
দীর্ঘ আলাপ আলোচনা, দল এবং আইপ্যাকের মতো বিভিন্ন বেসরকারি সমীক্ষা এজেন্সির রিপোর্ট ইত্যাদি পর্যালোচনার পর ঠিক হয়েছিল অন্তত একশো বিধায়ককে এবার টিকিট দেওয়া হবে না। কিন্তু বিগত দু’দিনে দুই মন্ত্রী ও বেশ কয়েকজন বিধায়কের দল ছাড়া এবং দলীয় পদ থেকে কিছু নেতার ইস্তফার কারণে বিচলিত বিজেপির দিল্লির নেতৃত্ব। মঙ্গলবার থেকে দিল্লিতে শুরু হয়েছে ভোটমুখী রাজ্যগুলির নেতৃত্বের সঙ্গে বিজেপির কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটির বৈঠক। উত্তরপ্রদেশ নিয়ে দু’দিনই আলোচনা ছিল। বৈঠক চলবে আজও। আগামীকাল শুক্রবার দল প্রথম দু-দফার প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করতে পারে।
বুধবারের আলোচনায় বেশি রাতে যোগ দেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা বিজেপির উত্তরপ্রদেশের ভোটের মূল কারিগর অমিত শাহ। ছিলেন উত্তরপ্রদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান, মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এবং বিজেপির অন্য নেতারা। সূত্রের খবর, অমিত শাহ বৈঠকে নির্বিচারে প্রার্থী বদলের সিদ্ধান্তে আপত্তি তোলেন। তাঁর যুক্তি, বিপুল সংখ্যায় প্রার্থী বদল করলে বিরোধীরা সেটা ইস্যু করবে। তারা বলবে, বিজেপি যদি সুশাসনই দিয়ে থাকবে তাহলে এত প্রার্থী বদল করতে হল কেন? তবে বিজেপি সূত্রের খবর, অমিত শাহের এই নিদানের আসল কারণ, উত্তরপ্রদেশে দলে বিদ্রোহ থামানো। গোয়েন্দা সূত্রে দল জানতে পেরেছে, আগামী দিনে আরও অনেক বিধায়ক, নেতা দল ছাড়তে পারে। নির্বিচারে বিধায়কদের টিকিট কেটে দিলে বিদ্রোহ দেখা দেবে। তাতে শুধু উত্তরপ্রদেশ নয়, গোটা দেশেই বিজেপিকে বিপাকে পড়তে হতে পারে। উত্তরপ্রদেশের উপর নির্ভর করবে ২০২৪-এর লোকসভার লড়াইয়ের ভবিষ্যৎ।
প্রাথমিকভাবে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতারা একশো বিধায়ককে টিকিট না দেওয়ার সিদ্ধান্ত করেছিলেন। অমিতের হস্তক্ষেপে সংখ্যাটা চল্লিশে নামিয়ে আনা হয়। একটি সূত্রের বক্তব্য, যে একশো জনকে বাদ দেওয়ার কথা হয়, ঘটনাচক্রে তাঁদের বেশিরভাগই মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের অপছন্দের মানুষ। ফলে বাদ দেওয়ার প্রস্তাবের পিছনে যোগীর ব্যক্তিগত স্বার্থ কাজ করে থাকবে। সেটাও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে মাথায় রাখতে হচ্ছে। কারণ, ২০১৭-র ভোটের সময় যোগীর কোনও বিধায়ক টিম ছিল না। তিনি নিজে ছিলেন সাংসদ। ভোটের পর দল তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী করে।
বিজেপি মনে করছে, দলত্যাগে সমস্যা হতে পারে অতি পিছড়া সম্প্রদায়ের সমর্থন পাওয়া নিয়ে। বিগত দুটি লোকসভা এবং একটি বিধানসভা নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশে এই সম্প্রদায়ের সমর্থনের জোরেই বিজেপি ভালে ফল করেছে। নরেন্দ্র মোদী দলের মুখ হওয়ার পর সমাজের এই অংশে বিজেপির সমর্থন বেড়েছে। সম্প্রতি দল ছেড়ে যাওয়া মন্ত্রী, বিধায়কদের এই অংশের সঙ্গে গভীর যোগাযোগ। ফলে ভোটের বাক্সে প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না পদ্ম শিবির।