
দ্য ওয়াল ব্যুরো:এস-৪০০ মিসাইল সিস্টেম (S-400) নিয়ে জট কেটেছে। দূরপাল্লার ও অত্যাধুনিক ক্ষেপণান্ত্র দেবে আমেরিকা, যদি রাশিয়ার সঙ্গে এস-৪০০ মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেমের চুক্তি ভেঙে বেরিয়ে আসে ভারত। এমন শর্ত বছর দুয়েক আগেই চাপিয়েছিল আমেরিকা। রাশিয়ার সঙ্গে ক্ষেপণাস্ত্র চুক্তি নিয়ে বরাবরই আপত্তি চুলেছে মার্কিন মুলুক। সই সাবুদ করিয়ে নীতি ভঙ্গের ভয়ও দেখিয়েছে। তবে ভারত বরাবরই অনড় থেকেছে। এতদিনে সেই বহু প্রতীক্ষিত মিসাইল সিস্টেম আসতে চলেছে ভারতের হাতে। বছর শেষের মধ্যেই প্রথম দফায় এস-৪০০ মিসাইল সিস্টেম ভারতে পাঠাবে রাশিয়া। সূত্রের খবর, প্রাথমিকভাবে তা মোতায়েন করা হবে দেশের পশ্চিম সীমান্তে। এর পরে পূর্ব লাদাখের সীমান্তে এই শক্তিশালী মিসাইল সিস্টেম মোতায়েনের কাজ শুরু হবে।
২০১৫ সালে প্রথম ভূমি থেকে আকাশে উৎক্ষেপণের এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি কেনায় আগ্রহ প্রকাশ করে ভারত। দুই দেশের মধ্যে ৫৪৩ কোটি মার্কিন ডলারের চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই রাশিয়ার থেকে এই ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী এয়ার-ডিফেন্স সিস্টেম কেনার ব্যাপারে আপত্তি জানিয়ে এসেছে। ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠকের সময় ৫০০ কোটি ডলার দিয়ে এস-৪০০ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনা নিয়ে কথাবার্তা হয় দুই দেশের মধ্যে। দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানিেছে, এ বছরের শেষ থেকেই এস-৪০০ হস্তান্তর শুরু হবে, ২০২৫ সালের মধ্যে তা শেষ হবে। দেশের ওয়েস্টার্ন ফ্রন্টে বসবে মিসাইল সিস্টেম।
ভারতীয় সেনা সূত্র জানাচ্ছে, ভারতীয় বায়ুসেনার শক্তিশালী এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম দেখে চিনের বায়ুসেনা (পিপলস লিবারেশন আর্মি এয়ার ফোর্স) রুশ প্রযুক্তিতে তৈরি অত্যাধুনিক এস-৩০০ ও এস-৪০০ এয়ার ওয়েপন সিস্টেম মোতায়েন করেছে। তাছাড়াও চিনের কাছে আছে এলওয়াই ৮০ ও আরও কিছু এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম। তবে ভারতীয় বাহিনীকে টক্কর দেওয়া অত সহজ নয়। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চিনের সঙ্গে সীমান্ত সংঘাতের যা পরিস্থিতি তাতে এস-৪০০ মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেমের মতো অস্ত্র হাতে দরকার। কারণ, রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তির ভিত্তিতে চিনের কাছেও এস-৪০০ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আছে। বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক ও শক্তিশালী এয়ার ডিফেন্স মিসাইল সিস্টেম হল এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ। এর এক একটি ইউনিটে থাকে ভূমি থেকে আকাশে অর্থাৎ সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল, ব্যাটল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, দূর-পাল্লার সার্ভিল্যান্স রাডার, অ্যাকুইজিশন অ্যান্ড এনগেজমেন্ট রাডার, কম্যান্ড ভেহিকল এবং ট্রান্সপোর্টার-ইরেক্টর-লঞ্চার ভেহিকল বা টেল ভেহিকল। এই মিসাইল সিস্টেমের রাডার ৬০০ কিলোমিটার পর্যন্ত টার্গেট দেখতে পায়। অন্য কোনও ক্ষেপণাস্ত্র এর প্রতিরোধে টার্গেট করা হয়েছে কিনা সেটা ধরা পড়ে এই রাডার সিস্টেমে। এস-৪০০ মিসাইল সিস্টেমের সবচেয়ে শক্তিশালী ও বিধ্বংসী ভূমিকা হল এই ক্ষেপণাস্ত্রের প্রযুক্তি। চার ধরনের ক্ষেপণাস্ত্রে সজ্জিত থাকে এস-৪০০ ট্রায়াম্ফে। ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, মাঝারি পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং আকাশপথে আসা নানা ধরনের আক্রমণকে রুখে দিতে সক্ষম এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। পরমাণু যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হলে আকাশসীমাকে সুরক্ষিত রাখতে এমন শক্তিশালী এয়ার ডিফেন্স মিসাইল সিস্টেমই সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হতে পারে।