
হঠাৎ করে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়লে কী করতে হবে, কেমন ভাবে রোগীর যত্ন নিতে হবে, সঙ্কটাপন্ন রোগীরাই বা কী করবেন, সে বিষয়ে নতুন গাইডলাইন সামনে এনেছে দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস (এইমস) ও ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)। কী করবেন, কী কী নিয়ম মানবেন, আর কী কী করবেন না তা বিস্তারিত বলেছেন অভিজ্ঞ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
মৃদু সংক্রমণের রোগীদের ক্ষেত্রে–
অল্প সংক্রমণ, শ্বাসকষ্ট নেই
করোনা সংক্রমণ রয়েছে তবে মৃদু। শ্বাসকষ্ট নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন অবস্থায় জীবাণু শ্বাসনালী দিয়ে ফুসফুসে পৌঁছতে পারেনি, তাই জটিল উপসর্গ দেখা যায়নি। এমন অল্প সংক্রমণ ধরা পড়লে কী কী করতে হবে—
প্রথমত হোম আইসোলেশন বা অন্দরবাসেই থাকাটা জরুরি।
বাড়িতেও পরতে হবে মাস্ক, পারস্পরিক দূরত্ব মানতে হবে।
স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে বেশি খেয়াল রাখতে হবে।
শরীরের তাপমাত্রা বাড়ছে কিনা খেয়াল রাখতে হবে, অক্সিজেনের মাত্রা বা অক্সিজেন স্যাচুরেশন লেবেল পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শে অতি অবশ্যই থাকতে হবে।
যদি শ্বাসকষ্ট শুরু হয়
যদি শ্বাসের সমস্যা শুরু হতে থাকে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
শ্বাসকষ্ট, সেই সঙ্গে জ্বর, শুকনো কাশি মানেই সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। টানা পাঁচদিন যদি এমন উপসর্গ থাকে তাহলে সতর্ক হতেই হবে।
থেরাপি হবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ মেনে। নিজে থেকে ডাক্তারি করে ওষুধ খেতে গেলে বিপদ আরও বাড়বে। এই সময় ডাক্তাররা আইভারমেকটিন, হাইড্রক্সোক্লোরোকুইন ট্যাবলেট দিয়ে থাকেন তবে রোগীর শারীরিক অবস্থা ও রোগের উপসর্গ দেখে। ইনহেলার (৮০০ মাইক্রোগ্রাম বিডি) দিয়েও চিকিৎসা শুরু হয়।
মাঝারি সংক্রমণের রোগীদের ক্ষেত্রে—
শ্বাসকষ্ট রয়েছে, শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কম, তাহলে কী করতে হবে—
রেসপিরেটারি রেট যদি মিনিটে ২৪ এর বেশি হয়, শ্বাস নিতে সমস্যা হয় রোগীর, অক্সিজেন স্যাচুরেশন লেভেল ৯০ থেকে ৯৩ হয় তাহলে রোগীকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করাতেই হবে।
অক্সিজেন স্যাচুরেশনের মাত্রা ৯২ থেকে ৯৬% করার চেষ্টা করবেন ডাক্তাররা। (সিওপিডি রোগীদের ক্ষেত্রে ৮৮-৯২%)।
অক্সিজেন মাস্ক পরানো হতে পারে রোগীকে। রোগীর চাহিদা বুঝে অক্সিজেন থেরাপি শুরু হবে।
শরীরের প্রদাহ কমাতে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেশন থেরাপি করবেন ডাক্তাররা। সাধারণত মিথাইলপ্রেডনিসোলোনের দুটি ডোজ দিয়ে ৫-১০ দিন ট্রিটমেন্ট করা হয়।
ক্লিনিকাল মনিটরিং দরকার। ওয়ার্ডে রোগীকে সর্বক্ষণ পর্যবেক্ষণে রাখতে হয়। রোগীর শরীরে কোথাও রক্ত জমাট বাঁধার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে কিনা তা খেয়াল রাখেন ডাক্তাররা। অক্সিজেনের যোগান সময় সময় বদলানোর দরকারও পড়ে।
📢 Latest Clinical Guidance for Management of Adult #COVID19 Patients‼️
For more details: https://t.co/GXFhozHWVN#Unite2FightCorona #StaySafe pic.twitter.com/N64dUuATti
— #IndiaFightsCorona (@COVIDNewsByMIB) April 22, 2021
সঙ্কটাপন্ন কোভিড রোগীর ক্ষেত্রে—
হাসপাতালে ভর্তি ছাড়া গতি নেই। কোভিড বেড এবং ভেন্টিলেটর সাপোর্ট থাকা দরকার।
শরীরে ভাইরাল লোড বেশি থাকলে অক্সিজেনের মাত্রা কমতে শুরু করে। তীব্র শ্বাসকষ্ট শুরু হতে পারে রোগীর। এইসময় এনআইভি (হেলমেট বা ফেস মাস্ক)ব্যবহার করেন ডাক্তাররা। অক্সিজেনের মাত্রা বাড়ানোর জন্য কৃত্রিমভাবে অক্সিজেন সাপোর্ট দেওয়া হয় রোগীকে।
অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেশন ওষুধের ডোজ আরও বাড়ানো হয়। এই সময় রোগীর শরীরে সাইটোকাইন স্টর্ম শুরু হতে পারে। অর্থাৎ শরীরে প্রদাহজনিত রোগ দেখা দিতে পারে। তার জন্য থেরাপি আছে।
ফুসফুসের সংক্রমণ জটিল হলে প্রয়োজনে চেস্ট-এক্স রে করেন ডাক্তাররা। সেই মতো চিকিৎসা শুরু হয়।
এইমস ও আইসিএমআরের গাইডলাইনে বলা হয়েছে, রেমডেসিভির ওষুধ বিশেষ প্রয়োজনেই ব্যবহার করা যেতে পারে। মাঝারি থেকে সঙ্কটাপন্ন রোগী যাদের শ্বাসের সমস্যা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রেই গাইডলাইন মেনে এই ওষুধের থেরাপি করা যেতে পারে।
শুধুমাত্র আইসিইউ-তে ভর্তি সঙ্কটাপন্ন রোগীদের ক্ষেত্রেই টোসিলিজুমাব ওষুদের থেরাপি করা যেতে পারে।