
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)-এর এপিডেমোলজি বিভাগের প্রধান সমীরন পাণ্ডা বলছেন, ১১ মার্চ থেকে করোনার দাপাদাপি কমবে। মানুষজন যদি কোভিড বিধি মেনে চলেন, মাস্ক আর সোশ্যাল ডিস্টেন্সিং মানেন, তাহলে মার্চ মাস থেকেই সংক্রমণের তেজ কমবে। ধীরে ধীরে এন্ডেমিক পর্যায়ে চলে যাবে দেশ।
বিজ্ঞানী সমীরনের বক্তব্য, করোনার নতুন ভ্যারিয়ান্ট ওমিক্রন যদি ডেল্টাকে ছাপিয়ে যায়, তাহলেই কোভিডের স্ট্রেন দুর্বল হতে শুরু করবে। একটা সময়ের পরে ভাইরাসের বিভাজন থামবে। মিউটেশন বা জিনগত বদল বন্ধ হলেই আর নতুন প্রজাতির জন্ম হবে না। ফলে সংক্রমণ কমতে শুরু করবে।
এন্ডেমিক মানে হল, যখন নির্দিষ্ট ভৌগোলিক অঞ্চলে বা গোষ্ঠীর মধ্যে কোনও রোগ স্থায়ীভাবে আস্তানা তৈরি করে ফেলে। সেই রোগ তখন প্রাণঘাতী মহামারীর মতো ছড়ায় না, বরং ‘স্টেডি স্টেট’বা স্থিতিশীল পর্যায়ে থাকে। ঘরে ঘরে সেই অসুখ হতে পারে, তার চিকিৎসা ও রোগ থেকে বাঁচার উপায়ও মানুষ আয়ত্ত করে ফেলে। ফলে সংক্রমণ ওয়েভ বা ঢেউয়ের মতো বার বার আছড়ে পড়ে না। যেমন চিকেনপক্স এখন ব্রিটেনে এন্ডেমিক। কিন্তু ম্যালেরিয়া নয়।
বিজ্ঞানীর দাবি, কোনও রোগের তীব্রতা এবং মানুষের মধ্যে সেই রোগ কতটা ভয়ঙ্করভাবে ছড়িয়ে পড়ছে তা জানতে কিছু গাণিতিক মডেল তৈরি করা হয়। যেমন বেসিক রিপ্রোডাকশন নম্বর। কোভিডের সময় এই রিপ্রোডাকশন বা আর-নম্বর ওঠাপড়া করছে, কখনও বেশি, আবার কখনও কম। যদি দেখা যায়, এই আর-নম্বর একটা সময় স্থিতিশীল জায়গায় চলে গেছে, তাহলে বুঝতে হবে সেই মহামারীও এন্ডেমিক পরিস্থিতিতে চলে গেছে। কোভিডের ক্ষেত্রেও তেমনটাই হতে চলেছে।
এখন ভাইরাসের যে বদলগুলো হচ্ছে তা কিন্তু খুব একটা সাঙ্ঘাতিক পর্যায়ে হচ্ছে না। বিজ্ঞানী বলছেন, এই যে ডেল্টা ভ্যারিয়ান্ট থেকে ডেল্টা প্লাস এল, এর মধ্যে বদলটা সামান্যই হয়েছে। ডেল্টার পরে ওমিক্রনের সংক্রমণেও খুব বেশি জটিল রোগ হতে দেখা যায়নি। তাই যে নতুন ভাইরাস তৈরি হয়েছে তা খুব বেশি প্রভাব ফেলবে তেমনটা নাও হতে পারে। দেশে প্রথম যখন সার্স-কভ-২ মহামারী দেখা দিয়েছিল তখন মানুষ তার প্রতিরোধের উপায় জানত না। ভ্যাকসিনও তৈরি হয়নি তখন। কিন্তু এখন নানারকম ভ্যাকসিন তৈরি হয়ে গেছে। সংক্রমণ সারানোর চিকিৎসাপদ্ধতিও আছে। মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও আগের থেকে বেড়েছে। ভ্যাকসিন নিয়েছেন যাঁরা তাঁদের শরীরে ইমিউনিটিও বেড়েছে। কোভিডের পরবর্তী ওয়েভগুলো যে সাঙ্ঘাতিক হতে পারে এমন সম্ভাবনাও কম।