
ট্রপেক্স নৌ-মহড়ে হবে আগামী বছর জানুয়ারিতে। তার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে এখনই। অক্টোবরে যুদ্ধজাহাজ ও সাবমেরিন নিয়ে প্রস্তুতি চালাবে ভারতের নৌসেনা। এই প্রস্তুতিতে যোগ দেবে নৌসেনার ওয়েস্টার্ন কম্যান্ড ডিফেন্স অব গুজরাত (DGX) এবং ইস্টার্ন ন্যাভ্যাল কম্যান্ড অপারেশনাল রেডিনেস এক্সারসাইজ (ENCORE) । ভারতীয় নৌসেনা সূত্র জানাচ্ছে, প্রায় এক মাস ধরে চলবে এই নৌ-মহড়ার প্রস্তুতি।
নৌসেনার চিফ অ্যাডমিরাল অরুণ প্রকাশ বলেছেন, গত বছর জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে হয়েছিল এই ট্রপেক্স মহড়া। যোগ দিয়েছিল ৬০টি নৌসেনার জাহাজ, ১২টি কোস্ট গার্ড শিপ ও ৬০ টি এয়ারক্রাফ্ট।
গত বছর পুলওয়ামা হামলা ও তার প্রত্যাঘাতে বালাকোট স্ট্রাইকের সময়েই বিমানবাহী রণতরী আইএনএস বিক্রমাদিত্য ও পরমাণু শক্তিবাহিত সাবমেরিন আরব সাগরে মোতায়েন করেছিল ভারতীয় নৌসেনা। সেই সময়ের ট্রপেক্স মহড়ায় যুদ্ধবিমানবাহী রণতরী বিক্রমাদিত্য সহ একটি নৌবহর অংশ নিয়েছিল। উত্তর আরব সাগরে একাধিক রণতরী ও অ্যাটাক সাবমেরিন পাঠিয়েছিল ভারত। নৌবাহিনীর এই রণসাজ দেখে পাকিস্তান আর সমুদ্রপথে উৎপাতের কোনও চেষ্টা করেনি।
ট্রপেক্স মহড়া কী?
নৌসেনার চিফ অ্যাডমিরাল বলছেন, চিন যেভাবে সমুদ্রপথেও আগ্রাসন দেখাচ্ছে তাতে ভারতের শক্তি প্রদর্শন করা খুবই দরকার। ট্রপেক্স মহড়া হবে ভারতের সেই চ্যালেঞ্জ। ২০০৫ সালে প্রথম এই নৌ-মহড়া শুরু করে ভারতীয় নৌবাহিনীর ওয়াস্টার্ন ন্যাভ্যাল কম্যান্ড। গোয়া উপকূলে হয়েছিল সেই মহড়া। এর পর থেকে প্রতি বছরই এই নৌ-মহড়ার আয়োজন করে ভারত। ২০১৬ সালে ট্রপেক্স হয়নি, তবে ২০১৭ সালে বৃহত্তর নৌ-মহড়া চালায় ভারতের নৌসেনা। ট্রপেক্স নৌ-মহড়ার বৈশিষ্ট্য হল, সমুদ্রপথে যেমন আধুনিক রণতরী সাজানো হয়, তেমনি নিউক্লিয়ার অ্যাটাক সাবমেরিনও তাদের শক্তি প্রদর্শন করে। পাশাপাশি, আকাশপথে চক্কর কাটে বায়ুসেনা ও নৌসেনার ফাইটার এয়ারক্রাফ্ট।
সাবমেরিন বিধ্বংসী রণকৌশল বা অ্যান্টি-সাবমেরিন ওয়ারফেয়ারে ভারতীয় নৌবাহিনী কতটা দক্ষ তার বিশদ প্রদর্শনী হয় এই মহড়ায়। মিসাইল ডেস্ট্রয়ার সাবমেরিনও যোগ দেয় এতে। শব্দের চেয়ে দ্রুত গতির ক্রুজ মিসাইল ব্রাহ্মসের প্রদর্শনীও হয় ট্রপেক্স মহড়ায়। তাছাড়া, ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী জাহাজ থেকে নির্ভুল লক্ষ্যে মিসাইল ছুড়ে তার শক্তিও দেখানো হয়।
