
জাতীয় কমিটির রিপোর্ট বলছে, কোভিশিল্ড টিকার ডোজে ভারতীয়দের শরীরে কোনও জটিল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা ‘অ্যাডভার্স সাইড এফেক্টস’ দেখা যায়নি। খুব অল্পজনের মধ্যে হয়ত টিকার ডোজ নেওয়ার অনেক পরে রক্ত জমাট বাঁধার লক্ষণ দেখা গেছে, তাও সেটা প্রতি ১০ লক্ষ ডোজে ০.৬১ শতাংশ মাত্র। আর কোভ্যাক্সিন টিকায় এমন কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে বলে জানা যায়নি।
National AEFI (Adverse Event Following Immunization) Committee submits report to @MoHFW_INDIA
Bleeding and clotting cases following COVID vaccination in India are minuscule and in line with the expected number of diagnoses of these conditions
Read: https://t.co/HxPI0d8hWt
— PIB India (@PIB_India) May 17, 2021
ব্রিটিশ-সুইডিশ ফার্ম অ্যাস্ট্রজেনেকার টিকার ডোজে রক্ত জমাট বাঁধছে বলে প্রথম অভিযোগ তুলেছিল ব্রিটেন। সে দেশের হেলথ রেগুলেটরি কমিটি দাবি করেছিল, গত ২৪ মার্চ অ্যাস্ট্রজেনেকার টিকার ডোজ দেওয়ার পরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন ৩০ জন। তাঁদের মধ্যে সাতজনের শরীরে থ্রম্বোসিস দেখা দেয়। এদের কাউকেই বাঁচানো সম্ভব হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছিলেন, সেরিব্রাল ভেনোমাস সাইনাস থ্রম্বোসিস দেখা যাচ্ছে টিকার ডোজে। এই ধরনের ব্লাড ক্লট খুবই বিরল। আবার অন্যান্য ধরনের থ্রম্বোসিসও লক্ষ্য করা গিয়েছে, সেক্ষেত্রে রক্তে অনুচক্রিকা বা প্লেটলেটের পরিমাণ অস্বাভাবিকরকম কমে যাচ্ছে। রক্ত জমাট বেঁধে মৃত্যু হচ্ছে। এই খবর সামনে আসার পরে জার্মানি, ইতালি ও ফ্রান্সেও অ্যাস্ট্রজেনেকার টিকাকরণ নিষিদ্ধ হয়ে যায়।
ভারতে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রজেনেকার চ্যাডক্স টিকার ফর্মুলায় কোভিশিল্ড বানিয়েছে পুণের সেরাম ইনস্টিটিউট। সংস্থার কর্ণধার আদর পুনাওয়ালা দাবি করেছিলেন, তাঁদের টিকায় কোনওরকম গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। টিকার সেফটি ট্রায়ালের রিপোর্টও জমা করা হয়েছিল কেন্দ্রের বিশেষজ্ঞ কমিটির কাছে। জাতীয় এইএফআই কমিটি জানিয়েছে, কোভিশিল্ড টিকার ডোজের প্রভাব কেমন হচ্ছে তা নিয়ে পরীক্ষা শুরু হয়। ৩ এপ্রিল অবধি যাদের কোভিশিল্ড ও কোভ্যাক্সিন টিকার ডোজ দেওয়া হয়েছিল, তাদের শরীরে কেমন প্রভাব পড়েছে তা খতিয়ে দেখা হয়। কমিটির তথ্য বলছে, ৩ এপ্রিল অবধি সাড়ে সাত কোটি টিকার ডোজ দেওয়া হয়েছিল, যার মধ্যে কোভিশিল্ড টিকার ডোজ ছিল ৬ কোটি ৮৬ লাখের কাছাকাছি, কোভ্যাক্সিনের ডোজ ছিল ৬৭ লক্ষের কাছাকাছি। এর মধ্যে মাত্র ৭০০ জনের শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার ঘটনা ঘটেছে। গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে ৪৯৮ জনের, যার মধ্যে ২৬ জনের থ্রম্বোএমবোলিক ডিসঅর্ডার দেখা গিয়েছিল ২৬ জনের।
এটি এমন রোগ যেখানে রক্তজালকের মধ্যে যখন রক্ত জমাট বাঁধতে শুরু করে এবং সেই ব্লাড ক্লট আশপাশের রক্তজালকের মধ্যেও ছড়ায়। ম্যাসিভ ক্লট হলে তা প্রাণঘাতী হতে পারে। জাতীয় কমিটি দাবি করেছে, কোভিশিল্ড টিকার ডোজে পশ্চিমের দেশগুলিতে এমন ঘটনার খবর যত বেশি শোনা গেছে, ভারতে ততটা নেই। প্রাণহানির কোনও ঘটনাও ঘটেনি। সেদিক থেকে কোভ্যাক্সিন টিকাকে পুরোপুরি ক্লিনচিট দিয়েছে জাতীয় কমিটি। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই টিকার ডোজে এমন কোনও অ্যাডভার্স সাইড এফেক্টসের খবর এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক বলছে, করোনার ভ্যাকসিন নেওয়ার পরে যদি থ্রম্বোএমবোলিক ডিসঅর্ডার দেখা দেয়, তাহলে তার লক্ষণ প্রকাশ পাবে টিকার ডোজ নেওয়ার ২০ দিন পর থেকে। কী কী লক্ষণ দেখে সতর্ক হতে হবে—
১) শ্বাসকষ্ট
২) বুকে ব্যথা
৩) হাত ও পায়ের পেশিতে ব্যথা, শরীরে অস্বস্তি
৪) সূঁচ ফোটানোর জায়গার চারপাশে ছোট ছোট লালচে র্যাশ
৫) পেটে যন্ত্রণা, বমি নাও হতে পারে
৬)মাথা ঘোরা, মাথা ব্যথা (মাইগ্রেন না থাকলেও মাথায় তীব্র যন্ত্রণা)
৭) ঝিমুনি, শরীর অবশ হয়ে আসা, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে অসাড়তা
8) ঝাপসা দৃষ্টি, ডবল ভিসন
৫) মানসিক স্থিতি বিগড়ে যাওয়া, অবসাদ, মানসিক চাপ, ভুলে যাওয়ার প্রবণতা
৬)উপরের লক্ষণগুলো ছাড়াও যদি কোনওরকম শারীরিক সমস্যা দেখা দেয় তাহলেও সতর্ক হতে হবে। দ্রুত ডাক্তার দেখিয়ে চিকিৎসা শুরু করতে হবে।