
এই তিন টিকাতেই সার্স-কভ-২ ভাইরাসকে রোখার উপাদান রয়েছে। এখন জেনে নেওয়া যাক কোন টিকা কীভাবে তৈরি হয়েছে, ট্রায়ালে কেমন ফল দিয়েছিল, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে কার বেশি এবং কোন টিকার এফিকেসি কেমন।
কীভাবে তৈরি হয়েছে কোভিশিল্ড, কোভ্যাক্সিন ও স্পুটনিক ভি?
করোনার ভ্যাকসিন তৈরিতে নানারকম পদ্ধতির ব্যবহার করছেন ভাইরোলজিস্টরা। ডিএনএ (ডিঅক্সিরাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড) টেকনোলজি বা আরএনএ (রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড)টেকনোলজির প্রয়োগ করে ভ্যাকসিন ক্যানডিডেট তৈরি হচ্ছে। অক্সফোর্ড যেমন ডিএনএ ভেক্টর ভ্যাকসিন বানাচ্ছে আবার মোডার্না বায়োটেক কাজ করছে মেসেঞ্জার আরএনএ নিয়ে। তাছাড়া সার্স-কভ-২ ভাইরাল প্রোটিনকে ল্যাবরেটরিতে বিশেষ উপায় নিষ্ক্রিয় করে সেই দুর্বল ভাইরাল স্ট্রেন দিয়েও ভ্যাকসিন ক্যানডিডেট ডিজাইন করছেন বিজ্ঞানীরা।
কোভিশিল্ড
অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের ফর্মুলায় তৈরি কোভিশিল্ড। করোনা মহামারী শুরু হওয়ার পরে প্রথম ডিএনএ (ডিঅক্সিরাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড) টেকনোলজি ব্যবহার করে ভ্যাকসিন ক্যানডিডেট তৈরি করে অক্সফোর্ড। এই ভ্যাকসিন ক্যানডিডেটের নাম চ্যাডক্স ChAdOx1 nCoV-19 , মূলত ভেক্টর ভ্যাকসিন। ভেক্টর ভ্যাকসিন হল এমন ধরনের ভ্যাকসিন যেখানে সরাসরি সংক্রামক জীবাণুর জিন ব্যবহার করা হয় না। বরং অন্য কোনও কম সংক্রামক ভাইরাসকে নিষ্ক্রিয় করে তার শরীরে সেই জিন ভরে তবে ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়। এই পদ্ধতি যেমন জটিল তেমনি কার্যকরী। অক্সফোর্ড ও তাদের সহযোগী জেন্নার ইউনিভার্সিটির গবেষকরা ভেক্টরের জন্য শিম্পাঞ্জির শরীর থেকে নেওয়া মামুলি সর্দি-কাশির ভাইরাস তথা অ্যাডেনোভাইরাসকে ব্যবহার করেন। ল্যাবরেটরিতে বিশেষ উপায় পিউরিফাই (বিশুদ্ধ) করে এই ভাইরাসকে নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হয় যাতে মানুষের শরীরে ঢুকলে বিভাজিত হয়ে প্রতিলিপি তৈরি করতে না পারে। এবার করোনার স্পাইক প্রোটিন (S) তথা স্পাইক জিনের অংশ নিয়ে তাকেও বিশুদ্ধ করে অ্যাডেনোভাইরাসের মধ্যে ভরে দেওয়া হয়। এই দুইয়ের মিশ্রণ দিয়েই তৈরি হয় ভ্যাকসিন ক্যানডিডেট।
এই ভ্যাকসিন দেহকোষে ঢুকলে তার মধ্যে থাকা স্পাইক জিনের বিন্যাস দেখে কোষও সেই মতো আচরণ করবে। কোষের ভেতরে করোনার স্পাইক প্রোটিনের মতো প্রতিলিপি তৈরি হতে শুরু করবে। কোষের ভেতরে ভাইরাল জিনের মতো বিন্যাস দেখে ইমিউন কোষগুলি জেগে উঠবে। এই ইমিউন কোষ দু’রকম বি-লিম্ফোসাইট কোষ ও টি-কোষ। বি-কোষ বিভাজিত হয়ে নিজের অজস্র ক্লোন তৈরি করবে, যার থেকে অ্যান্টিবডি তৈরি হবে রক্তে। আর অন্যদিকে, টি-কোষ সক্রিয় হয়ে রোগ প্রতিরোধ শক্তি গড়ে তুলবে।
