দ্য ওয়াল ব্যুরো: ঠিক যেমনভাবে করোনার ভ্যাকসিন তৈরি হয়েছে, তেমন ভাবেই বার্তাবহ বা মেসেঞ্জার আরএনএ দিয়ে এইডসের টিকা তৈরি হয়েছে। সেই অগস্ট মাস থেকে এইডসের টিকা নিয়ে তোলপাড় চলছিল বিশ্বে। পশুদের শরীরে এই টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ সফল, মানুষের শরীরেও ৯০ শতাংশ সফল হয়েছে বলে দাবি করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। এখন জানা যাচ্ছে, এই টিকা সুরক্ষিত ও নিরাপদ। এইচআইভি-র মতো লেন্টিভাইরাস গোত্রের ভাইরাসদের নিষ্ক্রিয় করতে এই টিকা কার্যকরী হতে পারে।
ক্যানসারের মতো এইডস নিরাময়ের জন্যও এখনও তেমনভাবে কোনও ওষুধ বাজারে আসেনি। নানারকম চিকিৎসা পদ্ধতিতে মারণ রোগকে ঠেকিয়ে রাখা যায়। এইডসের টিকা আনার চেষ্টা বহু বছর ধরেই চলছে। নানারকম প্রযুক্তিতে টিকা বানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। আরএনএ টেকনোলজিতে (mRNA) ভ্যাকসিন বানিয়েছেন আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশিয়াস ডিজিজের গবেষকরা। কোভিড ভ্যাকসিনও একই পদ্ধতিতে বানানো হয়েছে। গবেষকরা বলছেন, এই ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগে আশার আলো দেখা গেছে। ভাইরাসের সঙ্গে লড়তে পারবে এমন অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে শরীরে। মানুষের শরীরে এই ভ্যাকসিনের ট্রায়াল যদি ১০০ শতাংশ সফল হয়, তাহলেই ইতিহাস তৈরি হবে আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে।
এইচআইভি (হিউম্যান ইমিউনো ডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস) লেন্টিভাইরাস গোত্রের একধরনের ভাইরাস যার সংক্রমণে এইডস রোগ হয়। এই ভাইরাসের টার্গেট শরীরে রোগ প্রতিরোধী টি-কোষ। এইচআইভি-র সংক্রমণ মানেই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি একেবারে তলানিতে চলে আসা। খুব দ্রুত মিউটেশন হয় এই ভাইরাসে। টি-কোষ (cd8+, cd4+), ম্যাক্রোফেজ ও ডেনড্রাইটিক কোষগুলিকে নষ্ট করতে শুরু করে এই ভাইরাস। ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভেঙে পড়ে। সাধারণ সংক্রমণ হলেও শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ে।
এইচআইভি-র সব রকমের রূপেই স্পাইক প্রোটিনগুলি থাকে একই ধরনের। এই স্পাইক প্রোটিনগুলিকে ব্যবহার করেই এইচআইভি ঢুকে পড়ে মানুষের শরীরে। তারপর ঝড়ের গতিতে মিউটেশন হয়ে সংখ্যায় বাড়তে থাকে। বিজ্ঞানীদের লক্ষ্য ছিল এমন টিকা বানানো যা, ভাইরাল প্রোটিনকে চিনে রাখতে পারে। এই ধরনের ভাইরাল প্রোটিন শরীরে হানা দিলে কী ধরনের ইমিউনিটি গড়ে তুলতে হবে তা ঠিক করতে পারে আরএনএ প্রযুক্তিতে তৈরি ভ্যাকসিনই। এই ধরনের ভ্যাকসিন শরীরে অ্যাডাপটিভ ইমিউনিটি তৈরি করতে পারে। নতুন টিকা সাত ধরনের বাঁদরের ওপর প্রয়োগ করে দেখা হয়েছিল। এদের মধ্যে চারটি টিকার ডোজ পাওয়ার পরে এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়নি।
মানুষের শরীরে এই ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করছে মোডার্না। ৫৩ জনের শরীরে এই টিকার ডোজ প্রয়োগ করা হয়েছে। এর আগে এইচআইভি-র যে ভ্যাকসিনগুলি তৈরি করা হয়েছিল তার কার্যকারিতা এক বছরও টেকেনি। তবে বিজ্ঞানীদের আশা, এই ভ্যাকসিন প্রায় ১০০ শতাংশ সফল হবে মানুষের শরীরে। তিন পর্যায়ের পরীক্ষার পরেই নিশ্চিত তথ্য দিতে পারবেন বিজ্ঞানীরা।