ট্রপেক্স মহড়ায় যোগ দেয় বায়ুসেনার সুখোই-৩০ এয়ারক্রাফ্ট, নৌসেনার মিগ ভ্যারিয়ান্ট। তাছাড়া নৌবাহিনীর পি-৮১ এয়ারক্রাফ্টও চক্কর কাটে আকাশে। চিফ অ্যাডমিরাল বলছেন, ট্রপেক্স হল একপ্রকার যুদ্ধ-মহড়া। পুরোপুরি যুদ্ধের মতো রণবিন্যাস সাজানো হয়। আকাশ ও সমুদ্রপথে শক্তি প্রদর্শন করে ভারতীয় বাহিনী।
ভারত প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে চিনের একাধিপত্য নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই অশান্তি চলছে। গালওয়ান সীমান্ত সংঘাতের আগেই ভারত মহাসাগরে ক্ষেপণান্ত্র প্রতিরোধী চিনা যুদ্ধজাহাজের আনাগোনা লক্ষ্য করা গিয়েছিল। বস্তুত, চলতি বছরের শুরুতেই ভারত মহাসাগরে বিশেষ ব্যবসায়িক এলাকা (এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোন) ও আঞ্চলিক জলসীমার কাছাকাছি কয়েকটি চিনা জাহাজকে ঘোরাফেরা করতে দেখা গিয়েছিল। বেজিং দাবি করেছিল, জলদস্যু দমনের জন্যই নামানো হয়েছিল ওই জাহাজগুলিকে। কিন্তু ভারতীয় নৌসেনার নজরদার বিমানে ধরা পড়ে চিনা জাহাজগুলিকে ঘিরে রেখেছে পিপল’স লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) যুদ্ধজাহাজ। চিনের লক্ষ্য গোটা ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সাবমেরিন পাঠিয়ে এলাকায় নিজেদের নৌসেনার আধিপত্য কায়েম করা, সেটা কোনওভাবেই বরদাস্ত করবে না ভারত। চিনকে আরও কড়া বার্তা দিতে সমুদ্রেও রণসজ্জা তৈরি করেছে ভারত। ভারত মহাসাগরে মোতায়েন করা হয়েছে নৌবাহিনীর একগুচ্ছ যুদ্ধজাহাজ।
পাশাপাশি, অত্যাধুনিক সাবমেরিন বানানোর পথেও হাঁটছে ভারত। ‘পি-৭৫ আই’ প্রকল্পে ৬টি অত্যাধুনিক সাবমেরিন বা ডুবোজাহাজ কেনার চুক্তি পাকা হয়ে গেছে। এখন দেশের হাতে আছে রাশিয়ার থেকে লিজ নেওয়া নিউক্লিয়ার সাবমেরিন আইএনএস চক্র। ২০২২ সাল পর্যন্ত এই সাবমেরিন ভারতের হাতেই থাকবে। তাছাড়া রয়েছে ভারতের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি আইএনএস অরিহন্ত। ভারত ও ফ্রান্সের যৌথ উদ্যোগে তৈরি স্করপেন শ্রেণির দুটি সাবমেরিনও সমুদ্রে নামিয়েছে ভারত। এদের নাম আইএনএস কলবরী এবং আইএনএস খান্ডেরি। স্করপেন শ্রেণির সাবমেরিন প্রযুক্তিতে ও আক্রমণাত্মক ক্ষমতায় সেরা। জলের তলায় নিঃশব্দে ঘোরাফেরা করতে পারে এই সাবমেরিন। ডিজেল-ইলেকট্রিক ক্লাসের থেকেও প্রযুক্তিতে উন্নত। গোপনে আঘাত করে শত্রুপক্ষের যুদ্ধজাহাজে। স্করপেন থেকে টর্পেডো ও অ্যান্টি-শিপ গাইডেড মিসাইলও নিক্ষেপ করা যায়। গোপনে শত্রুপক্ষের নৌবাহিনীর খবরও আনতে পারে এই ডুবোজাহাজ।