
পুরভোট মাত্রেই জল সরবরাহ, জঞ্জাল পরিষ্কার, রাস্তাঘাট, আলো ইত্যাদি নাগরিক পরিষেবা মূল বিচার্য হয়ে থাকে। কিন্তু এবার শেষ পর্যন্ত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে শেষ পর্যন্ত অবাধ ভোটের বিষয়টি। অতীতে সাড়া রাজ্যের সঙ্গে কলকাতার ভোটেও রিগিং, সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠেছে শাসকদলের বিরুদ্ধে। এই ব্যাপারে বাম জমানার মতই দুর্নাম বর্তমান তৃণমূল শাসনের। ২০১৫- র কলকাতা পুরভোটে অশান্তি কিছু কম হয়নি। বুথ দখল আটকাতে গিয়ে এক পুলিশকর্মী গুলিবিদ্ধ হন। বহু মানুষ ভোটে দিতে পারেননি। শাসকের ভয়ে অনেক বুথে এজেন্ট দিতে পারেনি বিরোধীরা। স্বয়ং তৎকালীন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার দিনের শেষে স্বীকার করেছিলেন, ভোট তেমন অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হয়নি। সেই ভোট ১৪৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে তৃণমূল একাই পেয়েছিল ১১৪টি ওয়ার্ড।
এবার ভোটের বা বাজতেই শাসক দল তৃণমূল অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোটের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। দল ঘোষণা করেছে, জবরদস্তি ভোট করার চেষ্টা হলে দলে থাকা যাবে না। ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, তৃণমূল দুটি কারণে এমন ভালোমানুষি করছে। এক. বিরোধীরা দুর্বল এবং ভীত-সন্ত্রস্ত। বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের বিপুল জয়ের পর ভোট পরবর্তী হিংসায় বিরোধী শিবিরের কর্মী সমর্থকরা গুটিয়ে গিয়েছে। তারা শাসক দলের সঙ্গে সংঘাত এড়িয়ে চলছে। দুই. আগামী লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল মমতা বন্দ্যোাধ্যায়কে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে তুলে ধরতে চায়। মমতা বনদ্যোপাধ্যায় বিভিন্ন রাজ্যে প্রচারে যাবেন। কলকাতায় ভোট অবাধ না হলে তাঁকে অপ্রিয় পরিস্থিতির মুখে পড়তে হবে। তবে, তৃণমূলের ভালোমানুষির আসল কারণ, বিরোধীরা দুর্বল। শাসক দল নিশ্চিত বিরোধীরা কোনও কোনও চ্যালেঞ্জ নয় কলকাতার পুরভোটে। তবে কারণ যাই হোক না কেন, কলকাতায় আজ ভোটে কতটা অবাধ অনশন্তুপূর্ণ হয় সেদিকে সকলের নজর থাকবে। কলকাতা অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোট করে অতীতের কলঙ্ক মুক্ত হতে পারে কিনা সেটাই এখন দেখার।
আজ ১৪৪টি ওয়ার্ডের প্রার্থী সংখ্যা ৯৫০ জন। এরমধ্যে ১৪৪টি আসনেই লড়াই করছে তৃণমূল কংগ্রেস। বিজেপি লড়াই করছে ১৪২টি আসনে। কংগ্রেস ১২১। সিপিএম সহ অন্যান্য বাম দল লড়াই করছে ১২৯টি আসনে। কংগ্রেস এবং বাম একে অপরকে সমর্থন করছে ২৩টি আসনে।
কলকাতার যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাতে পুরবোর্ডে কোনও বড় রকমের রদবদলের সম্ভাবনা কোন মহল থেকেই দাবি করা হচ্ছে না। প্রধান চার শিবির তৃণমূল, বিজেপি, কংগ্রেস ও সিপিএম প্রত্যেকে প্রত্যেকের আলাদা আলাদা করে ইস্তেহার প্রকাশ করলেও তৃণমূল যেমন বোর্ড গড়ার ক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাসী, ঠিক সেইভাবে বোর্ড দখলের কথা এই প্রথম কোনও বিরোধী শিবিরের থেকে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে শোনা যায়নি।
বিরোধীরা বলছে, অবাধ ভোট হলে তারা ভাল সংখ্যক আসন পাবে।
আর একটি তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, কোনও দলেরই সরকারিভাবে কোনও মেয়র প্রার্থী নেই। দুদিন আগে ফুলবাগানের জনসভা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে বলতে গিয়ে বিদায়ী পুর প্রশাসক ফিরহাদ হাকিমের নাম নিয়েছিলেন। তা থেকে অনেকের ধারণা তৃণমূল বোর্ড গঠন করলে বিদায়ী পুর প্রশাসক ফিরহাদ হাকিমকেই মেয়র করা হবে।
সম্প্রতি দ্য ওয়ালকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকার ফিরহাদ হাকিম দাবি করেন, তৃণমূল ১৩০ থেকে ১৪০টি আসন পাবে। শুক্রবার প্রচারের শেষ পর্যায়ে তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন তারা অন্তত ১৩৫টা আসন পাবেন। শেষ পর্যন্ত ফলাফল কী হবে তা জানা যাবে ২১ তারিখ গণনার পরেই।
তবে আশ্চর্যের বিষয় হল তৃণমূল নেতাদের দাবির সঙ্গে পুরোটা মিলে গেছে একটি সমীক্ষা সংস্থার প্রাক-সমীক্ষার ফলাফলের সঙ্গে। সি-ভোটার নামে ওই সংস্থা জানিয়েছে তৃণমূল ১৩০টি মত আসন পেতে পারে। ঘটনা হল ৭ মাস আগে বিধানসভা ভোটে কলকাতার ওয়ার্ড ভিত্তিক ফলাফলে দেখা গিয়েছে তৃণমূল এগিয়ে ছিল ১৩২টি ওয়ার্ডে। তৃণমূল শিবির নিশ্চিত তারা নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বোর্ড গঠনের পথে।
প্রশ্ন হচ্ছে হবে দ্বিতীয় কে হবে? গত পুরভোটে বামেরা ছিল দ্বিতীয় স্থানে। তৃতীয় স্থানে ছিল বিজেপি। প্রাক-সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী, এবার বামেদের আরও ভরাডুবি হতে চলেছে। তারা পেতে পারে একটি আসন। প্রায় নিশ্চিহ্ন হওয়ার জোগাড় হবে কংগ্রেসের। অন্যদিকে, সামান্য হলেও বেশি আসন পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসবে বিজেপি।
এইসব কিছুই আলোচ্য বিষয়। তবে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল কলকাতায় কী অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোটের নজির গড়তে পারবে? শাসল দল তৃণমূল বারে বারে এই বিষয়ে আশ্বাস দিচ্ছে। বলছে, দলের কেউ যদি রিগিং, ছাপ্পা ভোট বা লোকদের ভয় দেখানোর মত কোনরকম ঘটনা ঘটায় তবে দল কাউকে ছেড়ে কথা বলবে না।