
ইসরোর চন্দ্রযানের মুখোমুখি নাসার লুনার অরবিটার, ধাক্কা লাগতেই যাচ্ছিল
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বড় দুর্ঘটনা ঘটতে যাচ্ছিল মহাকাশে।
চাঁদকে ঘিরে ঘুরছিল দুজনেই। উত্তর মেরুর দিকে মোড় ঘুরতেই আচমকা মুখোমুখি। একদিকে ইসরোর চন্দ্রযান ২ (Chandrayaan-2), অন্যদিকে নাসার লুনার রিকনেসেন্স অরবিটার (এলআরও)। প্রচণ্ড সংঘর্ষ হতেই যাচ্ছিল, কিন্তু শেষ মুহূর্তে রক্ষা মেলে। ইসরোর বিজ্ঞানীদের কৌশলে দুই লুনার অরবিটারের মুখোমুখি ধাক্কা এড়ানো গেছে।
ইসরোর চন্দ্রযান ২-এর অরবিটার সেই কবে থেকেই চাঁদকে প্রদক্ষিণ করছে। নাসার লুনার অরবিটারও চাঁদের চারপাশে পাক খাচ্ছে। কাছ থেকে চাঁদের ছবি তোলা, চাঁদের ক্রেটার বা গহ্বরগুলিকে চিহ্নিত করাই এদের কাজ। কিন্তু গণ্ডগোলটা বেঁধে যায় অক্টোবরের ২০ তারিখে। চাঁদের উত্তর মেরুর দিক থেকে পাক খেয়ে আচমকাই মুখোমুখি চলে আসে চন্দ্রযানের অরবিটার ও নাসার লুনার অরবিটার। তারপর খুব কম সময়ের ব্যবধান। বিজ্ঞানীদের সুকৌশলে সংঘর্ষ এড়ানো গেছে দক্ষতার সঙ্গেই।
ইসরো জানিয়েছে, দুই লুনার অরবিটার যে কাছাকাছি আসতে পারে তার একটা সম্ভাবনা আগে থেকেই ছিল। ইসরো ও নাসা দুই মহাকাশ গবেষণা সংস্থাই হিসেব কষে রেখেছিল, কতটা কাছাকাছি চলে আসতে পারে দুই অরবিটার। ২০ অক্টোবর ভারতীয় সময় সকাল সওয়া ১১টা নাগাদ চন্দ্রযান ও নাসার লুনার অরবিটারের মধ্যে দূরত্ব কমতে থাকে। এদের পারস্পরিক দূরত্ব থাকার কথা ছিল ৩ কিলোমিটার। সেখানে দূরত্ব ১০০ মিটারেরও কম হয়ে যায়। মুখোমুখি ধাক্কা লাগার পরিস্থিতি তৈরি হয়।
শেষমেশ ‘কলিশন অ্যাভয়ড্যান্স ম্যানিউভর’ (ক্যাম) পদ্ধতি প্রয়োগ করে দুই অরবিটারের মধ্যেই রেডিয়াল দূরত্ব বাড়াতে সক্ষম হয় ইসরো ও নাসা। বড় দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যায় চন্দ্রযান ও এলআরও।
২০১৯ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ভারতীয় সময় মধ্যরাতে চাঁদে নামার কথা ছিল চন্দ্রযান ২-এর। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের কয়েক সেকেন্ড আগে থেকে বিক্রম ল্যান্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ইসরোর গবেষকদের ধারণা যে, চাঁদের মাটিতে হার্ড ল্যান্ড করেছিল বিক্রম। অর্থাৎ যে গতিতে নামার কথা ছিল তার থেকে বেশি গতিতে নেমেছিল। ফলে চাঁদের মাটিতে ধাক্কা খেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ল্যান্ডার। তার ফলেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। চাঁদের মাটিতে ল্যান্ডারের ধ্বংসাবশেষের ছবি সামনে আনে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। আছড়ে পড়ার ফলে কী ধরনের অভিঘাত হয়েছিল এবং কী ভাবে ল্যান্ডারের ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে রয়েছে সেই ছবি ধরা দেয় নাসার লুনার রেকনিসেন্স অরবিটার তথা এলআরও-তে ।
চাঁদের অসংখ্য গহ্বর, অন্ধকার পিঠের ছবি তুলেছে অরবিটার। এর সিন্থেটিক অ্যাপারচার রেডারে রয়েছে এল ও এস ব্যান্ড। প্রথম চন্দ্রযানের চেয়ে যা অনেক বেশি উন্নত ও আধুনিক। এই রেডারে সহজেই ধরা পড়ে চাঁদের ক্রেটার বা গহ্বরের বৈচিত্র্য। ক্রেটার থেকে ছিটকে বেরনো পদার্থ বা Crater Ejecta। কয়েক কোটি বছরের পুরনো বুড়ো গহ্বর যেমন দেখেছে এসএআর তেমনি দেখেছে নতুন গজিয়ে ওঠা সদ্যোজাত গহ্বরও। মহাকাশবিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, হাই রেজোলিউশন ক্যামেরায় এইসব গহ্বর অনেক সময়েই ধরা দেয় না। কারণ চাঁদের ধুলো বা রেগোলিথ সেগুলোকে আড়াল করে রাখে। ধুলোর চাদরের ভিতরে চোখ বুলিয়ে লুকিয়ে থাকা সেইসব গহ্বরের খোঁজ চালানোই কাজ সিন্থেটিক অ্যাপারচার রেডারের।