
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ওমিক্রন নিয়েই চিন্তা চরমে স্বাস্থ্যমন্ত্রকের। করোনার এমন এক প্রজাতি যা সাধারণ কোভিড টেস্টে ধরা পড়ে না। এই ভাইরাস চিনতে হলে রোগীর শরীর থেকে নেওয়া নমুনার জিনোম সিকুয়েন্স বা জিনের বিন্যাস বের করতে হয়। সেটা অনেকটাই সময়সাপেক্ষ ও জটিল পদ্ধতি। চট করে ওমিক্রন ভাইরাস চিহ্নিত করতে এবার নতুন ধরনের টেস্ট কিট আনল টাটা মেডিক্যাল ও ডায়াগনসটিক্স। এই টেস্ট কিটে সম্মতি দিয়েছে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)।
মার্কিন কোম্পানি থার্মো ফিসার তৈরি করেছে এই টেস্ট কিট। নাম ওমিসিওর (OmiSure) ওমিক্রন চিহ্নিত করার জন্য ভারতে এই কিট তৈরি করেছে টাটা মেডিক্যাল। ‘এস (S) জিন’ টার্গেট ফেলিওর প্রযুক্তিতে ভাইরাল ভ্যারিয়ান্ট চিনে নেবে এই টেস্ট কিট। বারে বারে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করে গত ৩০ ডিসেম্বর এই টেস্ট কিটে অনুমোদন দিয়েছে আইসিএমআর।
কীভাবে ওমিক্রন ধরবে ওমিসিওর? নাগপুর সিএসআইআরের (CSIR-NEERI) বিজ্ঞানী কৃষ্ণা খাইরনার বলেছেন, কোভিড ভাইরাস ধরতে চার থেকে পাঁচ রকমের জিন চিহ্নিত করা হয়–এস (S) জিন, ওআরএফ (ORF), এন জিন (N), আরডিআরপি (Rdrp), ই (E) জিন ইত্যাদি। এর মধ্যে এস জিন চিহ্নিত করা সহজ ব্যাপার নয়। কারণ এই জিন বারে বারেই বদলে যায়। একে বলে জেনেটিক মিউটেশন। এই মিউটেশনের কারণে অ্যামাইনো অ্যাসিডের কোড বদলে যায়। ফলে এই জিনকে টার্গেট করে চিনে নেওয়া সহজ কাজ নয়। যদি দেখা যায় টেস্ট কিট দিয়ে এই জিনকে সঠিকভাবে চিহ্নিত করা যাচ্ছে না, তাহলে বুঝতে হবে ফের রূপ বদল হয়েছে। আর এত ঘন ঘন বদল সংক্রামক ভাইরাস ছাড়া সম্ভব নয়। ওমিক্রনের ক্ষেত্রে যা হচ্ছে।
নতুন এই প্রজাতির জিনোম সিকুয়েন্স বা জিনের গঠন বিন্যাস বের করে এর নাম দেওয়া হয়েছে বি.১.১৫২৯। ভাইরোলজিস্টরা বলছেন ওমিক্রন। ভাইরোলজিস্টরা বলছেন, নতুন এই প্রজাতিতে অন্তত ৫০টি মিউটেশন হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। যার মধ্যে স্পাইক প্রোটিনেই (s) ৩০ বার অ্যামাইনো অ্যাসিডের কোড বদলে গেছে। মানুষের শরীরে এই প্রজাতি খুব দ্রুত ছড়াতে পারে বলেই জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।
গত বছর মার্চ থেকে করোনার যে প্রজাতি ভারতে ছড়াতে শুরু করেছিল তা এখন অনেক বদলে গিয়েছে। সুপার-স্প্রেডার হয়ে উঠেছে, মানে অনেক দ্রুত মানুষের শরীরে ঢুকে সংক্রমণ ছড়াতে পারে। সার্স-কভ-২ হল আরএনএ (রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড) ভাইরাস। এর শরীর যে প্রোটিন দিয়ে তৈরি তার মধ্যেই নিরন্তর বদল হচ্ছে। এই প্রোটিন আবার অ্যামাইনো অ্যাসিড দিয়ে সাজানো। ভাইরাস এই অ্যামাইনো অ্যাসিডগুলোর কোড ইচ্ছামতো বদলে দিচ্ছে। কখনও একেবারে ডিলিট করে দিচ্ছে। এইভাবে বদলের একটা চেইন তৈরি হয়েছে। আর এই এই রূপ বদলের কারণেই নতুন নতুন প্রজাতির দেখা মিলতে শুরু করেছে। ওমিক্রন যার মধ্যে একটি। এই ভাইরাল স্ট্রেনকে ‘উদ্বেগজনক’ তকমা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)।
টাটার টেস্ট কিট জিন চিহ্নিত করণের মাধ্যমেই ওমিক্রন ভাইরাসকে চিনে নেবে। দেশে এই টেস্ট কিটের দাম কত হবে তা এখনও জানা যায়নি। তবে আইসিএমআর জানিয়েছে, খুব দ্রুত বাজারে চলে আসবে এই টেস্ট কিট।