কোভ্যাক্সিন
কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ সেন্টার ফর সেলুলার অ্যান্ড মলিউকিউলার বায়োলজির গবেষক ভি রাধা বলেছেন, গরুর ভ্রূণের সেরাম বা বাছুরের সেরাম যে কোনও ভ্যাকসিনেরই অন্যতম উপাদান। কোভ্যাক্সিন তৈরিতেও এই উপাদানই কাজে লাগানো হয়েছে। সার্স-কভ-২ ভাইরাল স্ট্রেন নিলেই তো হল না তাকে সংশ্লেষ করার জন্য অন্য কোষের দরকার হয়। সেই কোষ হল আফ্রিকার এক বিশেষ প্রজাতির বাঁদরের যাকে বলে African Green Monkey। এই বাঁদরের কিডনির CCl-81 কোষ নিয়ে ল্যাবরেটরিতে তার কালচার করা হয়েছে। সেই কোষকে এরপর বিশেষ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সার্স-কভ-২ ভাইরাল স্ট্রেনের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর পরে ভাইরাস সমেত সেই কোষকে ৩৬ ঘণ্টা সংশ্লেষ করা হয়েছে এবং তারপরে নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে।
এবার এই নিষ্ক্রিয় ভাইরাল স্ট্রেনের সঙ্গে অ্যাডজুভ্যান্ট মিশিয়ে তার ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। অ্যাডজুভ্যান্ট হল ইমিউনোলজিকাল উপাদান যা ভ্যাকসিনের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। এই উপাদান থাকলে ভ্যাকসিন আরও দ্রুত রোগ প্রতিরোধ শক্তি গড়ে তুলতে পারে। গবেষক বলছেন ইমিডাজোকুইনোলিন (imidazoquinoline) নামে এমন উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে যাতে এই টিকা সহজেই আরএনএ সার্স-কভ-২ ভাইরাসকে চিনতে পারে।
অ্যাডজুভ্যান্ট নিশিয়ে দিলেই কাজ শেষ নয়। এরপর সেই নিষ্ক্রিয় ভাইরাল স্ট্রেন সমেত মিশ্রিত কোষকে ল্যাবরেটরিতে একটি বিশেষ মাধ্যমে (Dulbecco’s Modified Eagle Medium) কালচার করা হয়েছে। অর্থাৎ কোষ মিশ্রণকে পুষ্টি দিয়ে তাকে বাড়িয়ে তোলা হয়েছে যাতে সে নিজেই বিভাজিত হয়ে আরও কোষ তৈরি করতে পারে। সেইসব কোষ হবে এমন যা শরীরে ঢুকলে ভাইরাসের নকল করবে। ফলে তার প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি তৈরি হবে শরীরে।
স্পুটনিক ভি
গ্যামেলিয়ার তৈরি এই ভ্যাকসিনের নাম গ্যাম-কোভিড-ভ্যাক (Gam-Covid-Vac)। অ্যাডেনোভাইরাসকে ভেক্টর হিসেবে ব্যবহার করে তৈরি হয়েছে এই ভ্যাকসিন। শরীরে ঢুকলে করোনার মতো স্পাইক প্রোটিন তৈরি করে শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে সক্রিয় করে তোলে।মোডার্না ও ফাইজারের ভ্যাকসিনের ডোজও শরীরে ঢুকলে স্পাইক প্রোটিনের অনুরূপ প্রোটিন তৈরি করে কিন্তু স্পুটনিকের মতো নয়। কারণ মোডার্না-ফাইজারের ভ্যাকসিন শরীরে ঢুকে আরএনএ (সিঙ্গল-স্ট্র্যান্ডেড) প্রোটিন তৈরি করে আর স্পুটনিক বানায় ডিএনএ (ডবল-স্ট্র্যান্ডেড)। স্পুটনিক ভ্যাকসিন যে প্রোটিন বানায় তার মধ্যে ভাইরাসের জেনেটিক ইনফরমেশন বা জিনগত তথ্য থাকে। এই প্রোটিনের খোঁজ পেলেই শরীরের ইমিউন কোষ (বি-কোষ বা টি-কোষ)তেড়েফুঁড়ে উঠে প্রোটিনের আগাগোড়া ভাল করে চিনে রাখে। সংক্রামক ভাইরাল প্রোটিন ঠিক কেমন, তার বিরুদ্ধে কেমনভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে তার একটা ছকও সাজিয়ে নেয়।
