
নাসা জানাচ্ছে, ভারত, আমেরিকা, ইউরোপ-সহ গোটা বিশ্বেই গত এক দশক ধরে বছর বছর তাপমাত্রা বাড়ছে। এর মধ্যে উষ্ণতম ছিল ২০১৬ এবং ২০২০। গত বছরও তাপমাত্রার পারদ চড়েছিল। নোয়া-র পরিসংখ্যান বলছে, গত বছর বিশ্বের গড় তাপমাত্রা ছিল ১৪.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা সাড়ে ৫৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট।
আবহবিদেরা বলছেন, প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়ম হল দক্ষিণ আমেরিকার উপকূল থেকে উষ্ণ সমুদ্রের জল পশ্চিমে সরে গিয়ে কেন্দ্রীভূত হয় এশিয়া-অস্ট্রেলিয়া উপকূলের কাছে। এর উল্টো প্রক্রিয়াটাই ‘এল নিনো’। এর ফলে প্রশান্ত মহাসাগরের যে অংশের অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা থাকার কথা, সেটি উষ্ণ হতে শুরু করে। সমুদ্রের সেই অতিরিক্ত তাপ নির্গত হয় সমুদ্রপৃষ্ঠের বাতাসে। তার জেরে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। ভারতেও একাধিক বার এর প্রভাব পড়েছে। এল নিনো সক্রিয় হলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ে আর তা দুর্বল হলে বিপরীত প্রতিক্রিয়ায় বাড়তে থাকে শীতলতা। তাকেই বলে লা নিনা।
আবহবিদরা বলছেন লা নিনার পরেও সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা কমতে দেখা যায়নি, বরং তা বেড়েছে। নোয়ার তথ্য বলছে, ২০১৬, ২০১৫ সালের পরে ২০১৭ সাল তৃতীয় উষ্ণতম বছর। নাসা এবং নোয়ার গবেষকদের মতে, ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে এল নিনো সক্রিয় ছিল। গবেষকদের কেউ কেউ বলছেন, এল নিনো দুর্বল হয়ে লা নিনা এলেও নানা কারণে তা হয়তো সক্রিয় হতে পারেনি। দুর্বল লা নিনা-র জন্যই তাপমাত্রার পারদ চড়েছে।
বিশ্ব উষ্ণায়ণের থাবা একেবারে জাঁকিয়েই বসেছে। তাপমাত্রা যত বাড়ছে ততই বিশাল বিশাল হিমবাহে ফাটল ধরছে। ভেঙে যাচ্ছে মেরুপ্রদেশের হিমশৈল। বরফ গলে জল হয়ে সমুদ্রের জলস্তর বাড়াচ্ছে। সম্প্রতি বিজ্ঞানীদের গবেষণা চমকে দেওয়ার মতোই খবর শুনিয়েছে। সেই ১৯৯০ সাল থেকে শুরু করে ২০১৭ সাল অবধি গত ২৩ বছরে প্রায় ২৮ লক্ষ কোটি টন বরফ উধাও হয়ে গেছে পৃথিবী থেকে।
গবেষকরা বলছেন, রেকর্ড হারে বরফ গলছে মেরু অঞ্চলগুলিতে। বিশেষত গত কয়েক বছরে গ্রিনল্যান্ডে বড় বড় বরফের চাঁই অদৃশ্য হয়েছে। যার মানেই হল সেইসব হিমশৈল গলে সমুদ্রে মিশে গেছে। যার ফলে সমুদ্রের জলস্তরও বেড়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, বরফ গলার হার যত বাড়বে, তত বাড়বে পৃথিবীর উষ্ণতা। আর তত দ্রুত গতিতে গলতে থাকবে বরফ। অর্থাৎ গোটাটা চক্রবৃদ্ধিহারে এগোতে থাকবে।