
ভারতে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রজেনেকার চ্যাডক্স টিকার উৎপাদন এবং বিতরণের দায়িত্বে রয়েছে সেরাম ইনস্টিটিউটের। দিল্লির সঙ্গে সরাসরি চুক্তি অথবা উৎপাদনকারী সংস্থাগুলিকে বরাত দেওয়ার মাধ্যমে এই প্রতিষেধক কিনছে একাধিক দেশ। গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন (গাভি)-কোভ্যাক্স জোটের আওতায় উৎপাদনকারী দেশ থেকে সরাসরি সদস্য দেশগুলিতে করোনার প্রতিষেধক সরবরাহ করা হচ্ছে। এই জোটের আওতায় বিশ্বে সবচেয়ে বেশি করোনার প্রতিষেধক পাঠাচ্ছে ভারতের সেরাম। কোভিড আবহে প্রায় ৯২টি দেশ নিয়ে তৈরি হয়েছে গাভি-কোভ্যাক্স, যার মধ্যে ৭০টিরও বেশি দেশে কোভিশিল্ড টিকা রফতানি করছে সেরাম। কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞার পরে সেসব বন্ধ হয়ে যাবে।
সেরাম যদিও জানিয়েছিল, টিকার মোট উৎপাদনের ৫০ শতাংশই থাকবে ভারতের জন্য। বাকি ডোজ কোভ্যাক্স-গাভি কর্মসূচীর আওতায় বিভিন্ন দেশে সরবরাহ করা হবে। এখনও অবধি ৬ কোটির বেশি টিকার ডোজ রফতানি করেছে সেরাম। কোভ্যাক্সের আওতায় আরও দেড় কোটি টিকার ডোজ রফতানি করার কথা ছিল এর মধ্যেই। তবে দেশে এখন করোনা প্রতিষেধকের চাহিদা বাড়তে পারে বলেই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কেন্দ্র।
৫ লাখের বেশি টিকাকরণ হয়েছে দেশে। আগামী ১ এপ্রিল থেকে ৪৫ বছরের বেশি বয়সী সকলকেই করোনার প্রতিষেধক দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক। এতদিন শুধুমাত্র ৬০ বছরের বেশি বয়স্ক ও ৪৫ থেকে ৫৯ বছর বয়সী কোমর্বিডিটির রোগীদেরই টিকার ডোজ দেওয়া হয়েছিল। কেন্দ্রের নয়া নির্দেশিকার পরে ৪৫ বছরের ঊর্ধ্বে সকলকেই টিকার ডোজ দেওয়া হবে, কোমর্বিডিটির নথি লাগবে না। এই পর্বে ২৮ কোটিকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে কেন্দ্রের। চাহিদা মাফিক টিকার ২টি করে ডোজ দিতে হলে বিপুল পরিমাণ উৎপাদন দরকার। তাই এই সময় টিকার রফতানিও সমান তালে চলতে থাকলে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানো যাবে না বলেই মনে করা হচ্ছে।
অ্যাস্ট্রজেনেকার টিকায় রক্ত জমাট বাঁধার অভিযোগ ওঠার পরে এমনিতেও ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের টিকার উৎপাদন ও রফতানিও বিপুল পরিমাণে ধাক্কা খেয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) উদ্যোগে কোভ্যাক্স কর্মসূচীতে বিশ্বজুড়ে করোনার প্রতিষেধক পাঠাচ্ছে ভারত। বিশেষ করে আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া দেশগুলিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকার টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে হইচই শুরু হওয়ার পরে কোভ্যাক্স কর্মসূচীতে টিকা রফতানি ধাক্কা খায়। ইউনিসেফের রিপোর্ট বলছে, বিশ্বের অন্তত ৬৪টি পিছিয়ে পড়া দেশে সেরামের কোভিশিল্ড টিকার রফতানি বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে করোনা নিয়ন্ত্রণে হু-র একাধিক পদক্ষেপও থমকে গেছে।