
দ্য ওয়াল ব্যুরো: আজ থেকে হায়দরাবাদে বসতে চলেছে বিজেপির (BJP) দু’দিনের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক। আজ দুপুরে বৈঠকের উদ্বোধন করবেন বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বিজেপি সভাপতি নাড্ডা ছাড়াও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, বিজেপি শাসিত ১৭ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সহ প্রথম সারির নেতারা আজ থেকে সোমবার পর্যন্ত হায়দরাবাদে থাকবেন।
বিজেপি (BJP) সূত্রের খবর, তেলেঙ্গানায় আগামী বছর বিধানসভা ভোটে ক্ষমতা দখলের বার্তা দিতে হায়দরাবাদকে কর্মসমতির বৈঠকের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে।
একই সঙ্গে পরিবারবাদের বিরুদ্ধে সরব হবে দল। কংগ্রেসের পাশাপশি এই ইস্যুতে বিজেপি আঞ্চলিক গুলিকেও নিশানা করেছে। তেলেঙ্গানায় শাসক দল তেলেঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতির প্রধান মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্র শেখর রাওয়ের পর দল ও সরকারে শেষ কথা তাঁর পুত্র কেটি রাও। বস্তুত ঝড়খণ্ড থেকে তামিলনাড়ু পর্যন্ত পরিবার তন্ত্রের রমরমা। ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ুতে যথাক্রমে বিজু জনতা দল, ওয়াইএসআর কংগ্রেস এবং ডিএমকের রাজ চলছে। তিন দলেই পার্টি ও সরকারের নেতৃত্ব একই পরিবারের হাতে। ঝাড়খণ্ডেও তাই।

পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে বিজেপির (BJP) জিহাদ নতুন নয়। তবে এই ব্যাপারে তারা একটা সময় পর্যন্ত শুধু গান্ধী পরিবারকেই নিশানা করত। বিগত কয়েক বছর যাবৎ মোদী-শাহ জুটি আঞ্চলিক দলগুলিকেও আক্রমণ শুরু করেছেন। এবছর উত্তরপ্রদেশ ও পাঞ্জাবের বিধানসভা ভোট বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব এই ব্যাপারে গলা চড়ায়। উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী পার্টি এবং পাঞ্জাবে অকালি দলকে তারা নিশানা করে। সেখানে প্রচার মঞ্চ থেকেই নিশানা করে বিহারে আরজেডি, বাংলায় তৃণমূল কংগ্রেস ও ঝাড়খণ্ডে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চাকে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, পরিবারবাদ গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় বিপদ। বিজেপির বক্তব্য, তারা একমাত্র দল যেখানে পরিবারবাদের কোনও স্থান নেই।
যদিও সরকার বা দলে শেষ কথা না হলেও বিজেপিতে নেতার পরিবারের লোককে নির্বাচনে টিকিট দেওয়ার প্রবণতা কম নয়। তবে মোদী নিজে তাতে রাশ টানার চেষ্টা করছেন। যেমন, গোয়ায় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মনোহর পরিক্করের ছেলেকে বিধানসভা ভোটে টিকিট দেয়নি দল। উত্তরপ্রদেশে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের ছেলেকে মন্ত্রিসভায় না নেওয়ার ব্যাপারেও মোদী হস্তক্ষেপ করেছিলেন বলে খবর।
কর্মসমিতির বৈঠকে বিজেপি নীতিগত বিষয় ছাড়াও আশু রাজনৈতিক কর্তব্য, কৌশল ঠিক করে থাকে। এবারের বৈঠকে অভিন্ন দেওয়ানি বিধির প্রসঙ্গ উঠতে পারে বলে দলের একটি মহলের ধারণা। তবে এই ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম। বছর শেষে গুজরাত ও হিমাচলপ্রদেশে বিধানসভা ভোট। সেই ভোট নিয়ে আলোচনা হবে। ওই দুই রাজ্যই বিজেপির দখলে। তবে হায়দরাবাদে জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে প্রাধান্য পাবে তেলেঙ্গানাই। বিজেপির দক্ষিণের রাজ্যগুলির মধ্যে কর্নাটক ছাড়া আর কোনও রাজ্যে বিজেপি এখনও ক্ষমতা দখল করতে পারেনি। দল মনে করছে, তেলেঙ্গানায় সেই সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
শাসক দল তেলেঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতির শাসনের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে দক্ষিণে দ্বিতীয় রাজ্য বিজয়ের লক্ষ্যে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী-সহ বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব উঠেপড়ে লেগেছেন। মে মাসে মোদী, অমিত শাহ এবং নাড্ডা ওই রাজ্য সফর করেছেন। সেখানে বিজেপির বিরোধী পক্ষ শাসক দল টিআরএস এবং প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস। কিন্তু মে মাসের সফরে তেলেঙ্গানার মাটিতে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী কংগ্রেসকে তুলোধুনো করে দাবি করেছেন, বিধানসভা ভোটের আগেই বিজেপি নিজেদের প্রধান বিরোধী দল হিসাবে তুলে ধরতে পেরেছে। আগামী বছর এ রাজ্যে সরকার বদল অবশ্যম্ভাবী। সরকার গড়বে বিজেপি। একই দাবি করেছেন অমিত শাহ ও নাড্ডা।
বিগত কয়েক মাস যাবৎ তেলেঙ্গানার কে চন্দ্রশেখর রাও সরকারের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরোধ অবিজেপি শাসিত বাকি রাজ্যগুলিকে ছাপিয়ে গিয়েছে। বিজেপির সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করতে মুখ্যমন্ত্রী রাও রাজ্য সফরে যাওয়া প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এক মঞ্চে ওঠা দূরে থাক, বিমানবন্দরে স্বাগত বা বিদায় জানাতে যাওয়ার সৌজন্যও বর্জন করেছেন।
বিজেপির (BJP) জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক ঘিরে হায়দরাবাদের গত কয়েকদিনের ছবিতে কেসিআর ও মোদী-কে সামনে রেখে দুই শিবিরের সাপে-নেউলে সম্পর্ক স্পষ্ট। শহরের আনাচেকানাচে পাশাপাশি মোদী ও কেসিআরের ছবিতে অস্তিত্ব জানান দেওয়ার চেষ্টা প্রকোট। বিজেপির অভিযোগ, তারা হায়দরাবাদ ও আশপাশে প্রধানমন্ত্রী ছবি-সহ হোর্ডিং দিতে গিয়ে জানতে পারেন তেলেঙ্গানা সরকার সেগুলি আগে থেকে বুক করে রেখেছে। বাধ্য হয়ে পরিকল্পনা বদল করে শহরের অলিগলিতে ছবি সাঁটা হয়েছে। সব জায়গাতেই টিআরএস সমর্থকেরা কেসিআর-এর ছবি সেঁটে দিয়েছে।