
দ্য ওয়াল ব্যুরো: দু’দিন আগে লখনউতে দাঁড়িয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ চড়া সুরে বলেছিলেন, যে যতই বলুক, নাগরিকত্ব সংশোধন আইন প্রত্যাহার করা হবে না।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সেই রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের পাল্টা জবাবও দিয়েছেন বিরোধীরা। এমনকি সমাজকর্মী, ছাত্র-যুব সমাজ থেকেও বিচ্ছিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া এসেছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় যে কথা বললেন, তাতে অনেকে মনে করছেন, অমিত শাহর উদ্দেশে বুঝি বার্তা দিলেন তিনিও।
দেশের প্রথম নির্বাচন কমিশনার ছিলেন প্রয়াত আমলা সুকুমার সেন। তাঁর প্রথম স্মরণ বক্তৃতায় এদিন মুখ্য বক্তা ছিলেন প্রণববাবু। ওই মঞ্চে দাঁড়িয়েই প্রণববাবু বলেন, “ভারতের গণতন্ত্র বারবার পরীক্ষিত হয়েছে। গত কয়েক মাস ধরে দেখা যাচ্ছে, একটি বিষয় নিয়ে বিপুল সংখ্যক মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছেন। বিশেষ করে যুব সমাজ এ ব্যাপারে তাদের স্পষ্ট মতামত জানাচ্ছে। সংবিধান সম্পর্কে তাঁদের ধারণা ও প্রত্যয় ভাল লাগার মতোই।” এর পরই তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেন প্রণববাবু। তিনি বলেন, “সর্বসম্মতি গড়ে তোলা গণতন্ত্রের জীবন-রক্ত। আলোচনা, বিতর্ক, সহিষ্ণুতার সঙ্গে শোনা, আপত্তি জানানো—এসবে গণতন্ত্র আরও মজবুত হয়। আমি মনে করি মোটামুটিভাবে যে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন এখন গোটা দেশজুড়ে চলছে তা গণতন্ত্রের শিকড়কে আরও মজবুত করবে।”
কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী সরকারের উদ্দেশে কয়েক দিন আগেও স্পষ্ট বার্তা দিয়েছিলেন প্রণববাবু। তিনি বলেছিলেন, নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করা মানেই সংখ্যাগরিষ্ঠের সরকার নয়। অতীতে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জিতে সরকার গড়েছিলেন দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু। কিন্তু তিনিও সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটারের অর্থাৎ পঞ্চাশ শতাংশের বেশি ভোটারের সমর্থন পাননি। কেন্দ্রে যে বর্তমান সরকার চলছে তারাও মাত্র ৩২ শতাংশ ভোটারের সমর্থন পেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জিতেছে। তাঁর কথায়, সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জেতা এক ব্যাপার, আর সংখ্যাগরিষ্ঠের সরকার হয়ে উঠতে পারাটা ভিন্ন। সংখ্যাগরিষ্ঠের সরকার হয়ে উঠতে গেলে সবার মতকে সহিষ্ণুতার সঙ্গে শুনতে হবে।
আরও পড়ুন ভোটের জন্য কাজ বন্ধ থাকবে কেন, নতুন প্রস্তাব প্রণবের
এদিন স্মারক বক্তৃতায় প্রণববাবুর বক্তব্য ছিল অবাক হয়ে শোনার মতোই। ইতিহাসের পাতা থেকে তিনি পরিসংখ্যান তুলে এনে বিস্মিত করে দেন সভাস্থলে উপস্থিত সবাইকে। সেইসঙ্গে বলেন, ভারতের মতো বৈচিত্রে ভরা দেশে প্রথমবার ভোট করানোই ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। একটা দেশের মধ্যে যেন অনেক দেশ। স্কটল্যান্ডকেও ব্রিটেন তাদের সঙ্গে একাত্ম করতে ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু একই নির্বাচনের মাধ্যমে পাঞ্জাবের সঙ্গে মাদ্রাজকে বাঁধতে পেরেছে ভারত। অথচ প্রথম চারটি সাধারণ নির্বাচনের পরেও অনেক বিদেশি পর্যবেক্ষক রাজনৈতিক পণ্ডিত মনে করেছিলেন, ভারতে গণতন্ত্রের অন্তিমকাল আসন্ন। কেউ বলেছিলেন, নেহরুর মৃত্যুর পরই ভারতে স্বৈরাচারী শাসন মাথা তুলবে। কিন্তু সেই সব পূর্বানুমানকে ব্যর্থ প্রমাণ করেছেন ভারতীয়রাই।
দেশের সেই গণতান্ত্রিক কাঠামো ও পরিবেশ রক্ষার জন্য এদিনও বারবার সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে মজবুত করার কথা বলেন প্রণববাবু। নির্বাচন কমিশন, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটরস জেনারেলের মতো প্রতিষ্ঠানের নিরপেক্ষতার সঙ্গে কাজ করা কতটা জরুরি তা ফের ব্যাখ্যা করেন। সেই সঙ্গে বলেন, প্রতিষ্ঠান নিজে থেকে নিরপেক্ষভাবে চলতে পারে না। প্রতিষ্ঠান যাঁরা চালান তাঁদের উপরেই সবটা নির্ভর করে। সুতরাং এই মহান দায়িত্বের কথা তাঁদের সর্বদা মনে রাখতে হবে।