Latest News

মশাকে হেলাফেলা নয় করোনাকালেও, শপথ মশা দিবসের

দ্য ওয়াল ব্যুরো: করোনার বছরে ভাইরাস নিয়ে তুমুল হইচই হচ্ছে। অথচ কোভিডের মতোই প্রাণঘাতী মশাবাহিত রোগগুলি নিয়ে প্রচার ও সতর্কতা, গত দু’বছরে অনেকটাই আড়ালে চলে গেছে। এডস, ক্যানসার, হার্ট, হেপাটাইটিস, ডায়াবেটিস নিয়ে আমরা যতটা মাতামাতি করি, ম্যালেরিয়া-ডেঙ্গি নিয়ে ততটা হয় না আজকাল। কিন্তু এই রোগগুলি থেকে নিস্তার মেলেনি এখনও। প্রতি বছর বর্ষা এলেই ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়া নিয়ে কথা ওঠে, তারপর সব সেই তিমিরেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) কিন্তু বলছে কোভিডের থেকেও মারাত্মক ম্যালেরিয়া। পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই এর প্রকোপ ভয়ঙ্কর। ভারতে তো বটেই। আজ ২০ অগস্ট বিশ্ব মশা দিবস (ওয়ার্ল্ড মসকিউটো ডে)। এ বছরকে ম্যালেরিয়া-ডেঙ্গি মুক্ত করাই বিশ্ব মশা দিবসের থিম।

World Mosquito Day 2019 | Medicines for Malaria Venture

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-এর রিপোর্ট বলছে প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে পাঁচ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয় ম্যালেরিয়ার মারণ থাবায়। আমাদের দেশ-সহ বিশ্বের প্রায় ২২ কোটি মানুষ প্রতি বছর ম্যালেরিয়ার জ্বরে ভোগেন। অবশ্য কলকাতা-সহ পশ্চিমবঙ্গ এমনকি ভারত জুড়ে মশার কামড়ে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যাও খুব কম নয়।এর উপযোগী কোনও টিকা এখনও সে ভাবে বাজারে আসেনি। কোনও ওষুধও বেশি দিন তার সাফল্য ধরে রাখতে পারেনি, কারণ, কিছু দিন সেই ওষুধ ব্যবহারের পর, পরজীবীরা তার কার্যকরী ক্ষমতাকে প্রতিরোধ করতে শিখে গেছে। ফলে ম্যালেরিয়ার প্রতিষেধকের খোঁজে তোলপাড় করে গবেষণা চালাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

 

জানেন কি মশার ২৯টি সুপার-জিন আছে ভারতেই?

মশার শরীরে এমন কী কী জিন আছে যাদের কারণে বাহুবলীর মতো বলিয়ান হয়ে যাচ্ছে অ্যানোফিলিস মশারা?  ভারতে অ্যানোফিলিস স্টিফেনসি মশাদেরই বেশি খুঁজে পাওয়া যায়। এই What would happen if we killed all the mosquitoes?প্রশ্নের উত্তর পেতে কয়েক বছর ধরে অ্যানোফিলিস প্রজাতির মশাদের জিনের সিকুয়েন্স বা বিন্যাস বের করার চেষ্টা করছিলেন গবেষকরা। দেশ ও বিদেশের নামী দামি ইউনিভার্সিটি, রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরাই রয়েছেন এই গবেষণায়।

টাটা ইনস্টিটিউটের গবেষক সুরেশ সুব্রহ্মাণী বলেছেন, মশার প্রায় হাজার তিনেক জিন আছে। যেগুলির মধ্যে ২৯টি জিন এমন আছে যা মিউট্যান্ট হয়ে গেছে। সহজ করে বললে, এই জিনগুলির গঠন বিন্যাস বদলে গিয়ে আরও সংক্রামক হয়ে উঠেছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন মশার নতুন সুপার-জিন, যে কোনও কীটনাশকের প্রভাব ঠেকাতে পারবে। স্ত্রী মশার শরীর থেকে এই জিন লার্ভার মধ্যেও সঞ্চারিত হচ্ছে। সে কারণেই ম্যালেরিয়ার প্রকোপ কিছুতেই কমানো যাচ্ছে না।

 

স্ত্রী মশাই রক্তখেকো

সব মশা কিন্তু কামড়ায় না। রক্তখেকো স্ত্রী মশাদের থেকেই সংক্রমণ ছড়ায়। ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা এডিস ইজিপ্টাই (Aedes aegypti) মশা নিয়ে কাজ করছেন। এই মশা ডেঙ্গি ভাইরাসের বাহক। জিকা ভাইরাসও ছড়ায় তাদের লালার মাধ্যমেই। এরা আবার ইয়েলো ফিভার ভাইরাসেরও বাহক। প্রতি বছর মশা বাহিত রোগে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। কাজেই এই এডিস মশাদের দমন করতে না পারলে ডেঙ্গু, হলুদ জ্বরের মতো রোগ থেকে কোনওদিনই রেহাই মিলবে না।

