
ত্রিপুরায় দ্বিতীয় সিপিএমই, বলছে বিজেপি-ও, অভিষেকের দাবি ওড়ালেন জিতেন্দ্র
এখানে বলে রাখা ভাল, দেড় বছর পর ত্রিপুরায় বিধানসভা ভোট। ফলে কে প্রধান বিরোধী তা দাবি এবং পাল্টা দাবির মধ্যে যে পরিসংখ্যান এবং রাজনীতি থাকবে তা বলাইবাহুল্য।
এদিন বিকেলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জোড়া টুইট করেছেন। একটিতে তিনি এত সন্ত্রাসের মধ্যেও যে ভাবে ত্রিপুরা তৃণমূলের কর্মীরা দাঁতে দাঁত চেপে লড়েছেন তাঁদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। সেইসঙ্গে বলেছেন, এবার আসল খেলা হবে। অন্য একটি টুইটে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের দাবি, তৃণমূলই এখন ত্রিপুরা রাজ্যে প্রধান বিরোধী দল। এই ভোটে ২০ শতাংশ ভোট পেয়েছে তারা।
This is despite the fact that we commenced our activities barely 3 months ago and @BJP4Tripura left no stone unturned to BUTCHER DEMOCRACY in Tripura.
Congratulations to all the brave soldiers of @AITC4Tripura for their exemplary courage.
সবে তো শুরু এবার আসল খেলা হবে। (2/2)
— Abhishek Banerjee (@abhishekaitc) November 28, 2021
কিন্তু কী বলছে সিপিএম? আর বিজেপি-ই বা তাদের বিরোধী হিসেবে কাদের স্বীকৃতি দিচ্ছে?
সিপিএমের ত্রিপুরা রাজ্য সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরী দ্য ওয়াল-কে বলেন, “অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যে দাবি করেছেন তার কোনও বাস্তব ভিত্তি নেই।”
কেন?
প্রাক্তন সিপিএম সাংসদের বক্তব্য, “ত্রিপুরার ২০টি পুরসভা ও নগরপঞ্চায়েতের মধ্যে ১৩টিতে ভোট হয়েছিল (সাতটি আগেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছিল বিজেপি)। তার মধ্যে আগরতলার সব আসন, আমবাসা ও তেলিয়ামুড়ার অধিকাংশ আসনে প্রার্থী দিয়েছিল তৃণমূল। বাকি আর কোথাও তারা প্রার্থী দিতে পারেনি। তাহলে হিসেবটা দাঁড়াল এই রকম, মোট ২০টির মধ্যে ১৩টিতে লড়াই করেছে সিপিএম। তিনটিতে লড়াই করেছে তৃণমূল।” এই পরিসংখ্যান দিয়েই সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বোঝাতে চান, তিনটি পুরসভায় প্রার্থী দিয়ে কী ভাবে তৃণমূল ‘প্রিন্সিপাল অপোজিশন’ হবে?
তবে এও ঠিক, রাজধানী আগরতলার প্রায় সমান সমান ওয়ার্ডে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে সিপিএম এবং তৃণমূল। আমবাসা ও তেলিয়ামুড়াতেও বেশ কিছু ওয়ার্ডে বাংলার শাসকদল দ্বিতীয়। এ বাদ দিয়ে কুমারঘাট, অমরপুর, সোনামুড়া, ধর্মনগর, পানিসাগরের মতো পুরসভা বা নগরপঞ্চায়েতগুলিতে বিরোধী শক্তি সিপিএম-ও।
আমবাসা পুরসভায় একটি আসনে তৃণমূল প্রার্থীর জয় ঘোষণা করেছে কমিশন। আমবাসায় একটি, পানিসাগরে দুটি এবং কৈলাশহরে একটি—মোট চারটি ওয়ার্ডে জিতেছে সিপিএম।
বিজেপি কী বলছে?
ত্রিপুরা বিজেপির মুখপাত্র নব্যেন্দু ভট্টাচার্য বলেছেন, “ত্রিপুরার পুরভোটের ফল দেখিয়ে দিল এ রাজ্যের বিরোধীরা এবং রাজ্যের বাইরে থেকে আসা বিরোধীরা যে কুৎসা করেছিল, তাকে মানুষ ছুড়ে ফেলে দিয়েছে।” তবে তিনি স্পষ্ট বলেছেন, তৃণমূল যে ভাবে নিজেদের বিরোধী দল বলে জাহির করার চেষ্টা করছে তা একেবারেই ভিত্তিহীন। পরিসংখ্যান অনুযায়ী সিপিএমই এখানকার বিরোধী দল। তবে তারাও টিমটিম করে জ্বলছে। মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের ওএসডি সঞ্জয় মিশ্র বলেন ভোট শতাংশ, আসন—দুই দিক থেকে তৃণমূলের চেয়ে সিপিএম এগিয়ে রয়েছে এ ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই।
ত্রিপুরায় যে ২০টি পুরসভা বা নগরপঞ্চায়েতে ভোট ছিল তাঁর মোট ওয়ার্ড সংখ্যা ৩৩৪টি। এর মধ্যে ১২২টি ওয়ার্ডে বিজেপি আগেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গিয়েছিল। ভোট হয়েছিল ২১২টি ওয়ার্ডে।
যদিও ত্রিপুরা সিপিএমের এক নেতার কথায়, সোনামুড়া, পানিসাগরের মতো বেশ কিছু পুর এলাকায় অনেক ওয়ার্ডে তৃণমূল বিরোধী ভোট ভাগ করায় বিজেপি অল্প ব্যবধানে জিতে গিয়েছে।
ত্রিপুরার ভোট যে শান্তিপূর্ণ হয়নি তা সাদা চোখেই দেখা গিয়েছে। অনেকের মতে, বাংলার পঞ্চায়েত ভোটের সিকোয়েন্স দেখা গিয়েছে উত্তর-পূর্বের রাজ্যটিতে। তাঁদের বক্তব্য, ফলাফলেও সেই ছবির কোনও বদল হয়নি। পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, হিসেব স্পষ্ট—তৃণমূল যে আস্ফালন দেখিয়েছিল তা প্রতিফলিত হয়নি। ত্রিপুরায় এখনও বামেরাই মূল বিরোধী শক্তি।