রুশ ভাইরোলজিস্টরা দুরকম অ্যাডেনোভাইরাস (মামু সর্দি-কাশির ভাইরাস, কম সংক্রামক)দিয়ে ভেক্টর ভ্যাকসিন বানিয়েছেন। সেটা কেমন? এডি২৬ (AD26) ও এডি৫ (AD5)—এই দুই রকম অ্যাডেনোভাইরাসের ডিএনএ-র সঙ্গে করোনার স্পাইক প্রোটিনের টুকরো বিশেষভাবে মিশিয়ে ভ্যাকসিন তৈরি হয়েছে। করোনার স্পাইক প্রোটিন প্রাণঘাতী, তাই এই প্রোটিন সরাসরি শরীরে ঢুকলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। ভাইরাল প্রোটিন সংখ্যায় বেড়ে কোষগুলোকে আক্রমণ করবে। তাই অ্যাডেনোভাইরাসের সঙ্গে যদি ভাইরাল প্রোটিন মিশিয়ে দেওয়া হয় তাহলে তার সংক্রামক ক্ষমতা কমে যাবে। আর অ্যাডেনোভাইরাসকেও নিষ্ক্রিয় করে নেওয়া হয় যাতে তারও কোনওরকম খারাপ প্রভাব মানুষের শরীরে না পড়ে। দু’রকম অ্যাডেনোভাইরাস আর করোনার স্পাইক মিলে যে ভ্যাকসিন ডিজাইন করেছেন রুশ ভাইরোলজিস্টরা তার কাজ দুটো—প্রথমত শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে সক্রিয় করা, দ্বিতীয়ত—অ্যান্টিবডি তৈরি করে রোগ প্রতিরোধ করা।
কোন টিকার ডোজ কেমন কার্যকরী?
কোভিশিল্ড টিকার ক্ষেত্রে—কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক ঘোষণা করেছে, অক্সফোর্ডের টিকা তথা সেরামের কোভিশিল্ড টিকার প্রথম ডোজ নেওয়ার অন্তত ৬ থেকে ৮ সপ্তাহ পরে দ্বিতীয় ডোজ নিতে হবে। অর্থাৎ টিকার দুটি ডোজ নেওয়ার মাঝের সময় আর ২৮ দিন নয়, তা বেড়ে হতে হয়েছে ৪২ দিন অথবা ৫৬ দিন।
অক্সফোর্ডের টিকার প্রথম ডোজ বেশি কার্যকরী হচ্ছে, দুটি ডোজ নিলে তার কার্যকারিতা কমছে, এমন অভিযোগ আগেও উঠেছিল। অক্সফোর্ড নিজেই পরে বিবৃতি দিয়ে জানায়, টিকার দুটি ডোজ গড়ে ৭০ শতাংশের বেশি কার্যকরী। এই গড় হিসেব কেন আনা হচ্ছে সে নিয়ে প্রশ্ন ওঠায়, অক্সফোর্ড ফের নতুন ট্রায়াল করে দাবি করে টিকার দুটি ডোজই ৯০ শতাংশ কার্যকরী। ডোজ নিয়ে আর কোনও বিভ্রান্তি নেই। ভারতে সেরামের তৈরিই অক্সফোর্ডের টিকা কোভিশিল্ড নিয়ে আলাদাভাবে কোনও প্রশ্ন ওঠেনি। তবে কোভিশিল্ড টিকার ডোজ শরীরে ঢুকে কতটা কার্যকরী হচ্ছে সে নিয়ে পরীক্ষা চালায় ন্যাশনাল টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজারি গ্রুপ ইমিউনাইজেশন (এনটিএজিআই)। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, কোভিশিল্ড টিকার দুটি ডোজের মধ্যে সময় বাড়ালে ডোজ আরও বেশি কার্যকর হবে। সাধারণত কোভিড টিকার প্রথম ডোজ দেওয়ার ২৮ দিন পরে দ্বিতীয় ডোজ দিলে, তার অন্তত ১৪-১৫ দিন পর থেকে ভাইরাস প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি তৈরি হতে শুরু করে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, কোভিশিল্ড টিকার ক্ষেত্রে প্রথম ডোজ দেওয়ার ৪২ দিন অথবা ৫৬ দিন পরে দ্বিতীয় ডোজ দিলে অ্যান্টিবডির পরিমাণ বাড়বে।
