
গোয়েন্দা সূত্র জানাচ্ছে, লাদাখের পাহাড়ি এলাকা দখলে নেওয়ার জন্য ঘুরপথে তৈরি হচ্ছে চিন। তিব্বতে সামরিক পরিকাঠামো গড়ার কাজ আগে থেকেই শুরু হয়েছিল। শিকুয়ানহি ও তার আশপাশের এলাকাজুড়ে বিশাল সামরিক পরিকাঠামো গড়ে তুলছে চিনেল লাল ফৌজ, এমন ছবিও ধরা পড়েছিল উপগ্রহ চিত্রে। খবর মিলেছিল, অন্তত পাঁচ হাজার সেনা ও অস্ত্রশস্ত্র মোতায়েনের মতো পরিকাঠামো তৈরি হচ্ছে ওই এলাকায়। এর আগে ওই এলাকায় এমন পরিকাঠামো দেখা যায়নি। নতুন করেই নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে গত দুমাস ধরে যা খবর পাওয়া যাচ্ছে তা নতুন করে চিন্তা বাড়িয়েছে নয়াদিল্লির। তিব্বতের যুবকদের নিয়ে বিশেষ বাহিনী গড়ে চিন কি ফের লাদাখে আক্রমণের চেষ্টা চালানোর জন্য তৈরি হচ্ছে? সেই সন্দেহই জোরালো হচ্ছে। বিভিন্ন সূত্র মারফৎ জানা যাচ্ছে, তিব্বতের ইয়াদং কাউন্টি থেকে বেছে বেছে তিব্বতি যুবকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেছে চিন। পাহাড়ি এলাকায় যুদ্ধ করতে স্বচ্ছন্দ, হাড়হিম ঠান্ডার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারবে, চড়াই উৎরাই পাহাড়ি এলাকা হাতের তালুর মতো চেনা যে সব তিব্বতী যুবকদের, তাঁদেরই ঠাঁই হচ্ছে চিনা বাহিনীতে।
আরও একটা ব্যাপার আছে। এই ইয়াদং কাউন্টি সিকিমের ঠিক বিপরীতে। আর চিনের সেনাদের লক্ষ্য শুধু লাদাখ নয়, সিকিম ও অরুণাচলের সীমান্তেও আধিপত্য বিস্তার করা। তাই গোটা বিষয়টাই উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে। এই বিষয়ের উপর নজর রাখছে নয়াদিল্লি।
লাল ফৌজের তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে আকসাই চিনেও। ওই এলাকাকে বরাবরই ‘বিতর্কিত ভূখণ্ড’ বলে দাবি করে এসেছে ভারত। মানচিত্রে ভারতের উত্তর ও পূর্বে চিনের অধিকৃত তিব্বতের সঙ্গে প্রায় চার হাজার কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। ভারত বরাবরই দাবি করে এসেছে, ওই সীমান্তবর্তী এলাকার একটা বড় অংশ চিন অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে। ১৯৬২ সাল ভারত-চিন যুদ্ধের সময় লাদাখ ঘেঁষা আকসাই চিন দখল করেছিল চিনের বাহিনী। এরপরে আরও কয়েকধাপ এগিয়ে প্যাঙ্গং লেকের উত্তরে পাহাড়ি এলাকা, গালওয়ান উপত্যকা, দেপসাং, গোগরা, হট স্প্রিং থেকে একেবারে দৌলত বাগ ওল্ডি পর্যন্ত এলাকাকে নিজেদের বলে দাবি করা শুরু করে চিন। গালওয়ানে সংঘর্ষের পর থেকে ফের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টায় মরিয়া তারা। এমনকি এও দেখা গিয়েছে, কারাকোরাম পাসের ৩০ কিলোমিটার পূর্বে সমর লুঙ্গপায় ছোট ছোট ঘর তুলছে চিনা বাহিনী। রেচিন লা-র দক্ষিণে সাজুন পাহাড়ের কাছেও এমন নির্মাণকাজ দেখা গিয়েছে। এই সাজুন পাহাড়ের কাছে আন্তর্জাতিক সীমানা রয়েছে। তাই মনে করা হচ্ছে, ভবিষ্যতের কথা ভেবেই চিনা ফৌজ তাদের প্রস্তুতি সেরে রাখছে।
ভারতের স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্সের মতোই বাহিনী তৈরির চেষ্টায় চিন?
তিব্বতি যুবকদের চিনা বাহিনীতে নেওয়ার পেছনে আরও একটা কৌশল কাজ করছে বলেই মত প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের। আসলে, পূর্ব লাদাখের পাহাড়ি এলাকায় চিনের লাল ফৌজকে সবচেয়ে আগে রুখে দিয়েছিল যারা তারা হল ভারতীয় স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্স। তিব্বতি সেনাদের নিয়ে তৈরি এই সীমান্তরক্ষা বাহিনীই এখন লাল ফৌজের যম। ১৯৬২ সালে চিনের সঙ্গে যুদ্ধের সময় এই বিশেষ সীমান্তরক্ষী বাহিনী তৈরি করে ভারত। লাদাখের ভারতীয় নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় অতন্ত্র প্রহরীর মতোই পাহারা দেয় ভারতের এই দুর্ধর্ষ বাহিনী। এদের টপকে অনুপ্রবেশ এক কথা অসম্ভব চিনের সেনার কাছে।
পাহাড়ি খাঁজ, ভাঁজ যেখানে সাধারণ মানুষের পা রাখা অসম্ভব ব্যাপার সেখানেই অবাধ গতি এই বাহিনীর। আগ্নেয়াস্ত্রে নির্ভুল নিশানা। উঁচু পাহাড়ি এলাকার প্রচণ্ড ঠান্ডা, প্রতিকূল পরিবেশেও যুদ্ধ করার বিশেষ প্রশিক্ষণ আছে এই তিব্বতি বাহিনীর। গা ঢাকা দিয়ে অতর্কিতে শত্রুপক্ষের উপর হামলা চালাতে পারে, গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ আছে এই সেনাদের। সবচেয়ে বড় কথা হল, চিনের সেনারা কী রণকৌশল নিতে পারে তা আগে থেকেই আঁচ করতে পারে স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্স। তিব্বতি সেনাদের এমন দক্ষতা দেখে, চিনও হয়ত তাই তিব্বতের গ্রামগুলি থেকে কমবয়সী ছেলেদের বাছাই করে নেওয়ার কাজ শুরু করেছে। উদ্দেশ্য এমনই এক দুর্ধর্ষ বাহিনী তৈরি করা। অবশ্য ভারতীয় প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, এখনই চিন্তার কারণ ঘটেনি। কারণ চিনের মোকাবিলার জন্য সবরকম প্রস্তুতি আগে থেকেই সেরে রেখেছে ভারত।