
এমন এক জোটের প্রস্তাব দিয়ে গত রবিবার হায়দরাবাদ থেকে রওনা হয়ে প্রথমে ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজু জনতা দলের সর্বাধিনায়ক নবীন পট্টনায়েকের সঙ্গে দেখা করেছিলেন চন্দ্রশেখর রাও। রাতটা নবীন নিবাসে কাটিয়ে, পরদিন সোমবারই চলে এসেছিলেন নবান্নে, দিদির দরজায়। চন্দ্রশেখর রাওকে নবান্নের গেটে দিদি-র অভ্যর্থনা জানানোর ছবিটা ফ্রেমে ধরা রয়েছে। পরে নবান্নের দরজায় মমতাকে পাশে নিয়ে চন্দ্রশেখর বলেছিলেন, “আমার মিশন একটাই। উনিশে মোদীকে হঠাতে অকংগ্রেসি, অবিজেপি ফেডারেল ফ্রন্ট গঠন করা।”
এর পর একদিনের বিরতি। হঠাৎ অশ্বমেধে আব্বুলিস দিয়ে বুধবার দিল্লিতে আবির্ভাব ঘটল চন্দ্রশেখর রাওয়ের। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করে তেলঙ্গনায় একটি হাইকোর্ট, নতুন সচিবালয় ভবনের নির্মাণ এবং পিছিয়ে পড়া এলাকার উন্নয়নের জন্য সাড়ে চারশ কোটি টাকা অনুদানের দাবি জানালেন কলভাকুন্তলা চন্দ্রশেখর রাও। এ ছাড়া সিমেন্ট কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়ার পুনরুজ্জীবন, ওয়ারাঙ্গালে এক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে টেক্সটাইল পার্ক গঠনের প্রস্তাব দিলেন তিনি।
তিনি যখন তেলঙ্গনার মুখ্যমন্ত্রী, তখন প্রশাসনিক কারণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করবেন সেটাই যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর দস্তুর। কিন্তু রাজনীতির মন বড়ই সন্দিহান! সোজা পথে কখনওই ভাবে না। চন্দ্রশেখরের এ সব গতিবিধি দেখে পিঠটান দিয়েছেন মায়াবতী-অখিলেশ। বুধবার দু’জনের সঙ্গেই দেখা করার কথা ছিল কেসিআর-এর। মায়াবতী সময়ই দেননি। আর অখিলেশ জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি লখনউতে রয়েছেন। পরে হায়দরাবাদে গিয়ে দেখা করে আসবেন।
নবীন ও মমতার সঙ্গে চন্দ্রশেখরের বৈঠক দেখেই কটাক্ষ করেছিলেন কংগ্রেসের নেতারা। এমনকী বাংলায় বিরোধী দলনেতা তথা প্রবীণ কংগ্রেস নেতা আবদুল মান্নান বলেছিলেন, সোনার পাথর বাটি হাতে মমতার কাছে এসেছেন চন্দ্রশেখর। অকংগ্রেস-অবিজেপি ফ্রন্ট বলে কিছু হয়? ওঁরা কোনওদিনও কেন্দ্রে বিকল্প সরকার দিতে পারে জাতীয় কোনও দলের সমর্থন ছাড়া? মান্নান সাহেবের কথায়, আসলে মোদীর চর হলেন চন্দ্রশেখর। কংগ্রেসকে দুর্বল করতে মোদী ওঁকে কাজে লাগিয়েছেন। চন্দ্রশেখর, নবীন, মমতা- এঁরা সবাই তলে তলে মোদীর সঙ্গে আঁতাত করে চলছেন। নইলে এঁদের বিপদ অবশ্যম্ভাবী।
একই মত পোষণ করেন সিপিএম নেতারাও। যদিও মমতা-চন্দ্রশেখরের বৈঠকের পর তৃণমূল নেতারা বিষয়টিকে এড়িয়ে বলেন, কেন্দ্রে মোদী বিরোধী জোটে কংগ্রেস সহ সব ধর্মনিরপেক্ষ দলই রয়েছে। জাতীয় স্তরে বিরোধী রাজনীতিতে দিদি-র ভূমিকা কত গুরুত্বপূর্ণ তা চন্দ্রশেখরের নবান্ন সফর থেকে বোঝা যাচ্ছে। চন্দ্রশেখর, চন্দ্রবাবু, ফারুক আবদুল্লাহ এক এক করে সবাই কলকাতায় আসছেন দিদি-র সঙ্গে দেখা করতে।
কিন্তু বুধবার মোদী-চন্দ্রশেখরের বৈঠকের পর কংগ্রেস নেতারা বলেন, আমরা আগেই বলেছিলাম ওঁ আসলে মোদীর দূত। এ বার মিলে গেল তো!