কোভ্যাক্সিন টিকার ক্ষেত্রে—ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিন টিকার দুটি ডোজের মধ্যে ৪ থেকে ৬ সপ্তাহের ব্যবধান থাকা ভাল। এই টিকার দুটি ডোজের কার্যকারিতা ফারাক নিয়ে তেমন কোনও প্রশ্ন ওঠেনি।
স্পুটনিক টিকার ক্ষেত্রে— রুশ টিকা ৯১.৪ শতাংশ কার্যকরী হয়েছে। প্রথম ডোজ নেওয়ার ২১ দিনের পরে টিকার সেকেন্ড ডোজ দিয়ে পর্যবেক্ষণে রাখা হয় স্বেচ্ছাসেবকদের। আরও ২১ দিন পরে অর্থাৎ প্রথম ডোজ দেওয়ার পর থেকে মোট ৪২ দিন পরে দেখা যায় টিকা বেশি ভাল কাজ করছে। ইমিউন পাওয়ার আরও বেড়েছে। রক্তে অ্যান্টিবডির পরিমাণও বেশি। সব মিলিয়ে দেখা গেছে টিকা ৯৫ শতাংশেরও বেশি কার্যকরী হয়েছে।
এফিকেসি কেমন
ভ্যাকসিনের এফিকেসি আর কার্যকারিতার মধ্যে পার্থক্য আছে। সাধারণত ভ্যাকসিন কেমন কাজ করছে সেটা তিন ট্রায়ালের পরেই নির্ধারণ করা হয়। তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালের সময় একদনকে প্ল্যাসেবো ও অন্যদলকে ভ্যাকসিনের ডোজ দিয়ে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। এবার দেখা হয়, ভ্যাকসিনের ডোজ দেওয়ার পরেও কতজন সংক্রমিত হচ্ছেন। প্ল্যাসেবো দলে কতজন সংক্রমিত আর সেই তুলনায় ভ্যাকসিন দেওয়া দলে কতজন সংক্রমিত, এই দুইয়ের অনুপাত বের করা হয়। এই অনুপাতকে বলে রিস্ক রেশিও (RR) । এই অনুপাত যত কম হবে, ভ্যাকসিনের এফিকেসি তত বাড়বে। ৭০%, ৮০%,৯০%… এই ভাবে এফিকেসি বের করা হয়।
কোভিশিল্ডের ক্ষেত্রে দেখা যায় এফিকেসি ৭০%, তবে পরে এর এফিকেসি বের করা হয় ৯০%। যেহেতু অক্সফোর্ড টিকার দুটি ডোজের কার্যকারিতার মধ্যে ফারাক আছে, তাই সম্পূর্ণ ডোজের পরেই এফিকেসি বের করা হয়।
গত বছর ফেব্রুয়ারিতে কোভ্যাক্সিন টিকার এফিকেসি বলা হয়েছিল ৭৮%, তবে এখন এই টিকার এফিকেসি ১০০% বলে দাবি করেছেন গবেষকরা।
রাশিয়ার গ্যামেলিয়া জানিয়েছে, স্পুটনিক ভি টিকার এফিকেসি ৯৭.৬%। শুরু থেকেই এফিকেসি এই মাত্রাতেই রয়েছে বলে দাবি রুশ গবেষকদের।
ছোঁয়াচে ভাইরাস থেকে কেমন সুরক্ষা দেবে
ভারত বায়োটেক দাবি করেছে, কোভ্যাক্সিন টিকায় এমন উপাদান আছে যা করোনাভাইরাসের ডবল মিউট্যান্ট স্ট্রেনও নিষ্ক্রিয় করে দিতে পারে। আক্রান্ত রোগীদের নমুনায় পাওয়া মিউট্যান্ট প্রজাতি নিয়ে গবেষণা করে এমনটাই জানা গিয়েছে। ল্যাবরেটরিতে করোনার ব্রিটেন স্ট্রেন (বি.১.১.৭), ব্রাজিলীয় স্ট্রেন (বি.১.১.২৮), দক্ষিণ আফ্রিকার (বি.১.৩৫১) স্ট্রেনের বিন্যাস বের করে ফেলা গেছে। এই ভিনদেশি স্ট্রেনগুলি একে অপরের সঙ্গে জুড়ে গিয়ে জিনের বিন্যাস বদলে যে ডবল ভ্যারিয়ান্ট বি.১.৬১৭ তৈরি করেছে তারও বিন্যাস বের করা হয়েছে। গবেষকরা বলছেন, আশা করা হচ্ছে কোভ্যাক্সিন এই প্রজাতিগুলিকে নিষ্ক্রিয় করে দিতে পারবে।
