
‘অক্সিজেন-ওয়ালি বিটিয়া’ ছুটছেন স্কুটি নিয়ে, ঘরে ঘরে প্রাণবায়ু পৌঁছে দিচ্ছেন উত্তরপ্রদেশের কলেজছাত্রী
দ্য ওয়াল ব্যুরো: করোনা সংক্রমণের আধিক্যে নাকাল উত্তরপ্রদেশের শাজাহানপুর। ঘরে ঘরে হাহাকার। শ্বাসকষ্টের মুখে অক্সিজেন না পেয়ে মারা যাচ্ছেন অজস্র করোনা রোগী। এই পরিস্থিতিতে নিজের স্কুটিতে অক্সিজেন সিলিন্ডার চাপিয়ে দুর্গতদের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন কলেজ পড়ুয়া আরশি।
উত্তরপ্রদেশের শাহজাহানপুরের বাসিন্দা আরশির তাই এখন আরও একটি পরিচয়। ‘অক্সিজেন-ওয়ালি বিটিয়া’ নামেই দুর্দিনে মানুষ তাঁকে চিনেছেন। এলাকাবাসীর মুখে মুখে সেই নাম। আরশির প্রশংসায় পঞ্চমুখ সকলেই।
জানা গেছে, সদ্য করোনার গ্রাস থেকে ফিরে এসেছেন আরশির বাবা। বলতে গেলে আরশিই চেষ্টা করে ফিরিয়ে আনে। তার বাবার শরীরে ক্রমশই নেমেছিল অক্সিজেনের মাত্রা। অনেক খোঁজ খবর করেও শুরুতে অক্সিজেন জোগাড় করা যায়নি। প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েও সুরাহা হয়নি। শেষে কিছু ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং পরিজনদের সহায়তায় দুটো অক্সিজেন সিলিন্ডার জোগাড় করে ফেলেন আরশি। আর তাতেই বাবার প্রাণ রক্ষা হয়।
মৃত্যুর মুখ থেকে বাবার প্রাণ ফিরিয়ে আনার পরই জেদ চেপে যায় আরশির। তিনি সংকল্প করে ফেলেন, আরও অনেকের প্রাণ বাঁচাতে হবে। বাবাকে ফিরিয়ে আত্মবিশ্বাসও বেড়েছিল অনেকটাই। আরশি বোঝেন, মানুষকে বাঁচানোর উপায় এখন তার হাতের কাছেই।
নিজের খরচেই দ্রুত রিফিল করে নেন বাবার চিকিৎসায় খালি হয়ে যাওয়া অক্সিজেন সিলিন্ডার দুটো। তারপর স্কুটিতে চাপিয়ে নিজেই পালা করে ভরা অক্সিজেন সিলিন্ডার রেখে আসে করোনা দুর্গতদের বাড়িতে। শুরু হয়েছিল এভাবেই। তারপর ‘অক্সিজেন-ওয়ালি বিটিয়া’র একার চেষ্টায় সুস্থ হয়েছেন অনেক মানুষ। জানা যায়, এপর্যন্ত ১৮ বার নিজের খরচায় সিলিন্ডার রিফিল করেছেন আরশি।
কলেজ পড়ুয়া এত টাকা পেলেন কোথায়? উত্তরে আরশি জানান, স্কুলের ছাত্রছাত্রী পড়িয়ে যা রোজগার হয় তাই দিয়েই এতকাল পকেটমানি জমেছিল কিছু। এখন বিপদের সময় সেই জমানো টাকা থেকেই সিলিন্ডার ভরার খরচ মিটে যাচ্ছে।
এলাকাবাসীরা জানায়, যখনই কোনও করোনা আক্রান্তের অক্সিজেনের দরকার পড়ে আরশি খোঁজ নেন আগের বাড়িতে অক্সিজেনের চাহিদা মিটেছে কিনা। সেই খালি সিলিন্ডার তুলে নিয়ে এসে ভরা সিলিন্ডার আবার পৌঁছে দেন নতুন আক্রান্তের বাড়িতে। এভাবেই চলছে পরিষেবা।
তবে আরশির একমাত্র চিন্তা, কিনি একা সবটা পেরে উঠছে না। যদি আরও কেউ কেউ এগিয়ে আসেন এবং নিজ উদ্যোগে অক্সিজেন সরবরাহ করার দায়িত্ব নেন তবে অনেকগুলো প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হবে। তবে সে যাই হোক, প্রাণবায়ু প্রেরক ‘অক্সিজেন-ওয়ালি বিটিয়া’কে আশীর্বাদে ভরিয়ে আপন করে নিয়েছে উত্তরপ্রদেশ।
উত্তরপ্রদেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রক সূত্রে খবর, এখনও অবধি রাজ্যে ১০,৬৮২ জন মানুষ নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমিত হয়েছেন ৩১১ জন। সব মিলিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা ছাপিয়ে হয়েছে ১৭,৫৪৬। এই পরিস্থিতিতে প্রশাসনের তরফে তেমন কোনও সহযোগিতা পাচ্ছেন না এলাকাবাসীরা, এমনটাই অভিযোগ। আরশির মত তরুণ প্রজন্মের উদ্যোগ কতদিন মানুষকে সুরক্ষা দেবে সেই নিয়েই উঠছে প্রশ্ন।