
দেশে একদিনে করোনা সংক্রমণে মৃত্যু ৫০ ডাক্তারের, জানাল আইএমএ
ডাক্তাররা কোভিড মোকাবিলায় কী পরিস্থিতিতে কাজ করছেন, তা বোঝা যাবে দিল্লির গুরু তেগ বাহাদুর হাসপাতালের জুনিয়র আবাসিক ডাক্তার আনাস মুজাহিদের ঘটনায়। একেবারে কোভিড চিকিত্সায় বরাদ্দ হাসপাতালে কাজ করতেন ২৬ বছরের মুজাহিদ। কোভিড সংক্রমণের মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যে মারা যান তিনি। মুজাহিদই সর্বকনিষ্ঠ কোভিডের শিকার হওয়া ডাক্তার। গত বছর কোভিডের প্রথম ঢেউয়ে মারা যান ৭৩৬ জন ডাক্তার।
মুজাহিদের বাড়িতে আছেন বাবা-মা, চার ভাইবোন। তাঁর আকস্মিক মৃত্যু এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না বন্ধু, সহকর্মী ডঃ আমির সোহেলের, এক সপ্তাহ কেটে যাওয়ার পরও। তিনি জানিয়েছেন, মুজাহিদের গলা ব্যথার মতো মৃদু উপসর্গ ছিল। হাসপাতালে করা অ্যান্টিজেন টেস্টে কোভিড পজিটিভ হন তিনি। কিন্তু আচমকা অবস্থার অবনতি শুরু হয়। শরীরে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণে মারা যান। তিনি ভ্যাকসিন নিতে পারেননি। ডঃ সোহেল বলেছেন, এটা হৃদয়বিদারক। ওর কোনও কোমর্বিডিটি ছিল না। ওর বাবা-মাও আমাদের জানিয়েছেন, কোনওদিন শারীরিক সমস্যা হয়নি ওর। কী করে মৃত্যু হল, বুঝতেই পারলাম না। ওর ভ্যাকসিন নেওয়া হয়নি। আমার মতো আরও অনেকে নিতে পারেনি। কোভিড ডিউটি করার মধ্যেই আমাদের ভ্যাকসিন নেওয়ার প্রক্রিয়াটা দীর্ঘ। ওপরওয়ালাদের জানাতে হয়, তাঁদের সই-সাবুদ লাগে। ও আগামী কয়েক সপ্তাহেই ভ্যাকসিন নেওয়ার প্ল্যান করছিল।
এপর্যন্ত দেশের মাত্র ৩ শতাংশ ডাক্তার পুরোপুরি ভ্যাকসিন পেয়েছেন। ৫ মাস হয়ে গেল ভ্যাকসিন প্রদান কর্মসূচি চলছে। মাত্র ৬৬ শতাংশ স্বাস্থ্য পরিষেবা কর্মী দুটি ডোজ নিতে পেরেছেন।
আইএমএ-র সাধারণ সম্পাদক ডঃ জয়েশ লেলে বলেছেন, গতকাল ৫০ জন ও এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়া থেকে ২৪৪ জন ডাক্তারের মৃত্যু খুবই দুর্ভাগ্যজনক। অনেক ডাক্তারই এখনও ভ্যাকসিন নেননি। দ্বিতীয়তঃ ডাক্তারের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম, ফলে অতিরিক্ত কাজের চাপ সইতে হয়। অনেক সময় টানা ৪৮ ঘন্টা কাজ করতে হয়। বিশ্রামের ফুরসত মেলে না। এতে ভাইরাল লোড তৈরি হয়, আচমকা সংক্রমণে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তাঁরা। সরকারকে স্বাস্থ্যকর্মী সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে।
আইএমএ হাজার খানেক ডাক্তার মারা গিয়েছেন বলে জানালেও বাস্তবে সংখ্যাটা অনেক বেশি। কেননা আইএমএ শুধু তাদের সাড়ে তিন লাখ সদস্যের হিসাব রাখে। ভারতে ডাক্তারের সংখ্যা ১২ লাখের ওপর।