করোনার টিকা নিলেও শরীরে ঠিক কতদিন রোগ প্রতিরোধ শক্তি টিকে থাকবে সেটাই বড় এখন বড় প্রশ্ন। বিজ্ঞানীরা দাবি করেছিলেন, টিকা সাময়িকভাবে জটিল রোগ থেকে রেহাই দেবে। কিন্তু চিরস্থায়ী ইমিউনিটি তৈরি করতে পারবে না। সেখানে রাশিয়ার দাবি তাদের তৈরি স্পুটনিক ভি আরও বেশিদিন কার্যকরী হবে। এই টিকা নিলে ভাইরাসজনিত কোনও জটিল রোগের শঙ্কাও থাকবে না। মানুষের শরীরে ইমিউনিটি বা রোগ প্রতিরোধ শক্তি টিকে থাকবে দু’বছর।
অক্সফোর্ড জানিয়েছে, টিকার প্রথম ডোজ দেওয়ার পরেই করোনা সংক্রমণের হার অনেকটাই কমতে দেখা গেছে। বিশেষত ব্রিটেনে এখন যে হারে সংক্রমণ বাড়ছে তার অনেকটাই রোখা গেছে বলে দাবি। সারা গিলবার্টের টিম জানিয়েছে, টিকার প্রথম ডোজ মানুষের শরীরে প্রায় ৯০ শতাংশ কার্যকরী। শরীরে রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়ছে। আর সেই কারণে নতুন সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার হার কমছে। আরও দাবি করা হয়েছে, টিকার প্রথম ডোজ দেওয়ার পরেই দেখা গেছে, সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার হার প্রায় ৬৭ শতাংশ কমে গেছে।
কোন টিকায় কেমন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রজেনেকার টিকায় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার অভিযোগ বেশি উঠেছে। ব্রিটেনের হেলথ রেগুলেটরি কমিটি দাবি করেছিল, গত ২৪ মার্চ অ্যাস্ট্রজেনেকার টিকার ডোজ দেওয়ার পরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন ৩০ জন। তাঁদের মধ্যে সাতজনের শরীরে থ্রম্বোসিস দেখা দেয়। এদের কাউকেই বাঁচানো সম্ভব হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেরিব্রাল ভেনোমাস সাইনাস থ্রম্বোসিস দেখা যাচ্ছে টিকার ডোজে। এই ধরনের ব্লাড ক্লট খুবই বিরল। আবার অন্যান্য ধরনের থ্রম্বোসিসও লক্ষ্য করা গিয়েছে, সেক্ষেত্রে রক্তে অনুচক্রিকা বা প্লেটলেটের পরিমাণ অস্বাভাবিকরকম কমে যাচ্ছে।
অ্যাস্ট্রজেনেকার টিকায় জটিল স্নায়ুর রোগ তিনি ট্রান্সভার্স মায়েলিটিস দেখা গিয়েছিল বলেও অভিযোগ ওঠে। যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করে অ্যাস্ট্রজেনেকা। তবে ভারতে কোভিশিল্ড টিকার ডোজে এখনও অবধি কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার খবর মেলেনি।
ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিন টিকায় অ্যালার্জির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে বলে অভিযোগ উঠেছিল এক সময়। তবে পরে তেমন কোনও সমস্যা দেখা দেয়নি।
স্পুটনিক ভি টিকাতে এখনও পর্যন্ত কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার খবর সামনে আনেনি রাশিয়া। ভারতে এই টিকার ট্রায়ালের সময়েও কোনও অভিযোগ ওঠেনি।