Latest News

করোনা আবহে এভারেস্ট কি এবার ‘ট্র্যাফিক জ্যাম’ মুক্ত? নেপালের বিধি অন্তত তাই বলছে

দ্য ওয়াল ব্যুরো: করোনা সংক্রমণের জেরে বিশ্বজুড়ে লকডাউন পরিস্থিতিতে গত একটা বছর নেপাল বন্ধ রেখেছিল সমস্ত শৃঙ্গ আরোহণের দরজা। এভারেস্ট-সহ কোনও শৃঙ্গেই পা পড়েনি অভিযাত্রীদের। নেপালের পর্যটন শিল্প ধাক্কা খেলেও, অনেকেই বলেছেন, শৃঙ্গগুলি যেন হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে গোটা একটা মরসুম। তবে এবার আর বন্ধ থাকছে না অভিযান। করোনা পরিস্থিতি ঠিক না হলেও, মূলত পর্যটন তথা অর্থনীতির কথা ভেবেই শৃঙ্গ অভিযানের দুয়ার খুলে দিয়েছে নেপাল, যদিও চাপানো হয়েছে একাধিক শর্ত।

এভারেস্ট শৃঙ্গের ঠিক নীচে যেখানে হিলারি স্টেপ, সেখান থেকে নীচের দিকে নেমে আসা অভিযাত্রীর গিজগিজে ভিড় প্রতি বছরের চেনা ছবি। এই বিষয়টি ‘এভারেস্টের ট্র্যাফিক জ্যাম’ বলে পরিচিত। দুরূহ হিলারি স্টেপ পার হতে এক এক জন অভিযাত্রীর যত সময় লাগে, ততক্ষণে আরও অভিযাত্রী এসে পৌঁছতে থাকেন সেখানে। বাড়তে থাকে ভিড়।

Traffic jam' on Everest as two more climbers die reaching summit

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালেই এভারেস্ট অভিযানে গিয়ে ‘ট্র্যাফিক জ্যামের’ ফাঁদে পড়ে মৃত্যু হয়েছিল ১০-১২ জন আরোহীর। এভারেস্ট সামিট করার জন্য যে তিন-চার দিনের ভাল আবহাওয়া (অভিযান পরিভাষায় উইন্ডো) পাওয়া যায়, সেই ক’দিনের মধ্যেই সমস্ত অভিযাত্রী শৃঙ্গ ছোঁয়ার জন্য রওনা দেন। ফলে শৃঙ্গের নীচের অপরিসর পথে দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। সে লাইনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অনেকেরই অক্সিজেন, জল শেষ হয়ে যাওয়ায় বিপদ নেমে আসে। অনেকে আবার উচ্চতাজনিত অসুখে অসুস্থ হয়ে পড়েন।

এইবার করোনার সৌজন্যেই সেই দৃশ্য আর দেখা যাবে না। কারণ নেপাল সরকার আপাতত মাত্র ৩০০ পর্বতারোহীকে এভারেস্টে চড়ার অনুমতি দিয়েছে। সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, সময় গড়ালে এবং সব ঠিক থাকলে পর্বতারোহীর সংখ্যা বাড়ানো হবে। মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত মাউন্ট এভারেস্টে পর্বতারোহনের মরসুম চলে। এই গোটা সময়টা গায়ে গা লাগিয়ে পর্বতারোহণ বন্ধ। পরস্পরের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখেই চড়তে হবে পর্বতারোহীদের। ফলে হিলারি স্টেপের ওই থিকথিকে ভিড় এবার অনুমতিই পাবে না।

Traffic Jam at Mount Everest! What really happened at world's tallest  summit - The Financial Express


শুধু তাই নয়, জানানো হয়েছে, যে কোনও পর্বতারোহীকে কাঠমাণ্ডু বিমানবন্দরে আরটিপিসিআর-এ নেগেটিভ রিপোর্ট অথবা টিকাকরণের সার্টিফিকেট দেখাতে হবে। এর পরে এভারেস্ট অভিযানের আগে পর্বাতারোহীকে ফের করোনা টেস্ট করাতে হবে। এভারেস্টের বেস ক্যাম্পে মেডিকেল টিম থাকবে। সংক্রমিত পর্বতারোহীদের চিকিৎসার দায়িত্ব থাকবে সেই টিমের উপর।

Sleep at Everest Base Camp | Stay overnight at Everest base camp

মাস্ক ছাড়া আরোহণ করা যাবে না কোনও শৃঙ্গেই। পর্বতারোহীরা পরস্পরের সঙ্গে কোলাকুলি করতে পারবেন না। দূর থেকেই তাঁদের হাত জোড় করে নমস্কার করতে হবে।

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে নেপালের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, যে মুনাফার লোভে ঢালাও অভিযানের অনুমোদন দিয়ে তারা আদতে হিমালয়েরই ক্ষতি ডেকে এনেছে। ঝুঁকির মুখে ফেলেছে আরোহীদেরও। সেই দিক দিয়ে বিচার করলে গত বছরের আরোহণ মরসুমে বিশ্রাম পেয়েছে হিমালয়। মানুষের পায়ের ছাপ, বর্জ্য, দূষণ– এই ক্ষতিগুলি বহন করতে হয়নি তাকে।

Mount Everest Base Camp in Tibet closed by China To Tourists (Non-Climbers)  To Tackle Littering In the High-Himalayas.| Nepal Calls You

তবে নেপালের পর্যটন বিভাগ তাদের দেশের পর্যটন শিল্প বাঁচানোর জন্য এবার উঠেপড়ে লেগেছে। গত এক বছরে দেশের আর্থিক ক্ষতির অঙ্কটা বেশ বড়। তাই চলতি বছর করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সত্ত্বেও তারা এভারেস্টে আরোহন শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নেপালের তিন কোটি জনসংখ্যার মধ্যে ১৫ লাখ মানুষ গত বছর করোনার জন্য কাজ হারিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে একটা বড় অংশের জীবিকা নির্ভর করে এভারেস্ট চড়তে আসা পর্বতারোহীদের উপর। তাঁরা শেষমেশ কাজে ফিরতে পারবেন।

You might also like