
দ্য ওয়াল ব্যুরো: কোভিশিল্ড ও কোভ্যাক্সিনের পাশাপাশি রাশিয়ার তৈরি টিকা স্পুটনিক ভি দেওয়া শুরু হয়েছে বাংলায়। কলকাতাতেও স্পুটনিক ভি টিকা দেওয়া শুরু করেছে কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতাল। গত শনিবার থেকে রুশ টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া শুরু হয়েছে কলকাতার উডল্যান্ডস মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতালে। কোউইন অ্যাপে রেজিস্ট্রেশন করে টিকা নেওয়া যাবে। প্রথমদিনে ১২ জনকে টিকার ডোজ দেওয়া হয়েছে।
কোভিড ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য একটি আলাদা টিকাকরণ কেন্দ্রই তৈরি করেছে উডল্যান্ডস মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতাল। এই টিকাকরণ কেন্দ্র রয়েছে মূল হাসপাতাল থেকে ২০০ মিটার দূরে ৮সি আলিপুর রোডে। রাজ্যের মন্ত্রী ও কলকাতা পুরসভার প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম এই টিকাকরণ কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন।
তিনি বলেছেন, “এটি একটি চমৎকার পদক্ষেপ। আলাদা ভ্যাকসিনেশন সেন্টার তৈরি করে উডল্যান্ডস হাসপাতাল রাজ্যের অন্যান্য বেসরকারি হাসপাতালের কাছে দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে। শোনা যাচ্ছে, আসন্ন কোভিডের তৃতীয় ঢেউয়ে বাচ্চাদের সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি আছে। তার আগেই যদি আমরা বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন, পরিচারিকাদের টিকা দিতে পারি তাহলে হয়ত ভবিষ্যত প্রজন্মকে কোভিডের সংক্রমণ থেকে অনেক বেশি সুরক্ষা দেওয়া যাবে। সেইজন্যই এমন আরও অনেক বেশি টিকাকরণ কেন্দ্র তৈরি হওয়া দরকার।”
উডল্যান্ডস মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতালের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ডাঃ রূপালী বসু বলেছেন, স্পুটনিক টিকার একটি ডোজের দাম পড়বে ১১৪৫ টাকা। টিকার এফিকেসিও বেশি, প্রায় ৯২%। স্পুটনিক ভি টিকার দুটি ডোজের মধ্যে সময়ও বেশিদিনের নয়। কোভ্যাক্সিন টিকার দুটি ডোজের মাঝে সময়ের ব্যবধান ২৮ দিনের, কোভিশিল্ডের সবচেয়ে বেশি ৮৪ দিন আর স্পুটনিক ভি টিকার সবচেয়ে কম ২১ দিন। তিনি আরও জানান, রুশ টিকার জোগান এখন কম। তাই কোউইনে অ্যাপে এই টিকার জন্য স্লট বুক করা যাচ্ছে না। তবে ভ্যাকসিনের সরবরাহ বাড়লে এই সমস্যা থাকবে না। সোমবার থেকে শনিবার সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা অবধি এই সেন্টার খোলা থাকবে। কোউইন অ্যাপের মাধ্যমে উপভোক্তারা নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন। হাসপাতালে ডিজিটাল পেমেন্টেরও ব্যবস্থা আছে বলে জানিয়েছেন তিনি। https://www.myhealthcare.co/mywoodlands/ এই লিঙ্কের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন ও পেমেন্ট দুইই করা যাবে।
অক্সফোর্ড টিকা তথা দেশের তৈরি কোভিশিল্ড এবং ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিনের পরে রুশ টিকা স্পুটনিক ভি ছাড়পত্র পেয়েছে দেশে। কেন্দ্রীয় ড্রাগ নিয়ামক সংস্থার বিশেষজ্ঞ কমিটির পরীক্ষায় পাশ করে গেছে রাশিয়ান ভাইরাল ভেক্টর ভ্যাকসিন।
রাশিয়ার গ্যামেলিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তৈরি এই ভ্যাকসিনের নাম গ্যাম-কোভিড-ভ্যাক (Gam-Covid-Vac)। অ্যাডেনোভাইরাসকে ভেক্টর হিসেবে ব্যবহার করে তৈরি হয়েছে এই ভ্যাকসিন। শরীরে ঢুকলে করোনার মতো স্পাইক প্রোটিন তৈরি করে শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে সক্রিয় করে তোলে।মোডার্না ও ফাইজারের ভ্যাকসিনের ডোজও শরীরে ঢুকলে স্পাইক প্রোটিনের অনুরূপ প্রোটিন তৈরি করে কিন্তু স্পুটনিকের মতো নয়। কারণ মোডার্না-ফাইজারের ভ্যাকসিন শরীরে ঢুকে আরএনএ (সিঙ্গল-স্ট্র্যান্ডেড) প্রোটিন তৈরি করে আর স্পুটনিক বানায় ডিএনএ (ডবল-স্ট্র্যান্ডেড)। স্পুটনিক ভ্যাকসিন যে প্রোটিন বানায় তার মধ্যে ভাইরাসের জেনেটিক ইনফরমেশন বা জিনগত তথ্য থাকে। এই প্রোটিনের খোঁজ পেলেই শরীরের ইমিউন কোষ (বি-কোষ বা টি-কোষ)তেড়েফুঁড়ে উঠে প্রোটিনের আগাগোড়া ভাল করে চিনে রাখে। সংক্রামক ভাইরাল প্রোটিন ঠিক কেমন, তার বিরুদ্ধে কেমনভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে তার একটা ছকও সাজিয়ে নেয়।
রুশ ভাইরোলজিস্টরা দুরকম অ্যাডেনোভাইরাস এডি২৬ (AD26) ও এডি৫ (AD5) দিয়ে এই ভ্যাকসিন বানিয়েছেন। দু’রকম অ্যাডেনোভাইরাস আর করোনার স্পাইক মিলে যে ভ্যাকসিন ডিজাইন করেছেন রুশ ভাইরোলজিস্টরা তার কাজ দুটো—প্রথমত শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে সক্রিয় করা, দ্বিতীয়ত—অ্যান্টিবডি তৈরি করে রোগ প্রতিরোধ করা। করোনার অতি সংক্রামক ডেল্টা ভ্যারিয়ান্ট থেকেও এই টিকা সুরক্ষা দিতে পারে বলে দাবি করেছে রুশ ভ্যাকসিন নির্মাতা সংস্থা গ্যামেলিয়া।