

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ (সিনিয়র পাবলিক হেলথ স্পেশালিস্ট) ডাক্তার সুবর্ণ গোস্বামী বলছেন, এখন জ্বর, সর্দি-কাশি হলেই কোভিড টেস্ট করানো দরকার। হাল্কা জ্বর, নাক বন্ধ, মাথা ব্যথা, গায়ে হাত-পায়ে ব্যথা হলেই করোনা পরীক্ষা করিয়ে নিন। কারণ কোভিড টেস্টের রিপোর্ট পজিটিভ এলে ওষুধও সেই মতোই প্রেসক্রাইব করবেন ডাক্তারবাবুরা। আর রিপোর্ট নেগেটিভ এলে বুঝতে হবে ভাইরাল জ্বর বা অন্য কোনও রকম ফ্লু। তাহলে সেই চিকিৎসা অন্য হবে। লোকমুখে শুনে একগাদা ওষুধ খেয়ে নেওয়া মোটেও স্বাস্থ্যকর নয়।
জ্বর হলেই কোভিড টেস্ট করান
ডাক্তারবাবু বলছেন, জ্বর হলে এখন কোভিড টেস্ট মাস্ট। কারণ কোভিড বিশেষ করে ওমিক্রন এতটাই ছড়িয়ে পড়েছে যে পরীক্ষা ছাড়া বোঝা সম্ভব নয়। আর ওমিক্রনের উপসর্গও মৃদু। সংক্রমণ হলে স্বাদ-গন্ধ যাচ্ছে না তবে হাল্কা জ্বর, মাথা ব্যথা, সর্দি বা নাক দিয়ে জল পড়া, গায়ে ব্যথা এগুলো থাকছে। তাই আগে থেকেই সাবধান হতে হবে। উপসর্গ বুঝলেই পরীক্ষা করানো জরুরি। তারপর ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খেতে হবে।
শ্বাসকষ্ট হচ্ছে কিনা খেয়াল রাখুন। ডেল্টা ভাইরাসের সংক্রমণ হলে শ্বাসের সমস্যা হচ্ছে, স্বাদ-গন্ধ চলে যাচ্ছে। কিন্তু ওমিক্রনের সংক্রমণে তেমনটা হচ্ছে না। ফুসফুস সেভাবে সংক্রমিত হচ্ছে না। তবে জ্বর অনেকদিন থাকছে, সেই সঙ্গে মাথা যন্ত্রণা। জ্বর কমে গেলেও কাশি থাকছে আরও দিন চারেক। সেক্ষেত্রে দিনে তিন থেকে চার বার গার্গল করলে ভাল, স্টিম নিন উপকার পাবেন। কোমর্বিডিটির রোগী হলে সাবধান হতে হবে। হার্ট, ফুসফুস, কিডনির ওসুখ, সিওপিডির রোগী, ক্যানসার, ডায়াবেটিস থাকলে সতর্ক থাকতেই হবে।
ডা. সুবর্ণ গোস্বামী বলছেন, করোনা পরীক্ষার সঙ্গে এখন ডেঙ্গিরও পরীক্ষা করাতে বলা হচ্ছে। কারণ ডেঙ্গির উপসর্গও অনেকটা একই রকম। কী থেকে জ্বর হচ্ছে তা জানতে কোভিড ও ডেঙ্গি টেস্ট করিয়ে নেওয়া ভাল। দুটো রিপোর্টই নেগেটিভ এলে তখন ভাবতে হবে কোন ধরনের ভাইরাল ফিভার হচ্ছে। তার ট্রিটমেন্ট অন্য।
কোভিড টেস্ট করিয়ে নেওয়ার আরও একটা সুবিধা হল ভবিষ্যতে অন্য কোনও জটিল রোগ হলে বোঝা যাবে তা করোনার কারণেই হয়েছে কিনা। পোস্ট-কোভিড পর্যায়ে নানা রকম অসুখ বা শারীরিক সমস্যা দেখা যাচ্ছে অনেকের। করোনার কারণেই যদি সমস্যার সূত্রপাত হয় তাহলে তার চিকিৎসা কীভাবে হবে সেটা সহজেই ধরতে পারবেন ডাক্তারবাবুরা। সে জন্যই কোভিড টেস্ট মাস্ট।
মুঠো মুঠো অ্যান্টিবায়োটিক নয়
জ্বর হলেই প্যারাসিটামল খান। আর কোনও অ্যান্টিবায়োটিক নয়। ডাক্তারবাবু বলছেন, এখন জ্বর মানেই করোনা হয়েছে ভেবে নিয়ে রোগীরা নিজেই মুড়ি মুড়কির মতো অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে যাচ্ছেন। অ্যাজিথ্রোমাইসিন, জিনকোভিটে ঘর ভরে যাচ্ছে। এই সমস্ত হল ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধক ওষুধ, ভাইরাস সেভাবে ঠেকাতে পারে না। যদি কোভিড হয় তাহলে এর থেরাপি অন্য হবে। কিন্তু যদি না হয় এবং এর পরেও অ্যান্টিবায়োটিকের কোর্স করে যান, তাহলে শরীর দুর্বল হবে। এমনিতেও জ্বরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে তার ওপরে কড়া অ্যান্টিবায়োটিকের কোর্স করলে শরীর দুর্বল হতে বাধ্য।
ডাক্তারবাবুর পরামর্শ, আগে কোভিড টেস্ট তারপর ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খান। যদি টেস্ট না করান, তাহলে ৬ ঘণ্টা অন্তর প্যারাসিটামল খেতে পারেন। জ্বর বা অন্য উপসর্গ বাড়লে সেই বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
হোম আইসোলেশনে কী কী নিয়ম মানতে হবে
কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়ে দিয়েছে, কোভিডের মৃদু বা মাঝারি উপসর্গ থাকলে বাড়িতেই আইসোলেশনে থাকা যাবে। সাত দিনের আইসোলেশন বা অন্দরবাসের নিদান দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। হোম আইসোলেশনেও কিছু নিয়ম মানার কথা বলা হয়েছে।
প্রথমত–আলাদা ঘরে আইসোলেশনে থাকতে হবে।
ফেস-মাস্ক, পারস্পরিক দূরত্ব মেনে চলা বাধ্যতামূলক। বারে বারে হাত ধুতে হবে। সঙ্গে হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে। ড্রপলেট যাতে না ছড়ায় সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে।
জ্বর ও গায়ে হাত-পায়ে ব্যথা থাকলে প্যারাসিটামল খেতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ডোজ ঠিক করতে হবে।
অ্যালার্জির সমস্যা থাকলে অ্যান্টিহিস্টামিন ওষুধ নেওয়া যেতে পারে, পেটের সমস্যায় ল্যাক্সেটিভ জাতীয় ওষুধ, তবে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে।
কাশি, নাক বন্ধ ও শ্বাসের হাল্কা সমস্যা হলে Budesonide 800 দিনে দুবার করে পাঁচদিন নিতে হবে। কোনও স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ নেওয়া চলবে না।