর অরোরা বলছেন, কোভিশিল্ড টিকা এমনভাবে বানানো হয়েছে যাতে এর দুটি ডোজের মধ্যে বেশি সময়ের ব্যবধান রাখলে মানুষের শরীরে অ্যান্টিবডির পরিমাণ বাড়বে। কোভিশিল্ড ব্রিটেনের অক্সফোর্ড টিকার ফর্মুলায় তৈরি। অক্সফোর্ডের চ্যাডক্স টিকা ডিএনএ ভেক্টর ভ্যাকসিন। মানে হল, অ্যাডেনোভাইরাস নামে একধরনের সর্দি-কাশির ভাইরাসকে নিষ্ক্রিয় করে তার মধ্যে করোনাভাইরাসের প্রোটিন ভরে এই টিকা তৈরি হয়েছে। সরাসরি ভাইরাসের প্রোটিন যাতে শরীরে ঢুকে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে না পারে, সে কারণেই অন্য একটি ভাইরাসকে ভেক্টর হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। এই ধরনের ডিএনএ ভ্যাকসিন মোডার্না বা ফাইজারের আরএনএ ভ্যাকসিনের থেকে কিছু আলাদা। তাই টিকার কার্যকারিতা এবং এফিকেসির মধ্যেও তফাৎ আছে। মোডার্না বা ফাইজারের টিকা যেভাবে কাজ করবে, অক্সফোর্ডের টিকার কার্যপদ্ধতি তার থেকে আলাদা হবেই। তাই টিকার ডোজের মাত্রা ও দুটি ডোজের মধ্যে ব্যবধানেরও বৈজ্ঞানিক কারণ থাকবে বলেই মন কেন্দ্রের বিশেষজ্ঞদের।
কারণ আরও একটা আছে। অক্সফোর্ড টিকার ট্রায়ালের সময়েই শোনা গিয়েছিল, দুটি ডোজের কার্যকারিতার মধ্যে কিছু ফারাক হচ্ছে। চ্যাডক্স টিকার প্রথম ডোজ যতটা কার্যকরী হচ্ছে, সে তুলনায় দ্বিতীয় ডোজের প্রভাব কম। অক্সফোর্ড টিকার একটি ডোজ দিলে নাকি তা ৯০ শতাংশ কার্যকরী হচ্ছে। অথচ যদি টিকার সম্পূর্ণ ডোজ অর্থাৎ ২৮ দিনের ব্যবধানে দুটি ডোজ দেওয়া হয় স্বেচ্ছাসেবকদের তাহলে নাকি টিকার কার্যকারিতা ফের ৭০ শতাংশে নেমে যাচ্ছে। পরে অবশ্য, নতুন করে ট্রায়াল করে টিকার দুটি ডোজই ৯০ শতাংশ কার্যকরী। প্রথম ডোজেই শরীরের ইমিউন কোষগুলো সক্রিয় হয়ে উঠছে, তাই দ্বিতীয় ডোজের আগেই সুরক্ষা বলয় তৈরি হয়ে যাচ্ছে। তাই কিছুটা ব্যবধানে যদি দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয় তাহলে সেটি বুস্টার হিসেবে বেশিদিন কার্যকরী থাকবে।
চ্যাডক্স টিকার ফর্মুলাতেই কোভিশিল্ড তৈরি। তাই এক্ষেত্রেও একই নিয়ম কার্যকরী হবে বলেই জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, বার বার পরীক্ষা করে দেখা গেছে, কোভিশিল্ড টিকার দুটি ডোজ যদি বেশি সময়ের ব্যবধানে দেওয়া হয়, তাহলে কার্যকারিতা বাড়বে। তাই চিন্তার কারণ নেই। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, দ্বিতীয় ডোজ দেরি করে দিলেও টিকা একইভাবে কার্যকরী হবে। শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি করবে।