
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সূর্যের করোনা অশান্ত। গনগনে আগুন বেরোচ্ছে। জন্ম হচ্ছে ভয়ঙ্কর সৌরঝড়ের (Solar Storm)। বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন, সূর্যের থেকে ছিটকে আসা সৌরকণা ও সৌরবায়ু প্রবল বেগে ধেয়ে আসছে পৃথিবীর দিকে। পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র এই সৌরঝড়কে ঠেকিয়ে রাখে ঠিকই, কিন্তু যদি ‘সুপার স্টর্ম’ হয় তাহলে তার মারাত্মক প্রভাব পড়বে পৃথিবীর স্যাটেলাইট সিস্টেমে। স্তব্ধ হয়ে যেতে পারে ইন্টারনেট পরিষেবা। এক দেশের সঙ্গে অন্যদেশের নেটওয়ার্কিং সিস্টেমও তছনছ হয়ে যেতে পারে।
ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির গবেষক সঙ্গীতা আব্দু জ্যোতি তাঁর সাম্প্রতিক রিসার্চ পেপারে পৃথিবীতে সৌরঝড়ের প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন। তিনি বলেছেন, সৌরঝড়ের মধ্যেকার শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্র ও আয়নগুলো পৃথিবীর টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা ও জিপিএস নেটওয়ার্ককে তছনছ করে দিতে পারে। যে সৌরকণারা ধেয়ে আসছে পৃথিবীর দিকে তার প্রভাবে জিপিএস নেটওয়ার্ক, ফোন সিগন্যাল, টিভি, স্যাটেলাইটে মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেট পরিষেবা চালানোর জন্য যে পরিকাঠামো আছে তা ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে ‘সোলার স্টর্ম’ বা সৌরঝড়ের প্রভাবে।
সৌরঝড় কী?
আমাদের পৃথিবীর যেমন অ্যাটমস্ফিয়ার আছে, সূর্যের তেমন অ্যাটমস্ফিয়ার আছে। সূর্যের পিঠ (সারফেস) ও তার উপরের স্তর যাকে বলে সোলার করোনা। সারফেসের গড় তাপমাত্রা ৫৬০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি। কোথাও ৫৮০০ ডিগ্রি আবার কোথাও ৫২০০ ডিগ্রি সেলসিয়ারের কাছাকাছি। করোনার তাপমাত্রা সেখানে প্রায় ২ লক্ষ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি। কখনও তারও বেশি। এই তাপমাত্রার তারতম্য হতে থাকে সবসময়।
এই করোনা স্তর যেখানে শেষ হচ্ছে সেখান থেকেই সৌরঝড়ের জন্ম হয়। এই করোনা উচ্চতাপমাত্রার প্লাজমা আবরণে ঢাকা। এখান থেকেই বেরিয়ে আসে তড়িদাহত কণার স্রোত। প্রোটন ও ইলেকট্রনের সমন্বয় এই সৌরবায়ু প্রবল গতিবেগে ছিটকে বেরিয়ে আসে সূর্যের প্লাজমা থেকে। এর গতি সেকেন্ডে প্রায় ৯০০ কিলোমিটার। তাপমাত্রা প্রায় ১০ লক্ষ ডিগ্রি সেলসিয়াস। প্রচণ্ড গতিতে ছড়িয়ে পড়ে মহাকাশে। একেই বলে সৌরঝড়। শুধু মহাকাশই নয়, সেই কণার স্রোত প্রভাবিত করে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলকেও। সূর্যের চৌম্বকক্ষেত্রে বিশাল পরিমাণ শক্তি রয়েছে। মাঝে মাঝে সেখানে বিকট বিস্ফোরণ হয় ঠিক পরমাণু বোমা ফাটার মতো। সেই শক্তি বেরিয়ে আসে যাকে বলে ‘করোনাল মাস ইঞ্জেকশন।’ এর ফলেই প্রচণ্ড গতির সৌরকণা ও সৌরঝড় পৃথিবীর উপর দিয়েও বয়ে যায়। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ঢোকার আপ্রাণ চেষ্টা করে। কিন্তু বাধা দেয় পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র (ম্যাগনেটোস্ফিয়ার)। এটাই আমাদের গ্রহের সুরক্ষা কবচ।
গবেষক জ্যোতি বলছেন, ফাইবার অপটিক কেবিলের মাধ্যমে নেটওয়ার্কিং সিস্টেম জোড়া আছে। এই ফাইবার অপটিকে সৌরঝড়ের প্রভাব পড়লে তা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। বিশেষ করে এক দেশের সঙ্গে অন্য দেশের নেটওয়ার্কিং সিস্টেম জোড়া আছে এভাবেই, সমুদ্রের নীচে দিয়েও সাবমেরিন কেবিল আছে, এসবই নষ্ট হয়ে যেতে পারে সৌরঝড় আছড়ে পড়লে। যদি ইন্টারনেট ও নেটওয়ার্কিং সিস্টেমে সৌরঝড়ের প্রভাব পড়ে তাহলে আমেরিকার সঙ্গে ইউরোপের কানেকশন বিচ্ছিন্ন হবে, আবার এশিয়ার দেশগুলির একে অপরের সঙ্গে নেটওয়ার্কিং সিস্টেম বিপর্যস্ত হবে।