
নিজেরটা নিজের মতো করেই গুছিয়ে নিতে অভ্যস্ত তিনি। অকারণ কারও সাহায্য নেওয়া তাঁর স্বভাববিরুদ্ধ। অন্যের উপর নির্ভরশীল হওয়া তাঁর ভীষণ অপছন্দের জিনিস। বরং নিজের জোরেই সফল হওয়ার স্বপ্ন দেখেন তিনি। আর সেই জন্যেই বোধহয় আজ আনন্দ এত সফল। শুধু নিজের জীবনের উন্নতি নয়, সমাজের কল্যাণও করেছেন তিনি। পড়াশোনার সুযোগ করে দিয়েছেন হাজার হাজার মেধাবী অথচ গরিব ছাত্রছাত্রীদের। তাঁর কাছে পড়াশোনা করেই আইআইটি-তে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন বিহারের বহু গরিব-মেধাবী ছাত্রছাত্রী।
পড়াশোনায় বরাবরই মেধাবী ছিলেন আনন্দ নিজেও। ছোট থেকে স্বপ্ন দেখতেন শিক্ষক হবেন। অঙ্কই ছিল তাঁর ধ্যানজ্ঞান। সংখ্যা নিয়ে খেলা করা ছিল তাঁর প্যাশন, নেশা, ভালোবাসা—-সবকিছুই। কিন্তু আচমকাই স্বপ্নের ঘোর থেকে বাস্তবের মাটিতে ছিটকে পড়েছিলেন আনন্দ কুমার। হঠাৎই মারা গিয়েছিলেন তাঁর বাবা। অভাব অনটনের সংসারে পাঁপড় বেচে শুরু হয়েছিল দুই ভাইয়ের দিন-গুজরান। স্বচ্ছল ভাবে পড়াশোনা করা আর হয়নি। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাক পেয়েও পড়তে যেতে পারেননি। সে সময় বিমান ভাড়া জোগাড় করা কেবল অসম্ভব নয়, বোধহয় খানিক বিলাসিতাও ছিল আনন্দের পরিবারের পক্ষে।
তখন আনন্দের পাশে ঢাল হয়ে দাঁড়িছিলেন তাঁর ভাই। আনন্দকে তিনি বলেছিলেন আশেপাশের দুঃস্থ মেধাবীদের পড়িয়ে শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে। ভাইয়ের কথাগুলোই ছিল আনন্দের জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। আনন্দ বলেন, “টাকার জন্য কারও পড়াশোনা হবে না, কেরিয়ার থেমে যাবে, এটা ভাবতেই পারি না আমি। চাই ও না এসব ভাবতে। শুধু কাজ করতে চাই ওদের জন্য। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত।” তবে এই অসংখ্য ছাত্রছাত্রীদের পড়ানোর বিনিময়ে কোনও টাকা নেন না আনন্দ। এমনকী কারও থেকে কোনও সাহায্য, কোনও অনুদানও নেন না।
ভারতের প্রায় সকলেই জানেন, এ দেশের অসংখ্য পড়ুয়া, বিশেষ করে বিহারের দুঃস্থ মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের অনেকেই আনন্দ কুমারের জন্যই পৌঁছতে পেরেছেন আইআইটি-র ক্যাম্পাসে। ডাকাতি, মাফিয়ারাজ, কয়লা সন্ত্রাস, খুনখারাপি——এই সব কিছুর বাইরেও বিশ্বের দরবারে বিহারের এক অন্য পরিচিতি রয়েছে এই আনন্দ কুমারের জন্যই। কিন্তু এ হেন আনন্দের বিরুদ্ধেও উঠেছিল অভিযোগ। শোনা গিয়েছিল, তিনি নাকি বিভ্রান্ত করেছেন আইআইটি পরীক্ষা দিতে যাওয়া পড়ুয়াদের। এমনকী বিভিন্ন কোচিং সেন্টার থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগও উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে।
যদিও সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে আনন্দ জানিয়েছেন, “কাউকে পড়ানোর বিনিময়ে কোনও পয়সা নিই না আমি। অনুদানও নিই না। মুকেশ আম্বানি, আনন্দ মহিন্দ্রা সকলেই আমায় অফার দিয়েছিলেন। কিন্তু আমি নিইনি। সকলের সঙ্গেই দেখা করেছি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গেও দেখা হয়েছে আমার। কিন্তু কারও থেকে কোনও টাকাপয়সা বা অনুদান নিইনি আমি।” টুইট করে এ কথা জানিয়েছেন স্বয়ং আনন্দ মহিন্দ্রাও।
Anand Kumar says in the article that he turned down my offer to fund his efforts. I confirm that when we met, he courteously declined my offer of financial support. I remain an admirer of how he’s changed the lives of so many. https://t.co/3Gn3V1Qdlp pic.twitter.com/fAFqYg6UtU
— anand mahindra (@anandmahindra) July 13, 2019
আজ অবশ্য তিনি সেলিব্রিটি। সেলুলয়েডে আসছে আনন্দ কুমারের জীবনের গল্প। তাঁর চরিত্রে অভিনয় করছেন বলিউডের অন্যতম হ্যান্ডসাম নায়ক হৃত্বিক রোশন। বিশ্বের দরবারে ছড়িয়ে পড়বে সমাজের জন্য তাঁর কাজের কথা, তাঁর জীবনের স্ট্রাগলিং পিরিয়ডের গল্প। কিন্তু এত আনন্দের জীবনের সব সুখের মধ্যেও কোথাও যেন রয়েছে বিষাদের ছোঁয়া। কারণ ব্রেন টিউমারে (acoustic neuroma) আক্রান্ত তিনি। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বাঁচবেন মাত্র ১০ বছর। বর্তমানে মুম্বইয়ের হিন্দুজা হাসপাতালের বিখ্যাত নিউরোসার্জেন ডাক্তার বিকে মিশ্রার তত্ত্বাবধানে রয়েছেন আনন্দ কুমার।