Malaria mosquitoes (Anopheles) – Biogents AG

স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশার প্রায় সাড়ে চারশো প্রজাতি আছে। এই অ্যানোফিলিস ম্যালেরিয়ার জন্য দায়ী। দেখতে সাধারণত বাদামি বা কালো রঙের হয়, ডানায় বিন্দু বিন্দু চিহ্ন থাকে। সকাল ও সন্ধেয় সবচেয়ে বেশি সক্রিয় হয় স্ত্রী অ্যানোফিলিসরা। মশা কামড়ালে তার লালার সঙ্গে শরীরে ঢোকে ম্যালেরিয়ার বাহক এককোষী জীব বা প্রোটোজোয়া প্লাসমোডিয়াম ফ্যালসিপেরাম (Plasmodium falciparum)। তার প্রথম নিশানা হয় শরীরের বিভিন্ন কোষ। এদের তিনটে জীবন চক্রের একটা হয় মশার শরীরে। বাকি দু’টো আমাদের শরীরে। মানুষের দেহে একবার ঢুকে পড়লে এরা লিভার ও লোহিত কণিকায় এদের বাকি দু’টো জীবনচক্র সেরে ফেলে। ম্যালেরিয়ার বাহক পরজীবী চার রকম— প্লাসমোডিয়াম ভাইভ্যাক্স, প্লাসমোডিয়াম ফ্যালসিপেরাম, প্লাসমোডিয়াম ওভিলি এবং প্লাসমোডিয়াম ম্যালেরি। তাদের মধ্যে প্লাসমোডিয়াম ফ্যালসিপেরামের আক্রমণেই হয় ভয়ঙ্কর ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়া।

Why mosquitoes don't die of malaria

করোনা কালে ম্যালেরিয়া-ডেঙ্গিকে হেলাফেলা নয়

আফ্রিকার দেশগুলিতে ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়া বেশি হয়। ভাইভ্যাক্স ম্যালেরিয়া বেশি হয় এশিয়ার দেশগুলিতে। জাতীয় পতঙ্গবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির তথ্য বলছে, ২০১৮ সালে আমাদের দেশে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল তিন লক্ষ ৯৯ হাজার ১৩৪। কলকাতা-সহ পশ্চিমবঙ্গ এমনকি ভারত জুড়ে মশার কামড়ে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যাও খুব কম নয়। অন্যান্য মশা বাহিত রোগের পাশাপাশি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ম্যালেরিয়াকে এ বছরে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।

ডেঙ্গির ক্ষেত্রে রোগে সবচেয়ে বড় ভূমিকা জলের। কারণ জল ছাড়া মশা বংশবৃদ্ধি করতে পারে না। ডেঙ্গির ক্ষেত্রে ভেক্টর বা বাহক এডিস মশা। রাজ্যে ডেঙ্গি ছড়ায় এডিস ইজিপ্টাই ও এডিস অ্যালবোপিকটাস নামে দু’টি প্রজাতি । গবেষকরা বলছেন, এডিস মশার ক্ষেত্রে বংশবৃদ্ধির জন্য এক ছিপি জলই যথেষ্ট । তাই ডেঙ্গি ভাইরাসের প্রকোপও বেশি।

 

কী কী সতর্কতা নেবেন

এই বর্ষার সময় মশাবাহিত রোগের প্রকোপ বাড়ছে। বৃষ্টি থেমে থেমে হওয়ার কারণে ডেঙ্গি মশার জন্মানোর সম্ভাবনা বাড়ছে । পরিত্যক্ত যে কোনও জিনিস ছাড়াও নির্মীয়মাণ বাড়ির আবর্জনাতেও জল জমতে না দেওয়ার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

বাড়ির আশপাশের অতিরিক্ত জল জমে থাকতে দেওয়া যাবে না। নিকাশি ব্যবস্থা ঠিক করতে হবে, টবে জমা জল, পরিত্যক্ত জায়গায় জমা জল, আগাছার কারণে জমে থাকা জল সবটাই সরিয়ে ফেলতে হবে।

মশারি টাঙিয়ে শোওয়ার অভ্যাস করতে হবে। বিশেষত বয়স্ক মানুষদের ক্ষেত্রে, যাঁরা রোগের কারণে শয্যাশায়ী, তাঁদের জন্য এটা বেশি দরকার।

হাত-পা সম্পূর্ণ ঢাকা থাকবে এমন পোশাক পরাই ভাল। অনাবৃত অংশে মশার কামড়ের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।

ব্লিচিং পাউডার জীবাণুমুক্ত করলেও লার্ভা মরে না এতে। তাই অ্যান্টি-লার্ভাল স্প্রে ব্যবহার করতে হবে।

সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি প্রতিটি মানুষ সচেতন হয়ে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখলে মশাবাহিত অসুখ বিসুখ হয়ত আগামী দিনে গুটি বসন্ত বা পোলিওর মতো পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।

You might also like