
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বর্ষার মরশুমে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগের প্রকোপ বেড়েছে (Viral Fever)। আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। একদিকে করোনার মধ্যেই ভাইরাল জ্বর, ইনফ্লুয়েঞ্জা (Influena) হানা দিচ্ছে ঘরে ঘরে, অন্যদিকে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মশাবাহিত রোগ যেমন ডেঙ্গি, (Dengue) ম্যালেরিয়া (Malaria)। সেই সঙ্গে আবার স্ক্রাব টাইফাসের উপদ্রবও বেড়েছে। পোকায় কাটা জ্বরে ভুগছে শিশুরা।
সব থেকে বড় কথা হল কোন রোগের কী লক্ষণ তাই ধরা যাচ্ছে না। জ্বর হলেই তা ভাইরাল ফিভার, নাকি ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড তা বুঝতে সময় লেগে যাচ্ছে। ট্রিটমেন্টেও অনেক দেরি হচ্ছে। উত্তরপ্রদেশে যেমন ডেঙ্গির প্রকোপ বেড়েছে। বিহার, নয়ডা, দিল্লিতে ইনফ্লুয়েঞ্জা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। সেই সঙ্গেই টাইফয়েড, সোয়াইন ফ্লুয়ের প্রকোপ বেড়েছে।
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক কোন রাজ্যে কী অসুখ হচ্ছে
উত্তরপ্রদেশ—ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর) সতর্ক করেছে ডেঙ্গু ভাইরাসের ডি২ স্ট্রেন ছড়িয়েছে উত্তরপ্রদেশে। ডক্টর বলরাম ভার্গব বলছেন, ডেঙ্গু ভাইরাসের এই প্রজাতির সংক্রমণ হলে রক্তে প্লেটলেট বা অনুচক্রিকা সাঙ্ঘাতিকভাবে কমে যায়। শিশুরা আক্রান্ত হলে বিপদের ঝুঁকি বেশি। তাছাড়া স্ক্রাব টাইফাসের কারণেও জ্বর হতে দেখা যাচ্ছে শিশুদের।
বিহার–ভাইরাল জ্বর ও ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রকোপ বেশি বিহারে। ৩০ জন সংক্রমিতের খোঁজ মিলেছে। গোপালগঞ্জে দুজনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। নালন্দা মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন ১৩ জন। বিহারের স্বাস্থ্য দফতর জানাচ্ছে, অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছরে রাজ্যে ভাইরাল জ্বরের প্রভাব প্রায় ২০ শতাংশ বেশি।
দিল্লি—এইচ১এন১ ইনফ্লুয়েঞ্জা ও ম্যালেরিয়ার প্রকোপ মারাত্মক দিল্লিতে। বাচ্চাদের মধ্যে সর্দি-কাশি, জ্বর, পেট খারাপ, শ্বাসের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। দিল্লির চিকিৎসকরা বলছেন, ২-৭ বছর বয়সীদের মধ্যে ইনফ্লুয়েঞ্জা, খাদ্যনালী ও শ্বাসনালীর সংক্রমণ বেশি দেখা দিচ্ছে।
নয়ডা—এইচ৩এন২ সোয়াইন ফ্লুয়ের প্রভাব বেশি নয়ডায়। তাছাড়া সর্দি-কাশি, ভাইরাল জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা।
অসুখ চিনুন, সতর্ক থাকুন
ভাইরাল জ্বর ও কোভিডের উপসর্গ অনেকটা একই রকম। জ্বর, সর্দি-কাশি, গলা ব্যথা, গলা শুকিয়ে যাওয়া, মাথা যন্ত্রণা, ঝিমুনি, প্রচণ্ড দুর্বলতা দেখা দেবে। কোভিড হলে নাকের গন্ধ নেওয়ার ক্ষমতা ও জিভের স্বাদ দুটোই চলে যায়। তাছাড়া শুকনো কাশি, গলা শুকিয়ে যাওযা, গলায় অস্বস্তি, গলার স্বর বদলে যাওয়াএগুলো হতে পারে। বাড়াবাড়ি হলে শ্বাসকষ্ট হবে।
ডেঙ্গির প্রাথমিক লক্ষণ হল প্রচণ্ড জ্বর, মাথাব্যাথা, খাদ্যনালীতে সংক্রমণ। ডেঙ্গি জ্বরে গা হাত পা ব্যথা করে, মাথার যন্ত্রণা হয়। আরও একটা লক্ষণ হল, পেটে ব্যথা আর বমি বমি ভাব। সঙ্গে ডায়রিয়া আর ধুম জ্বর হলে দেরি না করে দ্রুত ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে। ডেঙ্গি শক সিনড্রোম হলে ঝুঁকি বেশি। প্লেটলেট দ্রুত কমতে শুরু করবে। শরীরের বিভিন্ন অংশে হেমারেজ অর্থাৎ রক্তক্ষরণ হবে।
ম্যালেরিয়া মানেই প্রচণ্ড কাঁপুনি দিয়ে জ্বর, বমি ভাব চলতেই থাকে। সাধারণত ১০৫-১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চিকিৎসা না হলে রোগী আরও বেশি দুর্বল হয়ে পড়ে, মৃত্যুও হতে পারে।
ডেঙ্গি এবং স্ক্রাব টাইফাসের রোগের লক্ষণ অনেকটা একই। তাই অনেক সময় রোগ নির্ণয়ে সমস্যা হয়। এডিস মশার কামড়ে যেমন ডেঙ্গি হয়, তেমনই এই ব্যাকটিরিয়া দেহে ঢোকে ছোট্ট একটা লাল পোকার কামড়ে। ‘ট্রম্বিকিউলি়ড মাইটস’ নামে ওই পোকা কামড়ালে কিছু বোঝা যায় না, পরে প্রবল জ্বর আসে। ঠিক সময়ে চিকিৎসা না হলে সব অঙ্গ বিকল হয়ে যেতে থাকে।