
মেসর জেনারেল সঞ্জয় রিহানির নেতৃত্বে স্পেশাল টাস্ক ফোর্স তৈরি করা হয়েছে। এই টিমে রয়েছেন সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার ও ডাক্তাররা। করোনা রোগীর চিকিৎসার জন্য লিকুইড মেডিক্যাল অক্সিজেন (এলএমও) দরকার হচ্ছে। আর এই তরল অক্সিজেন সংরক্ষণ করে রাখার জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার লাগছে। দেশে এমনিতেও অক্সিজেন সিলিন্ডারের আকাল রয়েছে। রোগীদের দিনের হিসেবে এত বেশি মেডিক্যাল অক্সিজেন দিতে হচ্ছে যে সিলিন্ডার বারে বারেই ভর্তি করার দরকার পড়ছে। রিফিল করার কাজেও সময় লাগছে অনেক। তাছাড়া সিলিন্ডার সমেত মেডিক্যাল অক্সিজেনের দামও বেশি। এই সঙ্কট কাটাতে এবং রোগীদের দ্রুত অক্সিজেন সরবরাহ করতেই এই নয়া পদ্ধতি নিয়ে আসা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মেজর সঞ্জয় রিহানি।
কী এই পদ্ধতি? সেনা সূত্র জানাচ্ছে, তরল অক্সিজেনকে ভেপোরাইজড বা বাষ্পীভূত করে গ্যাসীয় অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হবে। সেই বিশুদ্ধ অক্সিজেন গ্যাস তখন পাইপের মাধ্যমে সরাসরি করোনা রোগীকে সরবরাহ করা যাবে।
মেডিক্যাল অক্সিজেন হল পরিশোধিত বিশুদ্ধ অক্সিজেন। বাতাসে তো সবরকম গ্যাস মিলেমিশে থাকে। সেখান থেকে শুধু অক্সিজেন ছেঁকে বের করে নিয়ে তা বিশুদ্ধ করে যখন রোগীকে দেওয়া হয় বা চিকিৎসার কাজে লাগে, তখন তাকে বলে মেডিক্যাল অক্সিজেন। সহজ কথায়, এই অক্সিজেনের মধ্যে অন্য কোনওরকম গ্যাস বা ধুলো-বালি, দূষিত কণা মিশে থাকে না। মেডিক্যাল অক্সিজেন তরল অবস্থায় সংরক্ষণ করে রাখা হয়। কারণ, অক্সিজেনের গলনাঙ্ক (melting points) ও স্ফুটনাঙ্গ (boiling points) কম হওয়ায় সেটি বায়বীয় বা গ্যাসীয় অবস্থায় থাকে। গ্যাসীয় অক্সিজেন স্টোর করে রাখা সম্ভব নয়। কিন্তু যদি তরল অবস্থায় অক্সিজেনেকে ধরে রাখা যায়, তাহলে একদিকে যেমন রোগীকে সহজে দেওয়া যায় তেমনি বড় বড় ট্যাঙ্কারে সংরক্ষণ করেও রাখা যায়। সে কারণেই মেডিক্যাল অক্সিজেন তরল অবস্থায় থাকে।
কিন্তু দেশে যেভাবে করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে তাতে লিকুইড অক্সিজেন ধরে রাখার মতো সিলিন্ডারের অভাব হচ্ছে। সেনা সূত্র বলছে, ২৫০ লিটারের সিলিন্ডার নিয়ে পরীক্ষা শুরু হয়েছে। তরল অক্সিজেনকে চাপ দিয়ে ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে ফের গ্যাসীয় অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে যা যা উপকরণ লাগবে সেসব দিয়ে প্রোটোটাইপ বানানো হয়েছে। ভেপোরাইজার, প্রেসার বার, পাইপলাইন, প্রেসার ভালব বসিয়ে কাজ শুরু হয়ে গেছে। সেনাবাহিনীর তরফে বলা হয়েছে, এমন একটা প্রোটোটাইপ দিল্লির হাসপাতালে বসানো হয়েছে। ৪০টি বেডের হিসেবে টানা দুই থেকে তিন দিন নিরন্তর অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারবে এই সিস্টেম। বিভিন্ন রাজ্যের হাসপাতালগুলিতে পৌঁছে দিতে মোবাইল ক্যারিয়ার তৈরি করা যায় কিনা সে নিয়েও পরীক্ষানিরীক্ষা করছেন সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়াররা।