
মেনোপজ কখন হবে আগে থেকেই জেনে যাবেন মহিলারা, অবিশ্বাস্য খোঁজ বিজ্ঞানীদের
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বয়স চল্লিশ পার হলেই শরীরে নানা পরিবর্তন। ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়ার সময় যত এগিয়ে আসে শারীরিক ও মানসিক দিকে নানা বদল আসে মহিলাদের। কখনও মুড সুয়িং, কখনও শারীরিক অস্বস্তি। হরমোনের বাড়াকমা। সব মিলিয়ে মধ্যবয়সে মেনোপজ নিয়ে মহিলাদের আতঙ্ক থেকেই যায়। এই সময় শরীরেও যত্ন নিতে হয়। চল্লিশ পেরিয়েও যাঁরা মা হওয়ার জন্য ভাবনাচিন্তা করেন, তাঁদের চিন্তা আরও বেশি। পিরিয়ড অনিয়মিত মানেই যে মোনোপজের সময় এসে গেছে তেমনটাও নয়। এইসব উৎকণ্ঠা থেকে রেহাই পেতে এক অবিশ্বাস্য খোঁজ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
ইউরোপের বিজ্ঞানীদের এই আবিষ্কার নিয়ে এখন হইচই হচ্ছে বিজ্ঞানীমহলে। গবেষকরা এমন জিন খুঁজে পেয়েছেন যা বলে দেবে ৪০ থেকে ৫০ বছর বয়সী মহিলাদের মেনোপজ ঠিক কখন হবে। মেনোপজের আগে কী কী শারীরিক বদল হতে পারে তারও আভাস পাওয়া যাবে। মহিলারা নিজেদের শরীরে যত্ন নিতে পারবেন আগে থেকেই, তাছাড়া মানসিক উদ্বেগ থেকেও রেহাই মিলবে। চল্লিশ পেরিয়েও যাঁরা মাতৃত্বের স্বাদ পেতে চান তাঁদের জন্য বড় খোঁজ বলেই মনে করছেন গবেষকরা।
দু’লাখের বেশি মহিলার ওপর পরীক্ষা চালিয়ে ২৯০টি জেনেটিক ভ্যারিয়ান্টের খোঁজ পেয়েছেন গবেষকরা। এই জিনের বিন্যাস বের করে ওভারিয়ান এজিং বোঝাও সম্ভব। গবেষকরা বলছেন, এই ভ্যারিয়ান্টগুলো ক্ষতিগ্রস্থ ডিএনএ-র মেরামতির কাজ করে। জরায়ুর অবস্থা, ডিম্বানু উৎপাদনের ক্ষমতা ইত্যাদিও জানা যাবে এই জেনেটিক ভ্যারিয়ান্ট থেকে। ‘নেচার’ সায়েন্স জার্নালে এই গবেষণার খবর সামনে এসেছে।
মহিলাদের সাধারণত ৪০ বছর পার হওয়ার পর থেকেই শরীরের যত্ন বেশি নিতে হয়। একটা সময়ের পরে গিয়ে ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যায়। ওভারিতে ডিম্বানু উৎপাদনও বন্ধ হয়ে যায়। এই পর্যায়কে বলে মেনোপজ। ভারতী মহিলাদের ৪০ থেকে ৫০ বছরের মধ্য়ে মেনোপজ হয়। কিছু ক্ষেত্রে সার্জিক্যাল মেনোপজও হয়। অস্ত্রোপচারের কারণে জরায়ু বাদ দিলে ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যায়। সে সময় শরীরকে সুস্থ রাখতে হরমোনের থেরাপি করাতে হয়।
মেনোপজের লক্ষণ কীভাবে বোঝা যাবে—
অনিয়মিত পিরিয়ড শুরু হয়। অনেকের আবার হেভি ব্লিডিং হয়। পেট ব্যথা, শারীরিক অস্বস্তি হয় অনেকের। ঋতুস্রাবের পরিমাণ কমতে শুরু করে।
হরমোনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। খিদে কমে যাওয়া, কম ঘুম, এমনকি অনিদ্রা বা ইনসমনিয়া দেখা দেয় অনেকের।
মানসিক অবসাদ ও মুড সুয়িং এর একটা বড় লক্ষণ। মেনোপজের সময় এগিয়ে এলে ব্যবহারের কিছু বদল লক্ষ্য করা যায়। যখন তখন রাগ, বিরক্তিভাব দেখা যায়। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায় অনেকের।
ভ্যাজাইনাল ড্রাইনেস দেখা যায় অনেকের। পেশির ব্যথাও ভোগায়।
স্ত্রী যৌন হরমোন ইস্ট্রোজেন রক্তনালীর নমনীয়তা ধরে রাখে। মেদ বা ক্যালসিয়ামের স্তর জমতে দেয় না। ইস্ট্রোজেন হরমোন যতদিন স্বাভাবিকভাবে ক্ষরিত হয় হৃদপেশীকে শক্ত হতে দেয় না। ফলে হৃদপিণ্ডে রক্ত ও পুষ্টি উপাদান সরবরাহে বাধা তৈরি হয় না। কিন্তু মেনোপজের পরে ইস্ট্রোজেন ক্ষরণ কমতে শুরু করে। মেনস্ট্রুয়াল সাইকেল বন্ধ হয়ে যায়। ইস্ট্রোজেন হরমোনের পরিমাণ কমে যাওয়ায় রক্তনালীর মধ্যে প্লাক জমার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এই সময় কোলেস্টেরল বেড়ে যায় তাহলেই বিপদ। খারাপ কোলেস্টেরল ফাইব্রোলোজেনের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় যা ব্লাড ক্লটের অন্যতম কারণ। তখন আচমকা হার্ট অ্যাটাক বা ব্রেন স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায় মহিলাদের।
গবেষকরা বলছেন মেনোপজের সময় আগে থেকে জেনে গেলে মহিলারা সাবধান হতে পারবেন। Chek1 ও Chek2 এই দুই ধরনের জিন চিহ্নিত করে পরীক্ষা নিরীক্ষা শুরু করেছেন গবেষকরা। মহিলাদের শরীরে এই জেনেটিক ভ্যারিয়ান্টের প্রভাত কতটা তার খোঁজ চলছে।